“আসল বাদাটার খোঁজ করা হয় না আর উচ্ছবের।”-‘বাদা’ কাকে বলে? কেন উচ্ছবের পক্ষে আসল বাদাটা খোঁজ করা সম্ভব হয় না? |
মহাশ্বেতা দেবী রচিত ‘ভাত’ ছোটোগল্পের প্রধান চরিত্র উচ্ছব নাইয়া এমনই এক বাদা অঞ্চলের মানুষ। সেই বাদায় ধান হয় না। গেঁড়ি-গুগলি, শাকপাতা দিয়ে উচ্ছবদের পেট ভরাতে হয়। দীর্ঘদিন তারা ভাতের মুখ দেখেনি।
পেট ভরে ভাত খাওয়ার আশায় উচ্ছব কলকাতার বড়োবাড়িতে আসে-‘ভাত খাবে কাজ করবে’। সেখানে ‘হেলা ঢেলা’ ভাত দেখে উচ্ছবের বিস্ময়ের সীমা থাকে না। নিত্য পাঁচ রকম চালের ভাত হয় সেখানে। বাড়ির বড়োকর্তা মরণাপন্ন। তাঁকে বাঁচানোর জন্য হোমের আয়োজন হচ্ছে। আর তার জন্য-“এত তরকারি, এত চাল, এত মাছ।” বড়োবাড়ির এই বাড়বাড়ন্ত সবই ‘বাদার দৌলতে’। তাই উৎসব ভাবতে থাকে এ কোন্ বাদা যেখানে ধানের ছড়াছড়ি। এ বাদা যেন তার নিজের চেনা বাদার উলটো ছবি।
উচ্ছবের মনে প্রশ্ন জাগে, “সে বাদাটা কোথায় থাকে?” বাদার ভাত খেয়ে শরীরে বল এলে সে বাবুদের লক্ষ্মীমন্ত বাদাটার খোঁজ করবে। দেশে তার মতো অনেক দুঃখী মানুষ আছে, তাদেরও সে ‘আসল বাদাটার’ খোঁজ দেবে।
কিন্তু ভাগ্যচক্রে রেলস্টেশনে অশুচি ভাত খেয়ে তৃপ্ত উচ্ছব আসল বাদার কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ে। যখন ঘুম ভাঙে বাবুর বাড়ির সকলে তাকে পেতলের ডেকচি চুরির অপরাধে ধরে মারতে মারতে থানায় নিয়ে যায়। আসল বাদা খোঁজ করার বাসনা তার মনেই থেকে যায় লক্ষ্মীমন্ত বাদা অচল হয়ে বাবুদের বাড়িতেই থেকে যায়। আসলে সংসারে যাদের হা-অন্ন হতদরিদ্র দশা তাদের অবস্থার রূপান্তর ঘটে না। লক্ষ্মীদেবীর করুণা ‘সব আছে’-দের ভাগ্যেই বর্ষিত হয় যুগে যুগে।