হিমবাহের সঞ্চয়কার্যের ফলে গঠিত যেকোনো তিনটি ভূমিরূপের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও

হিমবাহের সঞ্চয়কার্যের ফলে গঠিত যেকোনো তিনটি ভূমিরূপের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও

হিমবাহের সঞ্চয়কার্যের ফলে গঠিত যেকোনো তিনটি ভূমিরূপের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও
হিমবাহের সঞ্চয়কার্যের ফলে গঠিত যেকোনো তিনটি ভূমিরূপের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও।
হিমবাহের ক্ষয়জাত পদার্থগুলি A উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে এবং B পর্বতের পাদদেশে সঞ্চিত হয়ে বিভিন্ন প্রকার ভূমিরূপ গঠন করে

উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে সঞ্চয়জাত ভূমিরূপ

গ্রাবরেখা (Moraine)

অর্থ: ‘মোরেন’ (গ্রাবরেখা) একটি প্রাচীন ফরাসি শব্দ, যার অর্থ মাটি ও প্রস্তর দ্বারা গঠিত তীর।

সংজ্ঞা: উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে হিমবাহের ক্ষয়জাত পদার্থগুলি হিমবাহের সঙ্গে বাহিত হয়ে উপত্যকার বিভিন্ন অংশে সঞ্চিত হয়। এরূপ সঞ্চয়কে গ্রাবরেখা বলে। উদাহরণ তিস্তা নদীর উচ্চ অববাহিকায় লাচেন ও লাচুং অঞ্চলে নানা ধরনের গ্রাবরেখা দেখা যায়।

শ্রেণিবিভাগ :
গ্রাবরেখাগুলিকে সাধারণত দু-ভাগে ভাগ করা হয়। যথা-

অবস্থান অনুসারে গ্রাবরেখার শ্রেণিবিভাগ

(i) প্রান্ত গ্রাবরেখা (Terminal Moraine): হিমবাহের সামনে বা শেষপ্রান্তে সঞ্চিত গ্রাবরেখা।

(ii) পার্শ্ব গ্রাবরেখা (Lateral Moraine) : হিমবাহের উভয়পার্শ্বে সঞ্চিত গ্রাবরেখা।

(iii) ভূমি গ্রাবরেখা (Ground Moraine) : হিমবাহের নীচে উপত্যকার ভূমিভাগে সঞ্চিত গ্রাবরেখা।

(iv) মধ্য গ্রাবরেখা (Medial Moraine) : পাশাপাশি দুটি হিমবাহের মধ্যবর্তী স্থানে সঞ্চিত গ্রাবরেখা। (ⅳ) হিমাবদ্ধ গ্রাবরেখা (Englacial Moraine): হিমবাহের ফাটলের মধ্যে সঞ্চিত গ্রাবরেখা। (vi) হিমতল গ্রাবরেখা (Sub-glacial Moraine): পর্বতগাত্র ও হিমবাহের ফাটলের মধ্য দিয়ে প্রস্তরখণ্ড হিমবাহের তলায় পৌঁছলে, তাকে হিমতল গ্রাবরেখা বলে।

আকৃতি ও প্রকৃতি অনুসারে গ্রাবরেখার শ্রেণিবিভাগ

(i) বলয়ধর্মী গ্রাবরেখা (Lobate Moraine): হিমবাহের প্রান্তভাগে বলয়ের আকারে সঞ্চিত গ্রাবরেখাকে বলয়ধর্মী গ্রাবরেখা বলে।
 
(ii) অবিন্যস্ত গ্রাবরেখা (Push-pull Moraine) : হিমবাহের প্রান্তভাগে ইতস্তত বিক্ষিপ্তভাবে সঞ্চিত গ্রাবরেখাকে অবিন্যস্ত গ্রাবরেখা বলে।
 
(iii) রোজেন গ্রাবরেখা (Rogen Moraine) : গ্রাবরেখাগুলি একে অপরের ওপর সঞ্চিত হলে তাদের রোজেন গ্রাবরেখা বলে।
 

(iv) শুরায়িত সামুদ্রিক গ্রাবরেখা (Stratified Marine Moraine) : উপকূল অঞ্চলে হিমবাহ প্রসারিত হলে সমুদ্রের তলদেশে স্তরে স্তরে গ্রাবরেখা সঞ্চিত হয়। এদের স্তরায়িত সামুদ্রিক গ্রাবরেখা বলে।

