“সেকেন্ড প্রাইজ নেওয়া আমি বিনিথ মাই ডিগনিটি বলে মনে করি।”— বক্তার এমন খেদোক্তির কারণ কী? শেষ পর্যন্ত সে নিজের ‘ডিগনিটি’ কীভাবে বজায় রেখেছিল গল্প অবলম্বনে লেখো। |
উদ্ধৃত অংশটি তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত ‘চন্দ্ৰনাথ” নামক গল্প থেকে নেওয়া হয়েছে। উক্তিটির বক্তা উক্ত গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র চন্দ্রনাথ। বিদ্যালয়ের পরীক্ষায় চন্দ্রনাথ দ্বিতীয় হয়েছে, এর পূর্বে কখনোই সে প্রথম বই দ্বিতীয় হয়নি। এই ঘটনা চন্দ্রনাথ কিছুতেই আত্মস্থ করতে পারেনি। চন্দ্রনাথের ধারণা এমনটা হওয়া কখনোই স্বাভাবিক নয়। চন্দ্রনাথকে পিছনে ফেলে সেবার সহপাঠী হীরু প্রথম হয়েছে। চন্দ্রনাথ মনে করেছে এক্ষেত্রে তাকে বঞ্চিত করেই হীরুকে প্রথম করা হয়েছে। অঙ্কের পরীক্ষায় হীরু তিনটি অঙ্ক চন্দ্রনাথের খাতা থেকে টুকেছিল। স্কুলের জনৈক সহশিক্ষক হীরুকে প্রাইভেট পড়াবার জন্য হীরুর কাছে প্রশ্নপত্রও গোপন রাখতে পারেননি। আরও দু-একজন শিক্ষকমহাশয় উত্তরপত্র মূল্যায়নের সময় হীরুকে যোগ্যতার তুলনায় বেশি নম্বর পাইয়ে দিয়েছেন বলে চন্দ্রনাথের ধারণা। হীরুর কাকা স্কুলের সম্পাদক বলে সে বিশেষ কিছু সুবিধা পেয়েছে বলেও চন্দ্রনাথের মনে হয়েছে। তাই যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও চন্দ্রনাথ প্রথম হতে পারেনি। এ কারণেই চন্দ্রনাথ প্রশ্নের এই খেদোক্তি করেছেন।
‘চন্দ্ৰনাথ’ গল্প থেকে আমরা জানতে পারি যে দ্বিতীয় পুরস্কার গ্রহণ করাটা নিজের ডিগনিটি তথা সম্মানের প্রতি অমর্যাদাকর মনে করে চন্দ্রনাথ উক্ত পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করে বিদ্যালয়কে পত্র দেয়। প্রধান শিক্ষক মহাশয়ের কাছ থেকে এই সংবাদ জানতে পেরে চন্দ্রনাথের দাদা নিশানাথবাবু ভাইকে তার পত্র প্রত্যাহার করার নির্দেশ দিলেও চন্দ্রনাথ সেই নির্দেশ মানতে অস্বীকার করেন। এমনকি এর জন্য সংসার থেকে তাকে বিচ্ছিন্ন হতেও হয়। হীরুর কাকার দেওয়া বিশেষ পুরস্কারের প্রস্তাবও সে অস্বীকার করে এবং হীরুর স্কলারশিপ পাওয়ার আনন্দে অনুষ্ঠিত প্রীতিভোজের আমন্ত্রণও চন্দ্রনাথ ফিরিয়ে দেয়। এভাবেই চন্দ্রনাথ তার ‘ডিগ্নিটি’ শেষ পর্যন্ত বজায় রেখেছিল।