আড়াইমণ কাঠ কাটলো ভাতের হুতাশে- কবে থেকে উচ্ছব খায়নি? শেষ পর্যন্ত কীভাবে সে ভাত খেল?
“আড়াইমণ কাঠ কাটলো ভাতের হুতাশে”- কবে থেকে উচ্ছব খায়নি? শেষ পর্যন্ত কীভাবে সে ভাত খেল? |
মহাশ্বেতা দেবীর লেখা ‘ভাত’ গল্পের উচ্ছব নাইয়া পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন অঞ্চলের বাসিন্দা। নিজস্ব জমি নেই তার, সতীশ মিস্তিরির জমিতে মজুর খেটে বছরের কয়েকটা মাস তার সংসার চলে। বাকি সময় আধপেটা বা সিকিপেটা খাবার জোটে।
অনেকদিন পর যেদিন সন্ধ্যায় উচ্ছব হিঞ্চে সেদ্ধ, গুগলি সেদ্ধ, নুন আর লংকাপোড়া দিয়ে পেট ভরে খেয়েছিল, সেদিন রাত্রে ঝড়-জল শুরু হয়। ঝড়ে উচ্ছবের কাঁচাবাড়ি ভেঙে যায় আর মাতলা নদীর জল ফুলে ফেঁপে উঠে ভাসিয়ে নিয়ে যায় তার স্ত্রী-পুত্র-কন্যাকে। যদিও ত্রাণে খিচুড়ি দেওয়া হয়েছিল কিছুদিন কিন্তু উচ্ছব খায়নি, সে পাগলের মতো স্ত্রী-পুত্র-কন্যাকে খুঁজে বেরিয়েছিল। গ্রামের লোকেরা যখন তাকে বোঝাল তখন উচ্ছবের সংবিৎ ফিরল কিন্তু ত্রাণে তখন রান্না খাবারের পরিবর্তে ‘ড্রাইডোল’ অর্থাৎ শুকনো খাবার দেওয়া হচ্ছিল। তাই ক্ষুধার্ত উচ্ছব চাল চিবিয়ে জল খেয়েছিল।
তারপর উচ্ছবের হঠাৎ খেয়াল হল কলকাতায় গিয়ে খেয়ে দেয়ে আসবে। গ্রাম সম্পর্কের বোন বাসিনীর মনিব বাড়ির কথা সে আগেই জানত, সেখানেই উচ্ছব ফাইফরমাশ খাটার কাজে লেগে গেল, দুটো রান্না ভাতের আশায়। সুতরাং, উচ্ছব সেই ঝড়-জলের সন্ধ্যায় শেষ পেট ভরে খেয়েছিল।
বাসিনীর মনিবের বাড়িতে কাজে ঢুকেই উচ্ছব ভেবেছিল দুটো ভাত পাবে, কিন্তু বড়োবাড়ির লোকেরা উচ্ছবের কাজের প্রতি যতটা নজর রাখে তার খাবারের প্রতি ততটাই উদাসীনতা দেখায়। বাসিনী লুকিয়ে উচ্ছবকে খানিকটা ছাতু দিয়ে যায়, কিন্তু বেশ কয়েকদিনের না খাওয়া উচ্ছবের কাছে তা সাগরে শিশিরবিন্দু পড়ার মতো মনে হয়।
যজ্ঞ শেষ হলে খাবার পাওয়া যাবে-এই আশায় উচ্ছব অপেক্ষা করতে করতে একসময় ঘুমিয়ে পড়ে। শেষে যখন চেতনা পায় তখন বাড়ির বড়োকর্তার শ্মশানযাত্রার আয়োজন চলছে। শেষে যখন বাসিনী বাড়ির সব রান্না খাবার রাস্তায় ফেলে দিতে যায় তখন উচ্ছবের মাথায় বুদ্ধি খেলে যায়। মোটা ভাতের বড়ো ডেকচি বাসিনীর কাছ থেকে চেয়ে নেয় দূরে ফেলে আসবে বলে কিন্তু তা না ফেলে সে ডেকচি নিয়ে সোজা দৌড় লাগায় রেলস্টেশনে এবং “বসে ও খাবল খাবল ভাত খায়”। এভাবে উচ্ছব শেষ পর্যন্ত ভাতের স্বাদ নিয়েছিল।
আরও পড়ুন – কে বাঁচায়, কে বাঁচে গল্পে মৃত্যুঞ্জয়ের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো