হিমবাহ ও জলধারার মিলিত সঞ্চয়কার্যের ফলে সৃষ্ট প্রধান ভূমিরূপগুলির চিত্রসহ বর্ণনা দাও

হিমবাহ ও জলধারার মিলিত সঞ্চয়কার্যের ফলে সৃষ্ট প্রধান ভূমিরূপগুলির চিত্রসহ বর্ণনা দাও
হিমবাহ ও জলধারার মিলিত সঞ্চয়কার্যের ফলে সৃষ্ট প্রধান ভূমিরূপগুলির চিত্রসহ বর্ণনা দাও।
হিমরেখার নীচে হিমবাহ গলে ছোটো ছোটো অস্থায়ী জলধারার সৃষ্টি হয়। এই সমস্ত জলধারা হিমবাহজাত পদার্থগুলিকে বহন করে দূরবর্তী স্থানে সঞ্চয় করে। একে হিমবাহ জলধারা সঞ্চয় বা নদী হৈমবাহিক সঞ্জয় (Glacio-fluvial Deposition) বলে। এই সঞ্চয়কার্যের ফলে গড়ে ওঠা উল্লেখযোগ্য ভূমিরূপগুলি হল –

বহিঃবিধৌত সমভূমি (Outwash Plain)

পর্বতের পাদদেশে হিমবাহবাহিত নুড়ি, পাথর, কাদা, বালি প্রভৃতি জমা হয়ে অনেক সময় এক বিশাল সমতল ভূমির সৃষ্টি করে। এরূপ সমভূমিকে বহিঃবিধৌত সমভূমি বা (Outwash Plain) বলে। অনেক সময় এই ধরনের সমভূমির কোনো গর্তে হিমবাহগলা জল জমে হ্রদের সৃষ্টি হয়।

উদাহরণ: উত্তর আমেরিকার কানাডা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এ জাতীয় সমভূমি দেখতে পাওয়া যায়।

এসকার (Esker)

অধিকাংশ হিমবাহের তলদেশ দিয়ে হিমবাহ গলিত জল স্রোতের আকারে বয়ে যায়। ফলে, হিমবাহের তলদেশে সেই স্রোতের প্রবাহপথ বরাবর একটি সুড়ঙ্গের সৃষ্টি হয়। কালক্রমে এই সুড়ঙ্গটি নুড়ি, বালি, পলি, কাঁকর ইত্যাদি হিমগ্রাব দ্বারা ভরাট হয়ে দীর্ঘ, অনুচ্চ, আঁকাবাঁকা শৈলশিরার মতো আকৃতিবিশিষ্ট ভূমিরূপ গঠন করে। স্ক্যান্ডিনেভিয়ায় একে এসকার (Eskar) বলে।

হিমবাহ যতক্ষণ কোনো অঞ্চলে থাকে ততক্ষণ এসকার দেখা যায় না। হিমবাহ গলে গেলে এসকার উন্মুক্ত হয়ে পড়ে। এগুলি কয়েক কিমি থেকে কয়েকশো কিমি লম্বা হয়। এগুলি 5 থেকে 50 মিটার উঁচু হয় এবং উপত্যকার ঢাল বরাবর প্রসারিত হয়।

উদাহরণ: ফিনল্যান্ডের ‘পুনকাহারয়ু’ একটি বিখ্যাত এসকার।

বোল্ডার-ক্লে ও টিল (Boulder Clay and Till)

হিমবাহ গলে গেলে হিমবাহের সঙ্গে বাহিত প্রস্তরখণ্ড ও সূক্ষ্ম শিলাচূর্ণ স্থানে স্থানে সঞ্চিত হয়। এইরূপ ইতস্তত সঞ্চিত অবক্ষেপকে বোল্ডার-ক্লে ও টিল বলে। সাধারণত বোল্ডার-ক্লের ক্ষেত্রে প্রস্তরখণ্ড এবং টিলের ক্ষেত্রে শক্ত কাদার প্রাধান্য থাকে।

উদাহরণ:
উত্তর ইউরোপের বহু রাষ্ট্রে এরূপ অবক্ষেপ দেখা যায়।

কেম ও কেমমঞ্চ (Kame & Kame Terrace)

