শঙ্খ ঘোষ প্রবন্ধ রচনা

শঙ্খ ঘোষ প্রবন্ধ রচনা
শঙ্খ ঘোষ প্রবন্ধ রচনা

ভূমিকা

বাংলা সাহিত্যের একজন যুগসচেতন এবং সংবেদনশীল সাহিত্যিক হলেন শঙ্খ ঘোষ। কেবল সাহিত্যিক নন, তিনি সাহিত্য-সমালোচকও বটে। বিশ শতকের ষাটের দশকে যে কয়েকজন তরুণ কবি ‘কৃত্তিবাস’ বা ‘শতভিষা’ পত্রিকাকে কেন্দ্র করে নতুন পথের দিশারী হলেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন এই কবি। তাঁর প্রকৃত নাম চিত্তপ্রিয় ঘোষ। বিশিষ্ট রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভের পাশাপাশি তাঁর সাহিত্যে স্থান পেয়েছে সময় সভ্যতা সমাজ এবং মানুষের কথা।

জন্ম ও বংশ পরিচয়

একাধারে কবি প্রাবন্ধিক এবং অধ্যাপক শঙ্খ ঘোষ অধুনা বাংলাদেশের অন্তর্গত চাঁদপুরে ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক নিবাস ছিল বরিশালে। পাবনা জেলার চন্দ্রপ্রভা বিদ্যাপীঠ থেকে ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। দেশভাগের সময় কলকাতায় চলে আসার পর, ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে আই এ এবং ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে বি এ পাস করেন। ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ হন।

কর্মজীবন

কর্মজীবনে প্রবেশের প্রারম্ভে শঙ্খ ঘোষ সিটি কলেজে অধ্যাপনায় নিযুক্ত হন। পরবর্তীকালে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা সাহিত্যে অধ্যাপনা করেছেন।

অধ্যাপনার পাশাপাশি বাংলা সাহিত্যের একজন স্বনামধন্য সাহিত্যিক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন কবি শঙ্খ ঘোষ। কখনও অন্তেবাসী মানুষদের হয়ে কলম ধরতে দেখা যায় তাঁকে। কখনও যুগযন্ত্রণায় ক্লিষ্ট এক মানুষের হাহাকার শোনা যায় তাঁর সাহিত্যে। আবার কখনও শৈশবে গিয়ে রেখে আসেন ‘সুপুরিবনের সারি’।

সাহিত্যিক জীবন

শঙ্খ ঘোষের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘দিনগুলি রাতগুলি’। এ ছাড়া, উল্লেখ্য ‘বাবরের প্রার্থনা’, ‘মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে’, ‘শবের উপর সামিয়ানা’, ‘ছন্দের ভিতর এত অন্ধকার’ ইত্যাদি।

কিশোর-কিশোরীদের রচিত গ্রন্থসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘অল্পবয়স কল্পবয়স’, ‘ছোট্ট একটা স্কুল’, ‘সুপুরিবনের সারি’ (উপন্যাস) ইত্যাদি।

শঙ্খ ঘোষ বিরচিত প্রবন্ধ গ্রন্থসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ‘কালের মাত্রা ও রবীন্দ্র নাটক’, ‘ছন্দের বারান্দা’, ‘নিঃশব্দের তর্জনী’, ‘নির্মাণ আর সৃষ্টি’ ইত্যাদি।

মৌলিক সাহিত্য রচনার পাশাপাশি কবি আন্তর্জাতিক কবিদের একাধিক কবিতা অনুবাদ করেছেন। নিকোলাস গ্যিয়েন, চেরাবান্তারাজু, পল রোবসন, টমাস স্টার্নস এলিয়ট, পাবলো নেরুদা প্রমুখ সেই তালিকার অন্তর্ভুক্ত।

পুরস্কারসমূহ

কবি শঙ্খ ঘোষ তাঁর সাহিত্যজীবনে একাধিক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। ‘সাহিত্য অকাদেমি’ (১৯৭৭), ‘রবীন্দ্র পুরস্কার’ (১৯৮৯)-সহ বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ভূষিত করেছে ‘দেশিকোত্তম’ (১৯৯৯) সম্মানে। ভারত সরকার তাঁকে ‘পদ্মভূষণ’ (২০১১) সম্মানে সম্মানিত করেছে। ২০১৫ খ্রিস্টাব্দে সাংবাদিক ও লেখকবৃন্দের বিশ্বফোরাম (WFJW) থেকে কবি অর্জন করেছেন ‘হল অফ ফেম’-এ লাইফ টাইম অ্যাচিভমেন্ট ‘সাহিত্য ব্রহ্ম’ সম্মান। 
“সব তো ঠিক করাই আছে। এখন কেবল বিদায় 
নেওয়া, 
সবার দিকে চোখ, 
যাবার বেলায় প্রণাম, প্রণাম!”

উপসংহার

‘কুন্তক’ ছদ্মনামের অন্তরালে যে কবি সাহিত্যসাধনায় জীবন সমর্পণ করেছিলেন, মারির গ্রাসে ২০২১ সালের ২১ এপ্রিল তিনিও ঢলে পড়লেন মৃত্যুর কোলে। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল উননব্বই বছর। কোভিডের সঙ্গে যুদ্ধশেষে অমরলোকে যাত্রা করলেন কবি শঙ্খ ঘোষ। যদিও বাংলা সাহিত্যসম্ভারে আপন প্রতিভার স্বাক্ষরে কবি শঙ্খ ঘোষ চির সমুজ্জ্বল থাকবেন, এ কথা বলাই বাহুল্য।

Leave a Comment