হিংস্র প্রলাপের মধ্যে/সেই হোক তোমার সভ্যতার শেষ পুণ্যবাণী।- ‘সভ্যতার শেষ পুণ্যবাণী’ হিসেবে কবি কোন বিষয়টিকে উল্লেখ করেছেন? উক্তিটির মধ্য দিয়ে কবি-মানসিকতার বিশেষ দিকটিকে ফুটিয়ে তোলো।

হিংস্র প্রলাপের মধ্যে/সেই হোক তোমার সভ্যতার শেষ পুণ্যবাণী।- 'সভ্যতার শেষ পুণ্যবাণী' হিসেবে কবি কোন বিষয়টিকে উল্লেখ করেছেন? উক্তিটির মধ্য দিয়ে কবি-মানসিকতার বিশেষ দিকটিকে ফুটিয়ে তোলো
হিংস্র প্রলাপের মধ্যে/সেই হোক তোমার সভ্যতার শেষ পুণ্যবাণী।- ‘সভ্যতার শেষ পুণ্যবাণী’ হিসেবে কবি কোন বিষয়টিকে উল্লেখ করেছেন? উক্তিটির মধ্য দিয়ে কবি-মানসিকতার বিশেষ দিকটিকে ফুটিয়ে তোলো।
মানবতার পূজারি কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর ‘আফ্রিকা’ কবিতায় ‘সভ্যতার শেষে পুণ্যবাণী’ হিসেবে-‘ক্ষমা করো’ পদবন্ধকে বিশেষভাবে চিহ্নিত করেছেন।

কবি সাম্রাজ্যবাদীদের আগ্রাসী মনোভাবকে মনেপ্রাণে মেনে নিতে পারেননি। আলোচ্য কবিতাতেও কবি উচ্চারণ করলেন-


“সভ্যের বর্বর লোভ

নগ্ন করল আপন নির্লজ্জ অমানুষতা।”

পাশাপাশি আফ্রিকার ‘ভাষাহীন ক্রন্দনে’ ‘বাষ্পাকুল অরণ্যপথে’, ‘রক্তে অশ্রুতে মিশে’ অস্পৃষ্ট ধূলি যে ‘পঙ্কিল’ হল সেই রূপান্তরের দিকেও অঙ্গুলি নির্দেশ করেছেন। বলা চলে আফ্রিকার ইতিহাসে সভ্য মানুষের হননোদ্যত রূপের দ্বারা নীরব প্রকৃতির যে অপমান, সেই সত্য কবির অন্তরকে ব্যথিত করেছে।

কবি বিস্মৃত হননি যুদ্ধক্ষত রণরক্ত ক্লিন্ন তাঁর বর্তমান সময়কে। তাই ক্লান্তদর্শী কবি দেখলেন পশ্চিম দিগন্তে অর্থাৎ ইউরোপের দেশে দেশে ‘প্রদোষকাল’ অর্থাৎ সন্ধ্যার সমাগম ঘটেছে এবং সেখানে ‘ঝঞ্ঝাবাতাসে রুদ্ধশ্বাস’। তিনি চাক্ষুষ করেছেন ‘গুপ্ত গহ্বর থেকে পশুরা বেরিয়ে এল’ এবং ‘অশুভ ধ্বনিতে’ তারাই যেন ঘোষণা করল দিন সমাপনের দিকটি। তিনি বিশ্বাস করতেন যুদ্ধ ও হিংস্র পশুশক্তির সাহায্যে জগতে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না।

ভারতীয় সভ্যতার ভারী কথক ও বিবেকী উচ্চারক সাম্রাজ্য মদগবীর আক্রমণের বিরুদ্ধে ‘আসন্ন সন্ধ্যার শেষ রশ্মিপাতে’ আবেগঋদ্ধ উচ্চারণে বুদ্ধদেবের ‘মা হিংসী’ বাণীর ধারাবাহিকতায় সমুপস্থিত করবেন-‘ক্ষমা করো’। কেন-না, হিংস্র প্রলাপের মধ্যে চিরজীবিতের জয়গানে উজ্জ্বল এই উচ্চারণই হবে সভ্যতার শেষ পুণ্যবাণী। আসলে এইভাবেই কবি যেন কবিতাটিতে ভারতীয় সৌষম্য ও শান্তির বার্তার শিল্পীত প্রকাশ ঘটাতে চেয়েছেন।

Leave a Comment