আধুনিক ইতিহাস লিখন পদ্ধতি সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো

আধুনিক ইতিহাস লিখন পদ্ধতি সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো – আজকের পর্বে আধুনিক ইতিহাস লিখন পদ্ধতি সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হল।

    আধুনিক ইতিহাস লিখন পদ্ধতি সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো

    আধুনিক ইতিহাস লিখন পদ্ধতি সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো
    আধুনিক ইতিহাস লিখন পদ্ধতি সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো
    সপ্তদশ-অষ্টাদশ শতকে নবজাগরণ পরবর্তী যুক্তিবাদ ও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির ফসল হল আধুনিক ইতিহাসচর্চা।

    আধুনিক ইতিহাস লিখন পদ্ধতি

    আধুনিক ইতিহাস লিখন পদ্ধতির বিভিন্ন দিকগুলি হল নিম্নরূপ- 

    (ক) মানবসমাজের সর্বাঙ্গীণ বিকাশের আলোচনা

    প্রাক্-আধুনিক ইতিহাস ছিল রাজনৈতিক ইতিহাস। রেনেসাঁস উদ্ভূত মানবতাবাদের প্রভাবে আধুনিক ইতিহাস লিখনপদ্ধতিতে মানবসমাজ ও সভ্যতাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। ফলে সমাজ, অর্থনীতি, সংস্কৃতি ইত্যাদি সমস্ত কিছুই স্থান পায় ইতিহাসে।

    (খ) মৌলিক সূত্র অনুসন্ধান

    আধুনিক ইতিহাস লিখনপদ্ধতিতে ঘটনা কীভাবে ঘটেছিল -এই বিষয়টির উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। বিভিন্ন মৌলিক সূত্র, যেমন- প্রত্নসামগ্রী, সাহিত্য, লোককাহিনি, প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ ইত্যাদির অনুসন্ধানে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হয়।

    (গ) তথ্যের উপর গুরুত্ব প্রদান

    ঐতিহাসিক এবং ইতিহাসের তথ্য হল একে অপরের পরিপূরক। মৌলিক উপাদান থেকে ঐতিহাসিক প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করে সেগুলিকে সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গিতে যাচাই করেন। তিনি তথ্য যাচাইয়ের বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে তথ্যগুলিকে বিশ্লেষণ করেন।

    (ঘ) ঐতিহাসিক ঘটনার নির্বাচন

    দেশ বা সমাজের সমস্ত ঘটনাই ঐতিহাসিক ঘটনা নয়। যে-কোনো ঘটনার গুরুত্ব উপলব্ধি করে সঠিক তথ্য নির্বাচন করাই ঐতিহাসিকের প্রধান কর্তব্য। আবার বর্তমানের কোনো ঘটনা ভবিষ্যতে ঐতিহাসিক ঘটনা হয়ে উঠতে পারে কি না তা অনুধাবন করে সেই তথ্য সংগ্রহ করে রাখাও ঐতিহাসিক দক্ষতার উপর নির্ভর করে।

    (ঙ) ধারাবাহিক ও কালানুক্রমিক বিবরণ

    ধারাবাহিকতা ও কালানুক্রম বজায় রেখে ঐতিহাসিককে ইতিহাস রচনা করতে হয়। তা না হলে ইতিহাস মূল্যহীন হয়ে পড়বে। 

    (চ) অতীত ও বর্তমানের মধ্যে সেতু

    ইতিহাস হল অতীত ও বর্তমানের মধ্যে অন্তহীন সংলাপ। যে ইতিহাসে নতুন কোনো চিন্তাধারার সন্ধান পাওয়া যায় না, সে ইতিহাস ঘটনাপঞ্জির বিবরণ ছাড়া আর কিছু নয়। ইতিহাসচর্চায় অতীতের ঘটনাকে বিশ্লেষণ করতে হয় বর্তমানের আলোয়।

    (ছ) কার্যকারণ পদ্ধতি অনুসরণ

    ঐতিহাসিক ঘটনার পিছনে কার্যকারণ নির্ধারণ করা আধুনিক ঐতিহাসিকদের অন্যতম কর্তব্য। ইতিহাসের কোনো ঘটনা কেন ঘটল, কীভাবে ঘটল, ঘটার ফলে কী হল ইত্যাদি প্রশ্নগুলি ইতিহাস রচনার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।

    (জ) মূল্যায়ন পদ্ধতি

    ইতিহাসে ঘটনাবলির মূল্যায়ন কাম্য। ইতিহাস থেকে মূল্যায়ন ও সিদ্ধান্তকে বাদ দিলে ইতিহাসের প্রকৃত চরিত্র ক্ষুণ্ণ হয়।

    আধুনিক ইতিহাস রচনার উপাদানসমূহ

    আধুনিক ইতিহাস রচনার জন্য দু-ধরনের উপাদান ব্যবহার করা হয়। যথা-

    (ক) আকর উপাদান (Primary Source)

    আর্থার মারউইক-এর তালিকা অনুযায়ী লেখমালা, সাহিত্য (বই, পত্রপত্রিকা), খাজনার নথি, বিভিন্ন দলিল, সার্ভে রিপোর্ট, সরকারি নির্দেশনামা, ফোটো, দৃশ্য-শ্রাব্য উপকরণ ইত্যাদি হল আকর উপাদান।

    (খ) গৌণ উপাদান (Secondary Source)

    আকর উপাদানের সাহায্যে রচিত গ্রন্থ হল গৌণ উপাদান। আকর উপাদানের সঙ্গে যুক্ত কাহিনিকে গৌণ উপাদান বলা হয়।

    ইতিহাস বহমান এবং গতিশীল বিজ্ঞান। বিজ্ঞানসম্মতভাবে আকর ও গৌণ উপাদানের সাহায্যে মানবপ্রগতির বিভিন্ন ধারার ব্যাখ্যায় ইতিহাস প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে।

    আপনি আমাদের একজন মূল্যবান পাঠক। আধুনিক ইতিহাস লিখন পদ্ধতি সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো -এই বিষয়ে আমাদের লেখনী সম্পূর্ণ পড়ার জন্যে আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনার মতামত জানাতে ভুলবেন না।

    Leave a Comment