মহাশ্বেতা দেবী রচিত ‘ভাত’ গল্পটির নামকরণের সার্থকতা আলোচনা করো – আজকের পর্বে মহাশ্বেতা দেবী রচিত ‘ভাত’ গল্পটির নামকরণের সার্থকতা আলোচনা করা হল।
মহাশ্বেতা দেবী রচিত ‘ভাত’ গল্পটির নামকরণের সার্থকতা আলোচনা করো
মহাশ্বেতা দেবী রচিত ‘ভাত’ গল্পটির নামকরণের সার্থকতা আলোচনা করো। |
নামকরণ হল যে-কোনো শিল্প বা সাহিত্যের অভ্যন্তরে প্রবেশের মূল চাবিকাঠি। এই নামকরণের মাধ্যমেই লেখক বা লেখিকা মূল বিষয়ের পূর্বাভাস দেন। আলোচ্য ‘ভাত’ গল্পের নামকরণ সাধারণভাবে বিষয়কেন্দ্রিক মনে হলেও এই ‘ভাত’-এর পিছনে লুকিয়ে আছে এক বৃহৎ ব্যঞ্জনা।
বিষয়কেন্দ্রিকতা
সুন্দরবনের বাদা অঞ্চলের বাসিন্দা উৎসব নাইয়া (উচ্ছব) প্রবল ঝড়জলের এক রাতে মাতলার বন্যায় তার স্ত্রী, পুত্র এবং কন্যাকে হারায়। শোকে বাস্তবজ্ঞানহীন উৎসব ত্রাণের খিচুড়ি খায়নি। শেষে প্রবল ভাতের খিদে পেটে নিয়ে দু-মুঠো ভাতের আশায় উৎসব কলকাতার বড়ো বাড়িতে আসে। সেখানে বুড়ো কর্তার মৃত্যুর প্রতিকারে আয়োজিত যজ্ঞের কাঠ কেটে দেওয়ার বিনিময়ে ভাতের বন্দোবস্ত হয় তার। কিন্তু উৎসব কাঠ কেটে দিলেও যজ্ঞ শেষ হওয়ার আগে বুড়ো কর্তার মৃত্যু হলে অশৌচ বাড়ির ভাত উৎসবকে খেতে দেওয়া হয় না। সমস্ত ভাত পথে ফেলে দেওয়ার ব্যবস্থা হয়। অভুক্ত উৎসব ভাতের এই অপচয় সহ্য করতে না পেরে মোটা চালের ভাতের ডেকচিটা নিয়ে পালিয়ে যায় এবং প্রাণ ভরে ভাত খেয়ে স্বর্গসুখ লাভ করে। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসে ডেকচি চুরির অপরাধে তাকে মারতে মারতে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। নিজের পরিজনদের কালীঘাটে শ্রাদ্ধ করার শখ অধরা থেকে যায় উৎসবের।
ব্যঞ্জনা
গল্পের পুরো বিষয়টি ভাতকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হলেও, পাশাপাশি দেখা যায় ‘ভাত’ গল্পে ভাত হয়ে ওঠে শ্রেণি বৈষম্যের প্রতীক। একদিকে বড়ো বাড়িতে অঢেল চাল, প্রতিদিন পাঁচরকম চালের ভাত রান্না হয়, রান্না করা ভাত পথে ঢেলে দেওয়া হয়, অপরদিকে উৎসব ভাতের অভাবে দীর্ঘদিন অভুক্ত থাকে তবু বিনা পরিশ্রমে তাকে দু-মুঠো ভাত দেয় না বড়ো বাড়ির লোকেরা, তাকে ভাত দেয় না তার ধনী মনিব সতীশ মিস্তিরি। এইভাবেই লেখিকা ‘ভাত’কে করে তোলেন শ্রেণি বৈষম্যের প্রতীক। তাই বিষয়কেন্দ্রিকতা ও ব্যঞ্জনাধর্মিতা দু-দিক থেকেই ‘ভাত’ গল্পটির নামকরণ সার্থক বলা চলে।