‘হিংস্র প্রলাপের মধ্যে/সেই হোক তোমার সভ্যতার শেষ পুণ্যবাণী।’-কার প্রতি, কে এ-কথা বলেছেন? ‘হিংস্র প্রলাপ’-এর অর্থ কী? ‘সভ্যতার শেষ পুণ্যবাণী’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন? |
মানবতাবাদী কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর ‘আফ্রিকা’ কবিতায় যুগান্তের কবির প্রতি এ-কথা বলেছেন।
আফ্রিকা মহাদেশটি উদ্ভ্রান্ত সেই আদিম যুগে প্রথমে অবস্থান করত পৃথিবীর পূর্বদিকে। বুদ্র সমুদ্রের বাহু সেখান থেকে তাকে ছিনিয়ে নিয়ে গিয়ে দূরের এক জায়গায় বেঁধে দেয়-
সেখানে নিভৃত অবকাশে আফ্রিকা গড়ে তুলেছিল নিজেকে। সেই সময়ে সভ্যসমাজের সভ্য মানুষদের কাছে অপরিচিত ছিল আফ্রিকার মানবরূপ। তারা তখন আফ্রিকাকে দেখত ‘উপেক্ষার আবিল দৃষ্টিতে’। তাই যেন সভ্যদেশের তথাকথিত সভ্য দাসব্যবসায়ীরা লোহার হাতকড়ি নিয়ে চলে আসে আফ্রিকায়। তাদের নিষ্ঠুর অত্যাচারে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে আফ্রিকা। সেখানকার মানুষের চোখের জলে, রক্তের ধারায় সিক্ত হয়ে যায় অরণ্যপথের ধুলো। সেভাবেই নিষ্ঠুর দাসব্যবসায়ীরা দাসত্বের চিরচিহ্ন দেগে দিয়ে যায় আফ্রিকার অপানিত ইতিহাসে। কবি রবীন্দ্রনাথের মতে যা ছিল বড়োই পাপের, অন্যায়ের। শতাব্দীর শেষপ্রান্তে পৌঁছে-
এবং আশঙ্কা দেখা দিয়েছে অশুভ দিনের, এই অবস্থার জন্য দায়ী করা চলে সভ্যসমাজের মানুষের পূর্বকৃত পাপকে। সেই পাপের প্রায়শ্চিত্ত করবার জন্য ‘মানহারা মানবী’ আফ্রিকার দ্বারে দাঁড়িয়ে ‘ক্ষমা করো’ বলা উচিত বলে রবীন্দ্রনাথের মনে হয়েছে। সেই ‘ক্ষমা করো’ কথাটিই সভ্যতার শেষ পুণ্যবাণী হয়ে উঠবে বলে কবির বিশ্বাস। -এটাই হল ‘সভ্যতার শেষ পুণ্যবাণী’ হয়ে উঠবে বলে কবির বিশ্বাস। এটাই হল ‘সভ্যতার শেষ পুণ্যবাণী’র অর্থ।