ঔপনিবেশিক শাসনকালে ভারতে দেশীয় ইতিহাসচর্চার অগ্রগতির পরিচয় দাও

ঔপনিবেশিক শাসনকালে ভারতে দেশীয় ইতিহাসচর্চার অগ্রগতির পরিচয় দাও – আজকের পর্বে আলোচনা করা হল ঔপনিবেশিক শাসনকালে ভারতে দেশীয় ইতিহাসচর্চার অগ্রগতির পরিচয় নিয়ে।

    ঔপনিবেশিক শাসনকালে ভারতে দেশীয় ইতিহাসচর্চার অগ্রগতির পরিচয় দাও

    ঔপনিবেশিক শাসনকালে ভারতে দেশীয় ইতিহাসচর্চার অগ্রগতির পরিচয় দাও
    ঔপনিবেশিক শাসনকালে ভারতে দেশীয় ইতিহাসচর্চার অগ্রগতির পরিচয় দাও।
    সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের প্রেক্ষাপটে উপনিবেশগুলিতে জাতীয় ইতিহাস পুনর্নির্মাণের জন্য দেশীয় ইতিহাসচর্চার ধারা পরিলক্ষিত হয়।

    ঔপনিবেশিক শাসনকালে ভারতে দেশীয় ইতিহাসচর্চা

    ঔপনিবেশিক শাসনকালে ব্রিটিশ ঐতিহাসিকদের অনুসরণ করে ভারতীয় ঐতিহাসিকগণ ভারতের বিভিন্ন বিষয়ে ইতিহাস গ্রন্থ রচনায় প্রবৃত্ত হয়েছিলেন। যেমন-

    (ক) হিন্দু চেতনাসম্পন্ন ইতিহাস

    জেমস মিল, মেকলে, কিপলিং প্রমুখ ব্রিটিশ ঐতিহাসিক ও কবি তাঁদের ইতিহাসচর্চায় হিন্দু সভ্যতা ও সংস্কৃতিকে আক্রমণ করেন। ফলস্বরূপ, ঔপনিবেশিক ইতিহাসচর্চার বিপরীতে দামোদর সাভারকর, স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী, রাধাকান্ত দেব প্রমুখ পণ্ডিতরা উগ্র হিন্দুত্ববাদী ইতিহাস গ্রন্থ রচনা করেন।

    (খ) মুসলিম চেতনাসম্পন্ন ইতিহাস

    হিন্দু চেতনার বিপরীতে পশ্চিম এশিয়ার ইসলামের গৌরবময় ইতিহাস এবং ভারতে হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মৌলিক পার্থক্য তুলে ধরার জন্য ভারতীয় ঐতিহাসিকগণ, যেমন- মৌলানা শওকৎ আলি, স্যার সৈয়দ আহমেদ খান প্রমুখ ব্যক্তিত্বরা ইতিহাস রচনা করতে উদ্যোগী হন। পরবর্তীকালে ইরফান হাবিব, আয়েশা জালাল প্রমুখের ইতিহাস গ্রন্থেও ভারতে মুসলিম চেতনার প্রকাশ লক্ষণীয়।

    (গ) জাতীয় ইতিহাসমূলক গ্রন্থ

    ব্রিটিশ ঐতিহাসিকদের ঔপনিবেশিক ইতিহাসচর্চার জবাব দিতে ভারতীয় ঐতিহাসিকরা জাতীয় ইতিহাস গ্রন্থ রচনা করে তাতে ভারতের অতীত গৌরব, সংস্কৃতি এবং সভ্যতার উৎকর্ষকে তুলে ধরেন। রমেশচন্দ্র দত্তের ‘A History of Civilisation in Ancient India’, শশীভূষণ চৌধুরীর ‘Civil Disturbances During the British Rule in India’, রাধাকুমুদ মুখার্জীর ‘The Fundamental Unity of India’ ইত্যাদি গ্রন্থ এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য।

    (ঘ) আঞ্চলিক ইতিহাসমূলক গ্রন্থ

    ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থানের ঘটনা ও কাহিনি নিয়ে বিভিন্ন ঐতিহাসিক আঞ্চলিক ইতিহাস রচনা করেছেন। যেমন- রামরাম বসুর ‘প্রতাপাদিত্য চরিত্র’, রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘বাঙ্গালার ইতিহাস’ ইত্যাদি।

    (ঙ) সামাজিক ইতিহাসমূলক গ্রন্থ

    ঐতিহ্যবাদী ভারতীয় সমাজভাবনায় উৎসাহিত হয়ে মহাদেব গোবিন্দ রাণাডে ‘Religious and Social Reform’, শিবনাথ শাস্ত্রী ‘রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ’ ইত্যাদি সামাজিক ইতিহাসমূলক গ্রন্থ রচনা করেন।

    (চ) সাংস্কৃতিক ইতিহাসমূলক গ্রন্থ

    ভারতের সুপ্রাচীন সনাতন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে ব্রিটিশ ঐতিহাসিকরা যেভাবে কালিমালিপ্ত করেছেন, তার প্রত্যুত্তরে ভারতীয় ঐতিহাসিকগণ বহু সাংস্কৃতিক ইতিহাস গ্রন্থ রচনা করে এর জবাব দিয়েছেন। সুকুমার সেনের ‘মধ্যযুগের বাংলা ও বাঙালি’, সতীশচন্দ্র মিত্রের ‘যশোহর-খুলনার ইতিহাস’, নিখিলনাথ রায়ের ‘মুর্শিদাবাদের ইতিহাস’ ইত্যাদি ইতিহাস গ্রন্থ- দেশীয় সাংস্কৃতিক ইতিহাসচর্চার অন্যতম উদাহরণ।
    আপনি আমাদের একজন মূল্যবান পাঠক। ঔপনিবেশিক শাসনকালে ভারতে দেশীয় ইতিহাসচর্চার অগ্রগতির পরিচয় দাও -এই বিষয়ে আমাদের লেখনী সম্পূর্ণ পড়ার জন্যে আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনার মতামত জানাতে ভুলবেন না।

    Leave a Comment