উপনিবেশ স্থাপনের কারণসমূহ লেখো

উপনিবেশবাদ বলতে কী বোঝো? উপনিবেশ স্থাপনের কারণসমূহ লেখো
উপনিবেশবাদ বলতে কী বোঝো? উপনিবেশ স্থাপনের কারণসমূহ লেখো।

উপনিবেশবাদ (Colonialism)

ল্যাটিন শব্দ কলোনিয়া (Colonia) থেকে ইংরেজি কলোনি (Colony) শব্দটির উদ্ভব ঘটেছে। কলোনি (Colony) কথাটির বাংলা প্রতিশব্দ হল উপনিবেশ। উপনিবেশ কথাটির মূল অর্থ হল- ‘মানবসমাজের স্থানান্তরিত একটি অংশ’।

সাধারণভাবে উপনিবেশবাদ হল- একটি নির্দিষ্ট এলাকা বা ওই এলাকার জনসাধারণের উপর অন্য একটি শক্তির নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা; যার উদ্দেশ্য হল ঔপনিবেশিক (Colonised) দেশের কাঁচামাল ও প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণের মাধ্যমে অর্থনৈতিক শোষণ। উপরন্তু উপনিবেশ স্থাপনকারী (Coloniser) দেশের স্বার্থে উপনিবেশের বাজার ব্যবহার এবং উপনিবেশে মাতৃদেশের রীতিনীতি, সংস্কৃতি এবং জীবনযাপন পদ্ধতির বিস্তার করা।

উনিশ শতকে ইউরোপের শক্তিশালী দেশসমূহ অর্থাৎ ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, রাশিয়া প্রায় সমগ্র পৃথিবীকে তাদের উপনিবেশে পরিণত করেছিল।

উপনিবেশ স্থাপনের কারণসমূহ

ভৌগোলিক আবিষ্কার: নবজাগরণপ্রসূত অনুসন্ধিৎসা, ব্যাবসাবাণিজ্যের মাধ্যমে সমৃদ্ধি লাভের আকাঙ্ক্ষা এবং খ্রিস্টান ধর্মযাজকদের ধর্মপ্রচারে আগ্রহ ইত্যাদি বিষয় ইউরোপীয় বণিকদের ভৌগোলিক অভিযানে অনুপ্রেরণা জোগায়। কলম্বাস, আমেরিগো ভেসপুচি, ক্যাবট, ভাস্কো ডা গামা প্রমুখের ভৌগোলিক আবিষ্কার ইউরোপের শক্তিধর রাষ্ট্রগুলিকে উপনিবেশ স্থাপনে আগ্রহী করে তোলে। ষোড়শ শতকের তৃতীয় দশক থেকে এই প্রবণতা অত্যধিক বৃদ্ধি পাওয়ায় এই সময়কে বলা হয় পেশাদার বিজয়ীদের যুগ (The Age of Conquistador) 

বাণিজ্যবিস্তার: উপনিবেশ স্থাপনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিল ব্যাবসাবাণিজ্যের প্রসার। শিল্প উৎপাদনের জন্য সস্তায় কাঁচামাল সংগ্রহ, সুবিধাজনক বাজার সৃষ্টি, লাভজনক বিনিয়োগের ক্ষেত্রের সৃষ্টি ইত্যাদি লক্ষ্যপূরণের উদ্দেশ্যে ঔপনিবেশিক শক্তি সর্বদাই উপনিবেশের সন্ধানে ব্যস্ত ছিল।

শিল্পবিপ্লবের প্রভাব: শিল্পবিপ্লবের ফলে বিভিন্ন ধরনের কাঁচামাল সংগ্রহের চাহিদা বৃদ্ধি পেলে কাঁচামাল সংগ্রহ এবং উৎপন্ন দ্রব্য বিক্রির বাজার তৈরির তাগিদে শিল্পোন্নত দেশগুলি উপনিবেশ স্থাপনে তৎপর হয়।

পুঁজি বিনিয়োগ: শিল্পোন্নত দেশগুলির পুঁজিপতিরা মূলধন বিনিয়োগের ক্ষেত্র হিসেবে উপনিবেশ প্রতিষ্ঠার জন্য নিজ নিজ দেশের সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করে।

উদ্বৃত্ত জনসংখ্যার সমস্যা: শিল্পবিপ্লবের পরবর্তী সময়ে উদ্বৃত্ত জনসংখ্যার চাপ কমানোর উদ্দেশ্যে বিভিন্ন দেশ উপনিবেশ স্থাপনে আগ্রহী হয়ে ওঠে।

রাষ্ট্রের নিরাপত্তা: উপনিবেশ স্থাপনের অন্যতম প্রধান কারণ ছিল বৈদেশিক আক্রমণ থেকে রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা এবং শান্তি-শৃঙ্খলা সুনিশ্চিত করা।

ধর্ম ও সভ্যভার প্রচার: নিজ সভ্যতা এবং ধর্মপ্রচারের আকাঙ্ক্ষাকেও ঔপনিবেশিক নীতির একটি কারণ বলে গণ্য করা হয়। ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রপ্রধানরা বিশ্বাস করতেন যে, এশিয়া ও আফ্রিকার অসভ্য জাতিগুলির মধ্যে খ্রিস্টধর্ম ও পাশ্চাত্য সভ্যতা প্রচার করা তাদের পবিত্র কর্তব্য। এই ধারণার বশবর্তী হয়েই পোর্তুগাল, স্পেন, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড ইত্যাদি দেশের খ্রিস্টান মিশনারিরা এশিয়া ও আফ্রিকায় খ্রিস্টধর্ম প্রচার করেন।

বিশ্বশক্তিরূপে আত্মপ্রকাশ:
উপনিবেশ স্থাপনের অন্যতম অপরিহার্য কারণ ছিল বিশ্বশক্তিরূপে ক্ষমতাশালী দেশের আত্মপ্রকাশের আকাঙ্ক্ষা।

Leave a Comment