ওটা পাশবিক স্বার্থপরতা-কোন্ বিষয়কে ‘পাশবিক স্বার্থপরতা’ বলা হয়েছে? ‘পাশবিক স্বার্থপরতা’ বলার কারণ কী

“ওটা পাশবিক স্বার্থপরতা।"-কোন্ বিষয়কে 'পাশবিক স্বার্থপরতা' বলা হয়েছে? 'পাশবিক স্বার্থপরতা' বলার কারণ কী
“ওটা পাশবিক স্বার্থপরতা।”-কোন্ বিষয়কে ‘পাশবিক স্বার্থপরতা’ বলা হয়েছে? ‘পাশবিক স্বার্থপরতা’ বলার কারণ কী?
কল্লোল গোষ্ঠীর অন্যতম লেখক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে!’ গল্প থেকে প্রদত্ত মন্তব্যটি উদ্ধৃত হয়েছে। তেতাল্লিশের মন্বন্তরের ক্লিষ্ট নিরন্ন মানুষদের মুখে অন্ন তুলে দেওয়ার জন্য অস্থির হয়ে ওঠে গল্পের প্রধান চরিত্র মৃত্যুঞ্জয়। অফিসের পুরো মাইনে রিলিফ ফান্ডে পাঠিয়ে, একবেলা না খেয়ে সে তাদের প্রাণপণে সাহায্যের চেষ্টা করে। অফিসে সহকর্মী নিখিল মৃত্যুঞ্জয়ের এই প্রচেষ্টাকে সমর্থন করতে পারে না। তার মতে, ভূরিভোজ করাটা অন্যায়, কিন্তু জীবনধারণ করতে গেলে যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু গ্রহণ করার মধ্যে কোনো অন্যায় নেই। প্রয়োজনে সেই অংশটুকু ছিনিয়ে নিতে হবে। তার মতে, নিজে না খেয়ে মরাটা দশজনকে খুন করার থেকেও বড়ো পাপ। নিখিলের এই মানসিকতাকেই মৃত্যুঞ্জয় বলেছে ‘পাশবিক স্বার্থপরতা’।

নিখিলের এই চিন্তাধারাকে মৃত্যুঞ্জয়ের পশুর ন্যায় স্বার্থপরতা বলে মনে হয়। পশুর মানসিকতায় নিজের খাবারের চিন্তাই বড়ো হয়ে দাঁড়ায়, এমনকি সে নিজের সন্তানের খাবারের কথাও ভাবে না। নিজের পেট ভরানোর জন্য সে অপরকে বঞ্চিত করে বা হত্যা করে। একইরকমভাবে নিখিলের মানসিকতা হল নিজের যতটুকু প্রয়োজন তা গ্রহণ করার জন্য দরকার হলে অপরের থেকে ছিনিয়ে নিতে হবে। এক্ষেত্রে দয়া-মায়া বা মমত্ব দেখানো চলবে না। নিজের বক্তব্যের সমর্থনে নিখিল সমাজধর্মের দোহাই দিয়েছে। কিন্তু সমাজধর্মের আর-একটি দিক হল ‘পরার্থে স্বার্থত্যাগ’। নিখিল সে-কথা মনে রাখেনি। তাই মৃত্যুঞ্জয় নিখিলের মানসিকতাকে ‘পাশবিক স্বার্থপরতা’ বলেছে।

Leave a Comment