পর্বতের পাদদেশে সঞ্চয়জাত ভূমিরূপ

ড্রামলিন (Drumlin)

সংজ্ঞা: ‘ড্রামলিন’ শব্দের আক্ষরিক অর্থ ‘ঢিবি’ (Mound)। হিমবাহ অধ্যুষিত অঞ্চলে বিভিন্ন আকৃতির ক্ষয়জাত পদার্থগুলি সঞ্চিত হয়ে উলটানো নৌকা বা চামচের আকৃতির ঢিবি গড়ে ওঠে। একে ড্রামলিন বলে।

শ্রেণিবিভাগ: ড্রামলিন প্রধানত দু-প্রকার। যথা-

(i) গ্রাবসঞ্চিত ড্রামলিন (Morainic Drumlin):
এগুলি অপেক্ষাকৃত সূক্ষ্ম পদার্থ (গ্রাব) দ্বারা গঠিত ড্রামলিন।

(ii) শিলা ড্রামলিন (Rock Drumlin):
এই ড্রামলিনগুলির সম্মুখভাগে শিলা সঞ্চিত হয় এবং পিছনের দিকে গ্রাব সঞ্চিত হয়।

বৈশিষ্ট্য:
(ⅰ) ড্রামলিনগুলির অক্ষ (Axis) হিমবাহের প্রবাহের দিকে সমান্তরালভাবে অবস্থান করে। (ii) ড্রামলিনের হিমবাহের দিকের অংশটি অমসৃণ ও বিপরীত দিকের অংশটি মসৃণ হয়। (iii) ড্রামলিনগুলি 1 – 2 কিমি দীর্ঘ ও 400 – 600 মিটার প্রশস্ত হয়। (iv) ড্রামলিনের উচ্চতা সাধারণত 15 – 30 মিটার হয়ে থাকে। (v) ড্রামলিন সর্বদা ঝাঁকে ঝাঁকে দেখা যায়। তাই ড্রামলিন ভরতি অঞ্চলকে ‘ঝুড়ি ভরতি ডিমের ন্যায় ভূপ্রকৃতি’ (Basket of Eggs Topography) বলে। (vi) বহু ড্রামলিন একত্রে থাকলে তার মধ্যবর্তী অংশে জল জমে জলাভূমি সৃষ্টি হয়।

 

উদাহরণ- স্কটল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডে প্রচুর ড্রামলিন দেখা যায়।

আগামুক (Erratic)

হিমবাহ দ্বারা বাহিত বিভিন্ন আকৃতির শিলাখণ্ড অনেক সময় হিমবাহের পাদদেশে এমন স্থানে এসে সঞ্চিত হয় যেখানে, ওই ধরনের শিলা দেখা যায় না। অর্থাৎ বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে এই শিলাখণ্ড যেন ভিনদেশি। এরূপ শিলাখণ্ডকে আগামুক বা (ল্যাটিন শব্দ Erraticus = Wandering) ভ্রমিতশিলা বলে।

উদাহরণ- কাশ্মীরের পহেলগাঁও অঞ্চলে, কানাডার অ্যালবার্ট রাজ্যে আগামুক দেখা যায়।

বৈশিষ্ট্য: (ⅰ) আগামুকের শিলাধর্মের সঙ্গে স্থানীয় শিলাধর্মের কোনো মিল থাকে না। (ii) আগামুকগুলি সাধারণত কঠিন ও শিলায় গঠিত হয়।

Related Keywords :
হিমবাহের সঞ্চয় কার্যের ফলে সৃষ্ট তিনটি ভূমিরূপ চিত্রসহ বর্ণনা দাও, হিমবাহের ক্ষয় কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ, হিমবাহের সঞ্চয় কার্যের ফলে গঠিত বিভিন্ন প্রকার গ্রাবরেখার সচিত্র বর্ণনা দাও, হিমবাহ ও জলধারার মিলিত কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ, পর্বতের পাদদেশে হিমবাহের সঞ্চয় গঠিত ভূমিরূপ হল, বায়ুর সঞ্চয় কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ, হিমবাহের সঞ্চয় কার্যের ফলে সৃষ্ট দীর্ঘ, হিমবাহের সঞ্চয় কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ চিত্র

Leave a Comment