এশিয়াবাসীদের জন্য এশিয়া-বলতে কী বোঝো? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপান কেন এই নীতি গ্রহণ করেছিল |
এশিয়াবাসীদের জন্য এশিয়া’-বলতে কী বোঝো? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপান কেন এই নীতি গ্রহণ করেছিল? |
এশিয়াবাসীদের জন্য এশিয়া
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে এবং বিশ্বযুদ্ধ চলার সময়ে এশিয়াবাসীদের জন্য এশিয়া – এই স্লোগান তুলে জাপান এশীয় রাষ্ট্রগুলির উপর নিজের অভিভাবকত্বের প্রকাশ ঘটিয়েছিল। এর প্রধান লক্ষ্য ছিল- এশিয়ার দেশগুলিতে ইউরোপ-বিরোধী মানসিকতার বিকাশ ঘটানো। এই নীতির উদ্দেশ্য ছিল এশিয়া মহাদেশের উপর থেকে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো বিদেশি শক্তির নিয়ন্ত্রণ বিলোপ করা।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে জাপানের এই নীতি গ্রহণের কারণ
(ক) বাস্তব উদ্দেশ্য
জাপানের বাস্তব উদ্দেশ্য ছিল- ইউরোপীয় নিয়ন্ত্রণমুক্ত বৃহত্তর এশিয়ার উপর জাপানের আধিপত্য স্থাপন করা। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার বসবাসের জন্য জাপান নতুন ভূখণ্ড দখলের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিল। এসময় পূর্ব এশীয় অঞ্চল তথা প্রতিবেশী অঞ্চলগুলির উপর জাপান নিজ আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে সচেষ্ট হয়।
(খ) জাপানি সাম্রাজ্যবাদ
জাপানের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল চিন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপান চিনের উপর আধিপত্য কায়েম করেছিল। ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে জাপান মাঞ্চুরিয়া দখল করে নেয়। এই ঘটনা পুনরায় চিনের উপর বৃহত্তর আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় অনুপ্রাণিত করে। ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে জাপান চিন আক্রমণ করে নগ্ন সাম্রাজ্যবাদের পরিচয় দেয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে জাপান দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে নিজ সাম্রাজ্যের সম্প্রসারণ ও আধিপত্য প্রসারের উদ্দেশ্যে সক্রিয় উদ্যোগ গ্রহণ করে এবং বিভিন্ন ইউরোপীয় শক্তিকে পরাজিত করে এই অঞ্চল থেকে তাদের বিতাড়িত করতে থাকে। ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে ইন্দোচিন দখল করে জাপান ওই বছরই ডিসেম্বরে মার্কিন সামরিক ঘাঁটি পার্ল হারবারে বোমাবর্ষণ করে। প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যুদ্ধের সময় জাপান দ্রুতগতিতে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ, যেমন- সোলোমনস, নিউগিনি, ম্যানিলা, পৈনাং, ফিলিপিনস, হংকং, রেঙ্গুন, মালয়, সিঙ্গাপুর, আন্দামান-নিকোবর দখল করে নেয়; যদিও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরাজয়ের ফলে জাপানের এই উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়।