অবশিল্পায়ন কী? দেশীয় বস্ত্রশিল্পের উপর অবশিল্পায়নের কী প্রভাব পড়েছিল? |
অবশিল্পায়ন
অবশিল্পায়ন-এর আক্ষরিক অর্থ হল শিল্পের অবনমন বা অধোগতি। অষ্টাদশ শতকে ঔপনিবেশিক শক্তির সুপরিকল্পিত অর্থনৈতিক নীতির পরিণামে বাংলা তথা ভারতের প্রচলিত কুটিরশিল্পগুলির যে অবক্ষয় ঘটেছিল, ঔপনিবেশিক ভারতের ইতিহাসে তা অবশিল্পায়ন নামে পরিচিত। যেসকল জাতীয়তাবাদী নেতা তথা ঐতিহাসিক ভারতীয় শিল্পের অবনমনের কথা বলেছেন, তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- দাদাভাই নৌরজী, রমেশচন্দ্র দত্ত, মহাদেব গোবিন্দ রানাডে প্রমুখ।
দেশীয় বস্ত্রশিল্পের উপর অবশিল্পায়নের প্রভাব
ঔপনিবেশিক শাসনকালে দেশীয় বস্ত্রশিল্পের উপর অবশিল্পায়নের প্রভাবগুলি হল-
ভারতীয় বস্ত্রশিল্পের বিনাশ
একসময় ভারতীয় বস্ত্রশিল্পের ব্যাপক চাহিদা ছিল বিদেশের বাজারগুলিতে। ব্রিটিশ সরকারের এদেশে শোষণ ও নিপীড়ন, ব্রিটিশ পণ্যের অবাধ আমদানি, বৈষম্যমূলক শুল্কনীতির ফলে দেশীয় শিল্প ধ্বংস হয়ে যায়।
বিদেশে ভারতীয় বস্ত্রের রফতানি হ্রাস
ভারত থেকে ব্রিটেনে রফতানিকৃত দেশীয় সুতিবস্ত্রের উপর অসম শুল্ক চাপিয়ে দেওয়ায় বিদেশে ভারতীয় বস্ত্রের রফতানি কমে যায়।
ভারতে বিদেশি বাস্ত্রর আমদানি বৃদ্ধি
ইংল্যান্ডের কলকারখানায় উৎপাদিত উন্নতমানের সস্তা বস্ত্রের আমদানি ভারতে বৃদ্ধি পায়। ফলে ভারতের বাজারগুলি ইংল্যান্ডে উৎপাদিত বস্ত্রে ছেয়ে যায়। দেশীয় শিল্পীরা অসম প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হয়।
দারিদ্র্য বৃদ্ধি
অবশিল্পায়নের ফলে দেশীয় অর্থনীতি ধ্বংসের পাশাপাশি বৃদ্ধি পায় চরম দারিদ্র্যতা এবং ভারত পরিণত হয় এক দরিদ্র দেশে।
বেকারত্ব বৃদ্ধি
অবশিল্পায়নের ফলে দেশীয় হস্তশিল্পী এবং কারিগরেরা জীবিকাহীন হয়ে পড়ে। ফলে দেখা দেয় বেকার সমস্যা। নরেন্দ্রকৃষ্ণ সিংহের মতে, ১০ লক্ষ মানুষ কাজ হারিয়ে ফেলেছিল শুধুমাত্র বাংলাতেই।
কৃষির উপর চাপ বৃদ্ধি
বস্ত্রশিল্পের সঙ্গে যুক্ত বহু মানুষ কর্মচ্যুত হয়ে জমির উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। এইভাবে কৃষিকাজে নিযুক্ত হওয়ার কারণে কৃষির উপর চাপ ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে থাকে। এইভাবে অবশিল্পায়নের ফলে দেশীয় বস্ত্রশিল্প ক্রমশ ধ্বংসের দিকে অগ্রসর হয়।