মৃত্তিকার শ্রেণিবিভাগ করো ও যে-কোনো দুটি মৃত্তিকার বৈশিষ্ট্য লেখো
মৃত্তিকার শ্রেণিবিভাগ করো ও যে-কোনো দুটি মৃত্তিকার বৈশিষ্ট্য লেখো। |
আমাদের বিশাল দেশ ভারতবর্ষে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের মাটি দেখতে পাওয়া যায়। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- পলিমাটি, কালো মাটি বা রেগুর মৃত্তিকা, লাল মাটি বা লোহিত মৃত্তিকা, ল্যাটেরাইট মাটি, মরু অঞ্চলের মাটি, পার্বত্য অঞ্চলের মাটি।
দুইপ্রকার মাটির বর্ণনা
পলিমাটি (Alluvial Soil)
অবস্থান: উত্তরপ্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, পাঞ্জাব, হরিয়ানা এবং গঙ্গা-শতদ্রু ও অসমের ব্রহ্মপুত্র নদী অববাহিকায় পলিমাটি দেখা যায়। ভারতের প্রায় 46% স্থানে পলিমাটি দেখা যায়।
বৈশিষ্ট্য: (i) নদীবাহিত পলি, বালি, কাদা সঞ্চিত হয়ে পলিমাটি সৃষ্টি হয়। (ii) পলিমাটি খুব উর্বর। (iii) ভারতে নবীন পলিমাটি খাদার ও প্রাচীন পলিমাটি ভাঙ্গর নামে পরিচিত। (iv) খাদার মাটি উর্বর এবং ভাঙ্গর মাটি অপেক্ষাকৃত অনুর্বর। (v) খাদার মাটির রং হালকা ধূসর বর্ণের এবং ভাঙ্গর মাটির রং গাঢ় ধূসর বর্ণের। (vi) গঠন অনুযায়ী খাদার মাটি তিনপ্রকার। যথা- বেলে মাটি, এঁটেল মাটি ও দোআঁশ মাটি। (vii) পলিমাটির জলধারণ ক্ষমতা খুব বেশি। (viii) পলিমাটিতে নাইট্রোজেন ও জৈব পদার্থের ঘাটতি দেখা গেলেও এই মাটি পটাশ ও চুনজাতীয় পদার্থে সমৃদ্ধ।
কৃষিকাজে প্রভাব: ধান, গম, পাট, আখ, ডাল, বিভিন্ন তৈলবীজ, মিলেট প্রভৃতি এই উর্বর মাটিতে খুব ভালো হয়।
কালো মাটি (Black Soil)
অবস্থান: দাক্ষিণাত্য মালভূমির গুজরাট, মহারাষ্ট্র ও মধ্যপ্রদেশের বেশিরভাগ অংশ এবং কর্ণাটক ও অন্ধ্রপ্রদেশের কিছু অংশে এই মাটি দেখা যায়। ভারতের প্রায় 17% অঞ্চল জুড়ে এই মাটি আছে।
বৈশিষ্ট্য : (i) লাভা থেকে সৃষ্ট ব্যাসল্ট শিলা ক্ষয় হয়ে এই মাটি উৎপন্ন হয়েছে। (ii) টাইটানিয়াম অক্সাইডের পরিমাণ খুব বেশি থাকায় এই মাটির রং কালো। তাই স্থানীয় নাম ‘রেগুর’ মৃত্তিকা। অনেকে কৃয়মৃত্তিকাও বলে থাকে। (iii) কাদা ও পলির ভাগ বেশি থাকে বলে এই মাটির জলধারণ ক্ষমতা খুব বেশি। (iv) এই মাটি খুব উর্বর। কারণ – এই মাটি পটাশ, চুন, লোহা, ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম, অ্যালুমিনিয়াম প্রভৃতি খনিজ পদার্থে সমৃদ্ধ। (ⅳ) এই মাটি জলে ভিজলে অত্যন্ত আঠালো প্রকৃতির হয় এবং শুকিয়ে গেলে ফাটলের সৃষ্টি হয়। (vi) এই মাটির কণাগুলি অত্যন্ত সূক্ষ্ম ও ঘনসন্নিবিষ্ট হয়। (vii) এই মাটিতে মন্টমোরিলোনাইট জাতীয় কাদার পরিমাণ বেশি থাকে।
কৃষিকাজে প্রভাব : এই মাটিতে কার্পাস তুলো চাষ সবচেয়ে ভালো হয়। তাই একে ‘কালো তুলো মাটি’ বলা হয়। এ ছাড়া আখ, চিনাবাদাম, তামাক, তৈলবীজ, জোয়ার প্রভৃতি ফসল চাষ হয়।
আরও পড়ুন – নাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য রচনা