অতীতের উত্তরাধিকার (Inheritance of Past) বিষয়ে ভারতীয় ঔপনিবেশিক ইতিহাস নির্মাণ (The Colonial Construction) সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো। |
ঔপনিবেশিক ইতিহাস রচনার ধারা
প্রাচ্যবাদী ধারা: প্রাচ্যবাদীদের ধারণানুসারে, প্রাচ্যবাদী সভ্যতা এক সময় উন্নত থাকলেও বর্তমানে তা অবক্ষয়ের পথে ধাবমান।
হিতবাদী ধারা: জেরেমি বেথাম, জেমস মিল প্রমুখ হিতবাদীদের মতে, ভারতবর্ষের সভ্যতার মান কখনোই উন্নত ছিল না, এমনকি ভারতীয় সমাজ ছিল ইউরোপীয় সামন্ত পর্যায়ের চেয়েও নিম্নমানের।
ঔপনিবেশিক ইতিহাসচর্চার বিভিন্ন রূপ: ভারতে ঔপনিবেশিক ইতিহাসচর্চার মধ্য দিয়ে অতীত সমাজ ও সভ্যতার নানা বিবরণ পাওয়া যায়।
প্রশাসনিক কর্মচারীদের অভিজ্ঞভানির্ভর : ঔপনিবেশিক শাসনের প্রথমদিকে ওয়াটস, বোল্টস, ওরমে প্রমুখ ব্রিটিশ প্রশাসকগণের একপেশে ইতিহাসচর্চায় স্থান পেয়েছে ভারতের পশ্চাৎপদ, অনুন্নত, কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজ-সভ্যতার বিভিন্ন দিক।
সাম্রাজ্যবাদী দৃষ্টিভঙ্গিনির্ভর : উইলিয়ম হান্টার-সহ বিভিন্ন ঐতিহাসিক তাঁদের ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ভালো দিকগুলি তুলে ধরেছেন।
ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গিনির্ভর: কোলব্রুক, ম্যাক্সমুলার প্রমুখ ঐতিহাসিক ভারতের প্রাচীন ধর্মগ্রন্থগুলির ভিত্তিতে ভারতীয় ইতিহাসচর্চায় প্রবৃত্ত হয়েছিলেন। ‘The Sacred Book of the East’ গ্রন্থের দ্বারা ম্যাক্সমুলার সংস্কৃত-সহ অন্যান্য ভারতীয় ভাষায় লেখা ধর্মনির্ভর সাহিত্যের সঙ্গে সমগ্র বিশ্বের পরিচয় করান।
সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গিনির্ভর: সাম্প্রদায়িক ভাবনার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে জেমস মিল তাঁর ‘The History of British India’ গ্রন্থে ভারতের ইতিহাসকে হিন্দু যুগ, মুসলিম যুগ ও ব্রিটিশ যুগে ভাগ করেছেন।
ইতিহাস রচনার নানান উদ্যোগ: ভারতের অতীত ইতিহাসচর্চায় সর্বপ্রথম উদ্যোগী হন ওয়ারেন হেস্টিংস। এ ছাড়া এশিয়াটিক সোসাইটি এবং ফোর্ট উইলিয়ম কলেজের প্রতিষ্ঠাও ভারতীয় ইতিহাসচর্চায় গতির সঞ্চার করেছিল। ইতিহাসমালা, রাজাবলী ইত্যাদি হল উল্লেখযোগ্য ইতিহাস গ্রন্থ।
উল্লেখযোগ্য ইতিহাস গ্রন্থ রচনা: জেমস মিলের ‘The History of British India’, জন ম্যালকমের ‘The Political History of India, from 1784 to 1823’, উইলিয়ম হান্টারের ‘The Annals of Rural Bengal’, ভিনসেন্ট স্মিথের ‘The Early History of India’ ইত্যাদি হল ঊনবিংশ-বিংশ শতকে রচিত বিখ্যাত ইতিহাস গ্রন্থসমূহ।