“সত্যিই তপনের জীবনের সবচেয়ে সুখের দিনটি এল আজ?”-তপনের জীবনের সবচেয়ে সুখের দিন কোন্টি? ওই সুখের দিনের শেষ পরিণতি কী ঘটেছিল? |
আশাপূর্ণা দেবীর লেখা ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পের তপন মামাবাড়ির থেকে ফেরার পর তার প্রথম গল্পটি ছাপার অক্ষরে প্রকাশ পাওয়ার আশা প্রায় ছেড়ে দিয়েছিল, ঠিক সেই সময় হঠাৎ একদিন ছোটোমাসি আর মেসোমশাই তাদের বাড়িতে বেড়াতে আসেন। তাদের সঙ্গে ছিল একটি ‘সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকা, যে পত্রিকাতে তপনের লেখা প্রথম গল্পটি ছোটো মেসোমশাই ছেপে দিতে চেয়েছিলেন।
তপন নিজের লেখা গল্প ছাপার অক্ষরে আঁটোসাঁটো চেহারায় দেখার আশায় বিভোর হয়েছিল। আর তার সেই স্বপ্ন বাস্তবে ঘটতে চলেছে এমন বিশ্বাস হয় ছোটোমেসোর হাতে ‘সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকা দেখে। অর্থাৎ, নিজের লেখা পত্রিকায় ছাপার অক্ষরে দেখার দিনটিই ছিল তপনের কাছে ‘সবচেয়ে সুখের দিন’।
‘সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকাতে তপনের লেখা গল্পটি ছাপা হওয়াটা তার কাছে ছিল অলৌকিক ঘটনার সমতুল্য। তপনের লেখা ‘প্রথম দিন’ গল্পটি ‘সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকাতে দেখে তাদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে শোরগোল পড়ে যায়। সকলেই তপনের লেখার প্রশংসায় যখন পঞ্চমুখ হয়ে ওঠে, তখন মেসোমশাই সবার সামনে বলে ফেলেন-গল্পটা অল্প একটু সংশোধন করতে হয়েছে, কারণ তপনের লেখাতে পরিপক্বতার অভাব রয়েছে।
এই কথা শুনে বাড়ির সকলেই বুঝে নেন যে, ছোটো মেসোমশাইয়ের কারেকশান ও সুপারিশ ছাড়া তপনের লেখা গল্প পত্রিকাতে স্থান পেত না। তার বাবা ও মেজোকাকা তাকে উৎসাহ দেওয়ার পরিবর্তে মেসোমশাইয়ের মহত্ত্বের কথা বারবার উত্থাপন করেন। তপনের মায়ের অনুরোধে নিজের লেখা গল্প পড়তে গিয়ে তপন দেখে ছোটো মেসোমশাই গল্পটির আগাগোড়াই সংশোধন করে নতুন বাক্যে সাজিয়েছেন। অন্যরা বুঝতে না পারলেও নিজের লেখার এরকম পরিণতি দেখে তপনের চোখ জলে ভরে ওঠে। এভাবেই তপনের সবচেয়ে সুখের দিনটি এক মুহূর্তে ‘সবচেয়ে দুঃখের দিন’-এ পালটে যায়।