রাশিয়ায় ভূমিদাস প্রথার অবসানের কারণ কী ছিল? |
ভূমিদাস প্রথা ছিল রাশিয়ার একটি প্রাচীন প্রথা এবং রাশিয়ার সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনের মূল ভিত্তি। ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে রাশিয়ায় ভূমিদাসের সংখ্যা ছিল প্রায় ৫ কোটি। তারা বিভিন্নভাবে মালিকদের দ্বারা শোষিত ও নিপীড়িত হত। রাশিয়ার জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডার ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দের ১৯ ফেব্রুয়ারি ‘মুক্তির ঘোষণাপত্র’ (Edict of Emancipation) দ্বারা রাশিয়া থেকে ভূমিদাস প্রথার উচ্ছেদ ঘটান। এ জন্য জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডারকে ‘মুক্তিদাতা জার’ (Tsar Liberator)
ভূমিদাস প্রথা অবসানের কারণ
রাশিয়ার জার দ্বিতীয় বলা হয়। এই ভূমিদাস প্রথা অবসানের অনেক কারণ ছিল। আলেকজান্ডারের ভূমিদাস প্রথার অবসান ঘটানো কোনো আকস্মিক ঘটনা নয়। এর পিছনের কারণগুলি হল-
ভূমিদাসের অপ্রয়োজনীয়তা
উনিশ শতকের শুরু থেকেই রাশিয়ায় শিল্পায়ন ঘটতে থাকে। দেশের নতুন নতুন কলকারখানার জন্য দক্ষ শ্রমিকের প্রয়োজন বেড়েছিল। পাশাপাশি ভূমিদাসদের প্রয়োজনীয়তা হ্রাস পাচ্ছিল।
ক্রিমিয়ার যুদ্ধে পরাজয়
ক্রিমিয়ার যুদ্ধে (১৮৫৪-৫৬ খ্রি.) পরাজয়ের পর ভূমিদাস প্রথার অপ্রয়োজনীয়তা আরও বৃদ্ধি পেয়েছিল। কারণ রুশ সেনাবাহিনী গড়ে উঠেছিল মূলত ভূমিদাসদের দিয়েই। এরা ছিল শারীরিক দিক থেকে দুর্বল ও জয়পরাজয় সম্পর্কে উদাসীন।
কৃষক বিদ্রোহ
ভূমিদাস প্রথা অবসানের ক্ষেত্রে জার শাসনের বিরুদ্ধে ভূমিদাসদের বিদ্রোহ একটি বড়ো কারণ ছিল। সরকারি নথির ভিত্তিতে সেমেভস্কি বলেছেন যে, ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দের আগে গত ৬০ বছরে রাশিয়াতে ৫৫০টি কৃষক বিদ্রোহ ঘটেছিল।
বুদ্ধিজীবীদের আন্দোলন
ভূমিদাস প্রথার অবসানে রুশ বুদ্ধিজীবী, কবি, সাহিত্যিক ও সাংবাদিকদের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। তাঁরা এই কুপ্রথার অবসানের জন্য বিভিন্নভাবে আন্দোলনে শামিল হয়েছিলেন। এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন- পুসকিন (Pushkin), টলস্টয় (Tolstoy), গোগোল (Gogol), তুর্গেনেভ (Turgenev) প্রমুখ।
জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডারের সদিচ্ছা
জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডার উপলব্ধি করেছিলেন যে, ভূমিদাস প্রথা যুগের অনুপযোগী এবং তা উচ্ছেদ করা প্রয়োজন। তিনি ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে মস্কোর এক সভায় বলেছিলেন, ‘নীচুতলা থেকে কবে দাসত্ব বিলোপের চেষ্টা হবে তার জন্য অপেক্ষা না করে উপরতলা থেকে বিলোপ করাই ভালো।’