নিশ্চল হিমরাশি গলে গিয়ে উৎপন্ন নদী দ্বারা গঠিত পিণ্ডাকৃতি ঢিবিকে কেম বলে। পর্বতের পাদদেশে হিমবাহ গলা জল জমে অনেক সময় হ্রদের সৃষ্টি হয়। হিমবাহ ও হিমবাহ গলা জলধারা বাহিত নুড়ি, পাথর, বালি, কাদা প্রভৃতি এই হ্রদে জমা হয়ে বদ্বীপের মতো ত্রিকোণাকার ভূমিরূপ সৃষ্টি করে, একে কেম বলে। হিমবাহ উপত্যকার দুই পাশে যখন কেম সৃষ্টি হয়, তখন তাকে কেমমঞ্চ বলে।

উদাহরণ:
ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জের নরফেকের গ্লাভেন উপত্যকায় কেম ও কেমমঞ্চ দেখতে পাওয়া যায়।

নব (Knob)

অনেক সময় হিমবাহগলা জলপ্রবাহের দ্বারা প্রান্ত গ্রাবরেখার মধ্যস্থ নুড়ি, বালি, পাথর, কাদা, কাঁকর প্রভৃতি জমা হয়ে ছোটো ছোটো ঢিবির মতো ভূমিরূপ গড়ে তোলে, একে নব বলে। ইউরোপের উত্তরাংশে বহু ‘নব’ ও ‘কেটল’ পাশাপাশি দেখা যায়।

কেউল ও কেটল হ্রদ (Kettle or Kettle Lake)

বহিঃবিধৌত সমভূমির ওপর অনেকসময় কোনো ফাটলের মধ্যে গতিহীন বরফের চাঁই অবক্ষেপ দ্বারা চাপা পড়ে যায়। পরে বরফ গলে গেলে ভূপৃষ্ঠে যে গর্তের সৃষ্টি হয়, তাকে কেটল বলে। এই কেটলে জল সঞ্চিত হলে কেটল হ্রদ গঠিত হয়।

উদাহরণ: স্কটল্যান্ডের অর্কন দ্বীপে কেটল হ্রদ দেখা যায়।

ভ্যালিট্রেন (Valley train)

নদীর দ্বারা ব্যবচ্ছিন্ন বহিঃবিধৌত সমভূমিকে ভ্যালিট্রেন বলে।

ড্রামলিন (Drumlin)

‘ড্রামলিন’ শব্দের আক্ষরিক অর্থ ‘ঢিবি’। হিমবাহ অধ্যুষিত অঞ্চলে পর্বতের পাদদেশে বোল্ডার-ক্লে (Boulder-Clay) দ্বারা গঠিত দীর্ঘায়ত অর্ধাকার ডিমের মতো (Elongated Oval shaped) বা উলটানো নৌকার মতো একরকম ভূমিরূপ গড়ে ওঠে, একে বলে ড্রামলিন। ড্রামলিন সর্বদা ঝাঁকে ঝাঁকে দেখা যায়। আকাশ থেকে বা অনেক উঁচু স্থান থেকে ড্রামলিনগুলিকে ‘ঝুড়ি ভরতি ডিম’-এর মতো দেখায়। তাই ড্রামলিনবহুল অঞ্চলকে “Basket of Eggs Topography” বলা হয়।

উদাহরণ: উত্তর আমেরিকার অন্টারিও হ্রদের দক্ষিণে মধ্য নিউইয়র্ক প্রদেশে 15,000 বর্গকিমি এলাকার মধ্যে প্রায় 10,000টি ড্রামলিন অবস্থান করছে।

Related Keywords :
হিমবাহ ও জলধারার মিলিত কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ চিত্র সহ, হিমবাহ ও জলধারার মিলিত কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ চিএ সহ, বায়ু ও জলধারার মিলিত কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ, হিমবাহ ও জলধারার মিলিত সঞ্চয় কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ চিত্র সহ, হিমবাহের সঞ্চয় কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ চিএ সহ, হিমবাহ ক্ষয় কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ, বহিঃবিধৌত সমভূমি চিত্র, বায়ুর ক্ষয় ও সঞ্চয় কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ গুলি আলোচনা করো

Leave a Comment