একটি আদর্শ নিউরোনের চিত্রসহ বিবরণ দাও। |
সংজ্ঞা
নিউরোনের গঠন
① কোশদেহ বা সেল বডি: নিউরোনের কোশদেহকে নিউরোসাইটন (neurocyton) বলে। এটি সোমা (soma) এবং সেট্রন (centron) নামেও পরিচিত। এটি আকৃতিতে নক্ষত্রাকার, গোলাকার, ডিম্বাকার, ত্রিকোণাকার, শাঙ্কব অথবা ফ্লাস্কের মতো হয়। কোশদেহের অংশগুলি হল-
- (1) কোশঝিল্লি: কোশদেহটি লাইপোপ্রোটিন দ্বারা গঠিত একটি আবরণী দ্বারা আবৃত থাকে।
- (ⅱ) সহিটোপ্লাজম: স্নায়ুকোশের সাইটোপ্লাজম দানাযুক্ত এবং তত্ত্বময়। কোশদেহের সাইটোপ্লাজমকে নিউরোপ্লাজম বলে।
- (iii) নিউক্লিয়াস : কোশদেহে একটি বড়ো নিউক্লিয়াস থাকে। নিউক্লিয়াসের মধ্যে নিউক্লিওলাস এবং ক্রোমাটিন তত্ত্ব থাকে।
- (iv) নিজল দানা : অ্যাক্সন হিলক ছাড়া কোশদেহের সাইটোপ্লাজমে অসংখ্য রাইবোনিউক্লিয় প্রোটিন দিয়ে গঠিত ছোটো ছোটো কণা বা দানা ছড়িয়ে থাকে, যাদের নিজল দানা বলে। এগুলি প্রকৃতপক্ষে রাইবোজোম দানা। প্রোটিন সংশ্লেষ করা এদের বিশেষ কাজ।
- (v) নিউরোফাইব্রিল: কোশদেহের সাইটোপ্লাজমে যেসব অসংখ্য সূক্ষ্ম সূত্রাকার পদার্থ ডেনড্রনের দিক থেকে অ্যাক্সন পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে, তাদের নিউরোফাইব্রিল বলে। এরা স্নায়ুকোশের সংকোচন ঘটায়।
- (vi) মাইটোকন্ড্রিয়া: কোশদেহের সাইটোপ্লাজমে অসংখ্য মাইটোকন্ড্রিয়া ছড়িয়ে থাকে। এরা শ্বসন নিয়ন্ত্রণ করে।
- (vii) গলগি বডি: কোশদেহের সাইটোপ্লাজমে গলগি বডি এবং অন্তঃকোশীয় জালক (intracellular reticulum) দেখতে পাওয়া যায়। এরা ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে।
- (viii) সেন্ট্রোজোম: এটি অনুন্নত এবং নিষ্ক্রিয়। স্নায়ুকোশের সেন্ট্রোজোম নিষ্ক্রিয় হওয়ায় স্নায়ুকোশ বিভাজনে অক্ষম।
② প্রবর্ধক বা প্রসেস: স্নায়ুকোশের কোশদেহ থেকে নির্গত সূক্ষ্ম সূত্রাকার প্রোটোপ্লাজমীয় অংশকে প্রবর্ধক বা প্রসেস বলে। প্রবর্ধক দু-রকমের হয়, যথা- (A) অ্যাক্সন এবং (B) ডেনড্রন।
A. অ্যাক্সন:
(i) এটি স্নায়ুকোশের আজ্ঞাবহ প্রবর্ধক (motor process) বা বহির্বাহী শাখা (efferent branches) |
(ii) কোশদেহের যে অংশ থেকে অ্যাক্সন সৃষ্টি হয়, সেই অংশকে অক্ষস্তূপ বা অ্যাক্সন হিলক (axon hillock) বলে।
(iii) কোনো-কোনো অ্যাক্সনের অল্প কয়েকটি শাখা থাকে-ওই শাখাগুলিকে অক্ষশাখা (colateral) বলে।
