“সেখানে নিভৃত অবকাশে তুমি/সংগ্রহ করছিলে দুর্গমের রহস্য” – কে, কীভাবে দুর্গমের রহস্য সংগ্রহ করছিল? |
মানবতা দ্যোতিত কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘পত্রপুট’ কাব্যগ্রন্থের ষোলো সংখ্যক কবিতা ‘আফ্রিকা’-য় তাঁর কবি-চেতনার ও অন্তর্শায়িত ক্ষোভের সরব প্রকাশ ঘটেছে। আলোচ্য কবিতায় কবির স্মরণপথে জাগ্রত হয়েছে প্রাগৈতিহাসিক, তমসাবৃত সভ্যতার সূচনা পর্ব। সেই সময় সর্ব-নির্মাতা নিজের সৃষ্টির প্রতি অসীম অসন্তোষে ঘন-ঘন মাথা নেড়ে তাকে বিধ্বস্ত করতে থাকে। ফলে আফ্রিকা প্রাচী ধরিত্রী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে রুদ্র সমুদ্রের বাহুডোরের মাঝে বনস্পতির নিবিড় পাহারায় ‘কৃপণ আলোর অন্তঃপুরে’ আশ্রয় নেয়।
বনস্পতির যে নিবিড়ঘন স্নেহাঞ্চলে আফ্রিকা অবস্থান করতে থাকে সেখানে সে লাভ করে অনিঃশেষ প্রশান্তি ও অনন্ত অবকাশ। সেই অনন্ত অবকাশের মাঝেই ছায়াচ্ছন্ন অবস্থানে সে লাভ করতে থাকে দুর্গমের রহস্য। বনস্পতির নিবিড়তায় ওই অরণ্যাঞ্চল হয়ে ওঠে দুর্গম, ফলে জলস্থল ও আকাশের মধ্যে প্রত্যক্ষ আলাপন সম্ভব হত না-এক দুর্বোধ্য সংকেত যেন বিস্তারিত হত স্থান থেকে স্থানান্তরে। কবির মনে হয়, “প্রকৃতির দৃষ্টি-অতীত জাদু/মন্ত্র জাগাচ্ছিল” আফ্রিকার ‘চেতনাতীত মনে’। এই দুর্বোধ্য রহস্যসমূহ আফ্রিকাকে অনেক বেশি ভীষণ রূপ দান করেই তার দুর্গমের রহস্য সংগ্রহ সম্পূর্ণ করে। রহস্যাবৃত আফ্রিকা বিরূপের ছদ্মবেশ ধারণ করে নিজেকে উগ্র, প্রচণ্ড ও বিভীষিকাময় করে পরিচায়িত করতে থাকে।