লেখক মানে কোনো আকাশ থেকে পড়া জীব না, তপনদের মতোই মানুষ।-উদ্ধৃতিটি কার লেখা কোন গল্পের অংশ? তপন কে? ‘লেখক’ মানে যে কোনো আকাশ থেকে পড়া জীব নয়, তপন তা কীভাবে বুঝতে পেরেছিল? |
উদ্ধৃতিটি সাহিত্যিক আশাপূর্ণা দেবীর লেখা ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পের একটি অংশ।
তপন হল ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পে উল্লিখিত একটি ছেলে, যে স্কুলে পড়ত এবং ছোটোমাসির বিয়ে উপলক্ষ্যে মামার বাড়িতে -র এসেছিল এবং গরমের ছুটি থাকায় সেখানে থেকে গিয়েছিল কয়েকদিন।
লেখকদের সম্পর্কে অদ্ভুত একটা ধারণা ছিল তপনের। সে ভাবত লেখকরা আর পাঁচজন সাধারণ মানুষ, বিশেষত তার বাবা, ছোটোমামা বা মেজোকাকুদের থেকে আলাদা মানুষ। কিন্তু তপন যখন জানতে পারে তার ছোটোমাসির বর অর্থাৎ নতুন মেসো অধ্যাপক তো অবশ্যই, আবার তিনি একজন লেখকও, তখন নতুন মেসো লেখক হিসাবে তার পর্যবেক্ষণের মধ্যে পড়ে যান। তপন লক্ষ করে-
(ক) কোনো উলটোপালটা নেই তার পূর্বভাবনার মতো লেখক মেসোর মধ্যে কোনো উলটোপালটা নেই, নেই অন্যরকমও।
(খ) বাবা-মামা-কাকাদের মতো তার বাবা, ছোটোমামা বা মেজোকাকুরা যেমন মানুষ, লেখক মেসোও তার বাইরে নন।
(গ) একই ধরনের কাজকর্ম অন্যেরা যেমন দাড়ি কামান, সিগারেট খান, খেতে বসে ‘আরে ব্যস, এত কখনো খাওয়া যায়?’ বলে অর্ধেক তুলিয়ে দেন, চান-ঘুমের সময় চান-ঘুম সারেন, লেখক মেসো সেসবই করেন।
(ঘ) ছোটোমামাদের মতো গল্প আড্ডা ছোটোমামাদের মতো লেখক মেসো বা নতুন মেসোও খবরের কাগজের সব কথা নিয়ে প্রবলভাবে গল্প ও তর্ক করেন আর শেষ পর্যন্ত ‘এ দেশের কিছু হবে না’ বলে সিনেমা দেখতে কিংবা বেড়াতে বেরিয়ে যান।
-নতুন মেসো বা লেখক মেসোকে কাছ থেকে দেখে এবং তাঁর এসব কাজকর্ম লক্ষ করেই তপন শেষ পর্যন্ত বুঝতে পারে, লেখক মানে কোন আকাশ থেকে পড়া জীব নন, এবং লেখকরাও তাদের মতোই একজন মানুষ।