(iv) অ্যাক্সনের সাইটোপ্লাজমকে অ্যাক্সোপ্লাজম (axoplasm) বলে।
(v) অ্যাক্সোপ্লাজমে নিউরোফাইব্রিল এবং মাইটোকন্ড্রিয়া থাকে কিন্তু নিজল দানা থাকে না।
(vi) অ্যাক্সনের ওপরে আবার তিনটি আবরণ থাকে, ওইগুলি হল
যথাক্রমে-
- (a) অ্যাক্সোলেমা (axolemma) অর্থাৎ অ্যাক্সোপ্লাজমের ওপরের আবরণ।
- (b) মায়েলিন সিদ (myelin sheath) বা মেডুলারি আবরণ (medullary sheath) অর্থাৎ অ্যাক্সোলেমার ওপরে অবস্থিত চাদরের মতো চর্বির স্তর।
- (c) নিউরিলেমা (neurilemma) অর্থাৎ মেডুলারি আবরণের বাইরে অবস্থিত আবরণ। আবরণীসহ অ্যাক্সনকে স্নায়ুতত্ত্ব (nerve fibre) বলে। মায়েলিন সিদযুক্ত স্নায়ুতন্তুকে মায়েলিনেটেড (myelinat- ed) বা মেডুলেটেড (medullated) অর্থাৎ আবরণযুক্ত স্নায়ুতত্ত্ব বলা হয় এবং মায়েলিন সিদ্বিহীন স্নায়ুতন্তুকে নন-মায়েলিনেটেড বা নন-মেডুলেটেড (non-myelinated or non-medullated) আমি অর্থাৎ আবরণবিহীন স্নায়ুতন্তু বলা হয়।
(vii) মেডুলারি আবরণ এবং নিউরিলেমার মধ্যে সোয়ান কোশ (Schwann cell) নামে এক রকম নিউক্লিয়াসযুক্ত ডিম্বাকার কোশ দেখা যায়।
(viii) অ্যাক্সন কোশদেহ থেকে স্নায়ুস্পন্দন (nerve impulse) দূরে নিয়ে যায়, অর্থাৎ অপর কোনো স্নায়ুকোশে বা ইফেকটরে বহন করে।
(ix) অ্যাক্সনের মেডুলারি আবরণটি স্থানে স্থানে বিচ্ছিন্ন হয়ে এবং নিউরিলেমা সংকুচিত হয়ে যে পর্ব সৃষ্টি করেছে তাকে র্যানভিয়ারের পর্ব (node of Ranvier) বলে।
(x) অ্যাক্সনের শেষপ্রান্ত অসংখ্য সূক্ষ্ম শাখান্বিত হয়ে এন্ড ব্রাশ (end brush) বা প্রান্তবুরুশ গঠন করেছে।
(xi) প্রান্তবুরুশের প্রতিটি শাখার শেষপ্রান্ত স্ফীত হয়ে প্রাক্-স্নায়ুসন্নিধি স্ফীতি (pre-synaptic nob) গঠন করেছে।
B. ডেনড্রন :
(i) ডেনড্রন হল কোশদেহের সংজ্ঞাবহ প্রবর্ধক (sensory process) বা অন্তর্বাহী শাখা (afferent branches) |
(ii) এরা আকারে ছোটো এবং অসংখ্য শাখাপ্রশাখাযুক্ত। ডেনড্রনের
প্রতিটি শাখাকে ডেনড্রাইট (dendrite) বলে।
(iii) এদের মধ্যে নিউরোপ্লাজম, নিউরোফাইব্রিল এবং নিজল দানা থাকে।
(iv) ডেনড্রন কেবল নিউরোন পর্দা দিয়ে আবৃত থাকে।
(v) ডেনড্রনের মধ্যে সোয়ান কোশ ও র্যানভিয়ারের পর্ব থাকে না।
(vi) ডেনড্রন পূর্ববর্তী নিউরোন থেকে অথবা রিসেপটার থেকে স্নায়ুস্পন্দন গ্রহণ করে এবং তা কোশদেহে বহন করে।