অব-উপনিবেশিকরণের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক তাৎপর্য সম্পর্কে আলোচনা করো
অব-উপনিবেশিকরণের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক তাৎপর্য সম্পর্কে আলোচনা করো। |
অব-উপনিবেশিকরণের রাজনৈতিক তাৎপর্য
অব-উপনিবেশিকরণের রাজনৈতিক তাৎপর্য ছিল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
(ক) তৃতীয় বিশ্বের আবির্ভাব
অব-উপনিবেশিকরণের পর এশিয়া, আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার সদ্যস্বাধীনতাপ্রাপ্ত দেশগুলি তৃতীয় বিশ্ব (Third World) নামে পরিচিত হয়।
(খ) রাজনীতির আন্তর্জাতিকীকরণ ও জাতিভিত্তিক রাষ্ট্রের আত্মপ্রকাশ
অব-উপনিবেশিকরণের যুগে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স প্রভৃতি দেশের বদলে বিশ্বরাজনীতিতে নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা নেয় আমেরিকা ও সোভিয়েত ইউনিয়ন। ফলে বিশ্বরাজনীতির আন্তর্জাতিকীকরণ ঘটে এবং বহু নতুন জাতিভিত্তিক রাষ্ট্রের জন্ম হয়।
(গ) ঠান্ডা লড়াইয়ের সম্প্রসারণ
সদ্যস্বাধীন দেশগুলির উপর সোভিয়েত ইউনিয়ন ও আমেরিকা যথাক্রমে সমাজতন্ত্র ও পুঁজিবাদী ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ কায়েম করতে উদ্যোগী হয়ে ওঠে। ফলে রুশ-মার্কিন প্রতিদ্বন্দিতাকে কেন্দ্র করে ঠান্ডা লড়াইয়ের সৃষ্টি হয়।
(ঘ) আঞ্চলিক সংঘাত
ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্ত সদ্যস্বাধীন প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলির মধ্যে (ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ, ভারত-চিন যুদ্ধ, কোরিয়ার যুদ্ধ) বিভিন্ন বিষয়কে কেন্দ্র করে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও আঞ্চলিক সংঘাত শুরু হয়।
(ঙ) জাতিপুঞ্জের প্রসার
অব-উপনিবেশিকরণের সূত্রে এশিয়া ও আফ্রিকার স্বাধীন দেশগুলি সম্মিলিত জাতিপুঞ্জে যোগদান করলে জাতিপুঞ্জের প্রসার ঘটে। ওই সময়ে জাতিপুঞ্জের মোট ১৭৯টি সদস্যরাষ্ট্রের মধ্যে ১০০টি রাষ্ট্র ছিল সদ্যস্বাধীনতাপ্রাপ্ত।
অব-উপনিবেশিকরণের অর্থনৈতিক তাৎপর্য
অব-উপনিবেশিকরণের অর্থনৈতিক তাৎপর্যগুলি নিম্নে আলোচনা করা হল-
(ক) সদ্যস্বাধীন রাষ্ট্রগুলির অর্থনৈতিক অনগ্রসরতা
অব-উপনিবেশিকরণের ফলে উপনিবেশগুলি স্বাধীনতা লাভ করলেও দীর্ঘদিনের ঔপনিবেশিক শোষণে নিঃস্ব হয়ে পড়ে। ফলে সদ্যস্বাধীন দেশগুলি তাদের আর্থিক বিকাশের জন্য পাশ্চাত্য শক্তির অর্থসাহায্যের মুখাপেক্ষী হয়ে পড়েছিল।
(খ) নতুন রূপে উপনিবেশবাদ
আর্থিকভাবে নিঃস্ব সদ্যস্বাধীন দেশগুলির পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে বৃহৎ শক্তিগুলি তাদের অর্থনৈতিক সহায়তা দানের মাধ্যমে সুকৌশলে সেখানে নিজেদের প্রভাব-প্রতিপত্তি বিস্তারে আগ্রহী হয়ে ওঠে। সাহায্যের নামে চলতে থাকে শোষণ। এই ঘটনাকেই নয়া উপনিবেশবাদ বলা হয়।
(গ) বাজার অর্থনীতির উপর নির্ভরশীলতা
তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলির অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বহুলাংশেই বৈদেশিক সংগঠন বা বহুজাতিক সংস্থার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ছিল। এই উদ্দেশ্যে তারা GATT (General Agreement on Tariffs and Trade)-এর আপত্তিজনক শর্তাবলিও মেনে নিতে বাধ্য হয় এবং বাজার অর্থনীতির উপর ক্রমশ নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।