ইতালির ঐক্যের পথে বাধাগুলি কী ছিল – আজকের পর্বে ইতালির ঐক্যের পথে বাধাগুলি কী ছিল তা আলোচনা করা হল।
ইতালির ঐক্যের পথে বাধাগুলি কী ছিল
ইতালির ঐক্যের পথে বাধাগুলি কী ছিল? |
ইটালি হল প্রাচীন সভ্যতার লীলাভূমি, প্রাচীন যুগে রোমান সভ্যতা পঞ্চদশ শতকে রেনেসাসের উদ্ভাবক ছিল ইতালি। অথচ আঠারো শতকে ইউরোপে ইতালি নামে কোনো রাষ্ট্রের অস্তিত্বই ছিল না। অস্ট্রিয়া, বুরবো রাজা ও পোপ ছিন্ন ভিন্ন ইতালির বিভিন্ন অংশে শাসন করত। উনিশ শতকের গোড়ার দিকে ফরাসি বিপ্লব ও নেপোলিয়নের অভিযানের ফলে ইতালির ঐক্য আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল বটে কিন্তু এর যাত্রাপথ মসৃণ ছিল না কারণ এই দেশের ঐক্যের পক্ষে বহু বাধাবিঘ্ন ছিল সেগুলি হল-
বিদেশি শাসন
ইতালির উত্তর দিকটিকে শাসন করত অস্ট্রিয়া, দক্ষিণ দিকটিতে ছিলেন ফরাসি বুরবোঁ রাজারা মধ্যাংশে ছিলেন পোপ। কেবলমাত্র পিডমন্ট-সার্ডিনিয়া ছিল একমাত্র ইতালির স্বাধীন রাজ্য। স্বাভাবিকভাবেই বিদেশিরা ইতালির ঐক্য প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী ছিল না।
ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যের অস্তিত্ব
বহু শতাব্দী ধরে ইতালি ছিল ছোটো ছোটো রাজ্যে বিভক্ত। এই রাজ্যগুলির মধ্যে ছিল তীব্র আঞ্চলিক বিরোধ ও রক্ষণশীল মনোভাব। ফলে ইতালিতে কোনো রাজনৈতিক ঐক্যতা ছিল না, ইতালি নামটি কেবলমাত্র ভৌগোলিক সংজ্ঞায় পরিণত হয়েছিল।
অস্ট্রিয়ার প্রাধান্য
ইটালির ঐক্যের পথে প্রধান অন্তরায় ছিল প্রতিবেশী রাষ্ট্র অস্ট্রিয়া কারণ, ইতালির উপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আধিপত্য স্থাপন করে অস্ট্রিয়া। উত্তর ইতালির লম্বার্ডি ও ভেনেসিয়া প্রদেশ অধিকার করে। এ ছাড়া মধ্য ইটালির টাস্কানি ও মেডানা অস্ট্রিয়ার হ্যাপসবার্গ বংশীয় রাজকুমার ও রাজকুমীদের দেওয়া হয়। দক্ষিণ ইটালির রাজাদের বৈদেশিক নীতি পরিচালিত হত অস্ট্রিয়ার নির্দেশে।
বৈদেশিক শাসন
ভিয়েনা চুক্তি দ্বারা ইটালিতে বৈদেশিক শাসন স্থাপন করা হয়। একমাত্র পিডমন্টের স্যাভয় রাজবংশ ছাড়া ইতালির সকল রাজারা ছিল বিদেশি। এমনকি পোপও ছিলেন বহিরাগত।
পোপের রাজনৈতিক ক্ষমতা
পোপের রাজনৈতিক ক্ষমতা ছিল ইটালির ঐক্যের অন্যতম অন্তরায়। পোপ ছিল সমগ্র খ্রিস্টীয় জগতের ধর্মগুরু এবং মধ্য ইটালিতে পোপের প্রদত্ত আধিপত্য ও প্রভাব ছিল। পোপ সমগ্র ক্যাথলিক জগতের ধর্মগুরু হওয়ায় ইউরোপীয় বিভিন্ন দেশের সমর্থনপুষ্ট পোপকে বিতাড়িত করে ইটালির ঐক্যের কথা ইটালিবাসী স্বপ্নেও ভাবতে পারত না।
জাতীয় চেতনার অভাব
ফরাসি বিপ্লবের পূর্ব পর্যন্ত ইটালিতে জাতীয় চেতনার তেমনভাবে বিকাশ ঘটে নি। ইটালির ছোটো ছোটো রাজ্যগুলি তাদের নিজেদের ক্ষুদ্র স্বার্থ ত্যাগ করে বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থের কথা কখনই ভাবেনি। মেটারনিখ যথার্থই বলেছিলেন যে ইতালিতে প্রদেশ প্রদেশের বিরুদ্ধে শহর শহরের বিরুদ্ধে পরিবার পরিবারের বিরুদ্ধে মানুষ মানুষের বিরুদ্ধে।
উপসংহার
নেপোলিয়নের সাম্রাজ্যভুক্ত হবার পর সর্বপ্রথম ইটালি এক শাসনতান্ত্রিক ব্যবস্থার অধীনে এসেছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও ইতালিবাসীর মধ্যে পরিপূর্ণ জাতীয়তাবাদী চেতনা বা জাতীয় ঐক্যের বিকাশ ঘটেনি। অবশেষে সমস্ত অন্তরায় দূর করে ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে জন্ম হয় স্বাধীন ঐক্যবদ্ধ ইটালির।