রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আফ্রিকা’ কবিতাটির ভাববস্তু উল্লেখ করে তার নামকরণের সার্থকতা বিচার করো। |
শিল্প-সাহিত্যের ক্ষেত্রে বিষয়বস্তু, চরিত্র ও ব্যঞ্জনা-এ তিনটির যে-কোনো একটিকে কেন্দ্র করে নামকরণ করবার রীতি বিশেষভাবে প্রচলিত রয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আফ্রিকা’ কবিতাটির নামকরণকে সেই অর্থে বিষয়কেন্দ্রিক বলা যেতে পারে, আবার বলা যেতে পারে চরিত্রকেন্দ্রিকও। কবিতাটি পাঠ করলে আমরা দেখতে পাই-
ভাববস্তু
সৃষ্টির আদিমলগ্নেই উত্তাল সমুদ্র পৃথিবীর পূর্ব অংশ থেকে আফ্রিকাকে সরিয়ে নিয়ে গিয়ে বেঁধে দিয়েছিল গহন অরণ্যের সঙ্গে। সেখানে এই দেশটি যখন পরিচিত হচ্ছিল অরণ্য-প্রকৃতির দুর্জেয়তা ও শঙ্কার সঙ্গে, তখনই তথাকথিত সভ্যদেশের দাসব্যবসায়ীদের নিষ্ঠুরতা, অবজ্ঞা ও অপমান আছড়ে পড়েছিল সেখানে। আজকের দিনে পশ্চিমের দেশে সমস্যার শেষ নেই। সেই সমস্যা যেন আফ্রিকার প্রতি পূর্ব অবিচারের ফল বা পাপ। এই অবস্থায় পশ্চিমের সভ্য মানুষদের উচিত আফ্রিকার কাছে ক্ষমা চাওয়া। এটাই হল আলোচ্য কবিতার ভাববস্তু।
কেন্দ্রগত দিক
আফ্রিকার সৃষ্টি হওয়া, বেড়ে ওঠা এবং অপমানিত হওয়ার বিষয়কে কেন্দ্র করেই কবিতাটি রচনা করেছেন কবি রবীন্দ্রনাথ। কিন্তু পুরো কবিতায় আফ্রিকাকে ‘মানবরূপ’-এ কল্পনা করেছেন তিনি। ‘তুমি’ সম্বোধনে, ব্যবহারে-কথাবার্তায় তাকে ‘মানবী’ হিসেবে গড়েও তুলেছেন। সুতরাং সেদিক দিয়ে ‘আফ্রিকা’
কবিতায় আফ্রিকা হয়ে উঠেছে একটি চরিত্র এবং তাকে কেন্দ্র করেই কবির বক্তব্য আবর্তিত হয়েছে। কাব্যরসের দিক কবিতাটির যাবতীয় কাব্যরস গড়ে উঠেছে আফ্রিকাকে ঘিরেই। ‘আফ্রিকা’ দেশটির দুঃখকষ্টের সঙ্গে একাত্ম বোধ করেছেন কবি নিজেও। (গ)
-এসব কারণেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর কবিতাটির নাম রেখেছেন ‘আফ্রিকা’। এই নামকরণটি কবির উদ্দেশ্য এবং রীতিগত শর্তটুকু পুরণ করেছে বলেই আমাদের বিশ্বাস।