আফ্রিকার ব্যবচ্ছেদ কীভাবে ঘটেছিল

আফ্রিকার ব্যবচ্ছেদ কীভাবে ঘটেছিল – আজকের পর্বে আফ্রিকার ব্যবচ্ছেদ কীভাবে ঘটেছিল তা আলোচনা করা হল।

    আফ্রিকার ব্যবচ্ছেদ কীভাবে ঘটেছিল

    আফ্রিকার ব্যবচ্ছেদ কীভাবে ঘটেছিল
    আফ্রিকার ব্যবচ্ছেদ কীভাবে ঘটেছিল?

    ভূমিকা

    সমুদ্র ঘেরা, জঙ্গলে পরিপূর্ণ ও মনোরম প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যে ভরা আফ্রিকা মহাদেশ। এই মহাদেশের অভ্যন্তরভাগ বহুদিন পর্যন্ত অনাবিষ্কৃত, অজ্ঞাত ও অন্ধকারে আচ্ছন্ন ছিল, তাই এই মহাদেশ ‘অন্ধকারাচ্ছন্ন মহাদেশ’ নামে পরিচিত। ভৌগোলিক অবস্থানের দিক দিয়ে অন্যান্য মহাদেশের তুলনায় আফ্রিকা ইউরোপের সব থেকে নিকটবর্তী মহাদেশ। ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ পর্যন্ত যে সমস্ত জাতি আফ্রিকার সংস্পর্শে এসেছিল তাদের অধিকার কেবলমাত্র আফ্রিকার উপকূল পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছিল। আফ্রিকার অর্ধসভ্য দরিদ্র মানুষদের নিয়ে প্রথম দাসব্যাবসা শুরু করেছিল পোর্তুগিজরা। উনবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে নানা কারণে আফ্রিকা সম্বন্ধে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আগ্রহ দেখা দেয়। আফ্রিকার বণ্টনকে কেন্দ্র করে ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলির মধ্যে কখনও যুদ্ধ হয়নি, সমস্ত বিবাদ আপস ও মীমাংসার মাধ্যমে মিটে যায়। কঙ্গো উপত্যকা আবিষ্কারের পর আফ্রিকায় ব্যাবসাবাণিজ্য করার সম্ভাবনা নিয়ে ব্রাসেলস সম্মেলনে আলোচনা হয় ও একটি আন্তর্জাতিক ভৌগোলিক সংস্থা গঠন করা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এটি কার্যকারী হতে পারেনি কারণ প্রতিটি রাষ্ট্রই আফ্রিকায় নিজস্ব সাম্রাজ্য বিস্তারের জন্য উদ্যোগী হয়ে উঠেছিল।

    আফ্রিকা দখলের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত

    1884-1885 খ্রিস্টাব্দে ইউরোপের প্রতিনিধিগণ বার্লিন সম্মেলনে সিদ্ধান্ত নেন- আফ্রিকার কোনো অংশ দখল করার আগে অন্য রাষ্ট্রকে জানাতে হবে। ② কঙ্গো নদী আন্তর্জাতিক নদী হিসেবে স্বীকৃত হবে। সমস্ত দেশের ধর্ম প্রচারক ও অভিযাত্রীদের কঙ্গোর ভিতরে প্রবেশের অধিকার থাকবে। ④ আফ্রিকার দাসব্যাবসা বন্ধ করতে হবে।

    এই সমস্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও স্বার্থের জন্য কোনো রাষ্ট্রই সেগুলি মানার ব্যাপারে আগ্রহী ছিল না।

    ফলাফল

    বেলজিয়ামের রাজা খুব দ্রুততার সঙ্গে কঙ্গোকে তাঁর সাম্রাজ্যভুক্ত করে নেন। ফলে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, ইটালি, পোর্তুগাল প্রভৃতি রাষ্ট্রগুলিও আফ্রিকায় সাম্রাজ্য বিস্তারের জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ে। আফ্রিকার দক্ষিণ উপকূলের অ্যাঙ্গোলা ও পশ্চিম উপকূলের মোজাম্বিক দখল করে পোর্তুগাল। ইটালি দখল করে সোমালিল্যান্ড, জার্মানি দক্ষিণ-পশ্চিম আফ্রিকা, দক্ষিণ-পূর্ব আফ্রিকা, টোগোল্যান্ড এবং ক্যামেরুন দখল করে। ইংল্যান্ডও ওলন্দাজদের কাছ থেকে কেপ কলোনি ছাড়াও উত্তর দিকের অরেঞ্জ রিভার কলোনি দখল করে। এর পাশাপাশি তারা বুয়োরদের পরাজিত করে ট্রান্সভাল দখল করে। দক্ষিণের এই অঞ্চল নিয়ে গঠিত হয় দক্ষিণ আফ্রিকার ইউনিয়ন। পাশাপাশি উত্তর মিশর অধিকার করলে ইংল্যান্ডের সাম্রাজ্য সুদান পর্যন্ত এগিয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত পূর্ব আফ্রিকা ও উগান্ডাতে অধিকার স্থাপিত হলে ভারত মহাসাগর থেকে ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত ব্রিটেনের সাম্রাজ্য বিস্তৃত হয়। কেবলমাত্র আবিসিনিয়া আর নাইরোবি ছাড়া আফ্রিকার সমস্ত অঞ্চল ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে বণ্টিত হয়ে যায়।

    Leave a Comment