মধ্যগতিতে বা সমভূমি প্রবাহে নদীর কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপগুলির বর্ণনা করো

মধ্যগতিতে বা সমভূমি প্রবাহে নদীর কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপগুলির বর্ণনা করো
মধ্যগতিতে বা সমভূমি প্রবাহে নদীর কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপগুলির বর্ণনা করো।

নদীর মধ্যগতিতে সৃষ্ট ভূমিরূপসমূহ

মধ্যগতিতে নদী মূলত বহন কাজ করলেও এখানে কিছুটা পার্শ্বক্ষয় ও অবক্ষেপণও করে থাকে, যার ফলে নিম্নলিখিত ভূমিরূপ গঠিত হয় –

পলল ব্যজনী (Alluvial Fan)

মধ্যগতিতে নদীবাহিত পলি, বালি, কাদা প্রভৃতির সঞ্চয়ে যে হাতপাখার ন্যায় ভূমিরূপ সৃষ্টি করে, তাকে পলল ব্যজনী বা পলল শঙ্কু বলে।

সৃষ্টি: পার্বত্য অঞ্চল পার হয়ে নদী যখন সমভূমিতে নেমে আসে তখন ভূমির ঢাল হঠাৎ কমে যাওয়ায় নদীর বহন ক্ষমতা ও স্রোতবেগ দুই-ই হঠাৎ কমে যায়। ফলে, পর্বতের পাদদেশে নদীবাহিত পলি, কাঁকর, নুড়ি-বালি প্রভৃতি জমে তিনকোণা ভূমিভাগ বা পলল শঙ্কু বা পলি শঙ্কু (Alluvial Cone) গঠন করে। পলল শঙ্কুর ওপর দিয়ে নদী বিভিন্ন খাতে প্রবাহিত হলে পলল শঙ্কু অর্ধগোলাকার আকৃতিতে ভাগ হয়ে হাতপাখা আকৃতির ভূমিভাগ বা পলল ব্যজনী গঠন করে। পাশাপাশি কয়েকটি পলল ব্যজনী মিলিত হয়ে পলিমঞ্জ গঠন করে।

উদাহরণ:
হিমালয়ের পাদদেশে এরূপ অসংখ্য পলল ব্যজনী দেখা যায়।

নদী বাঁক (River Bend / Meander)

নিম্নগতিতে নদীতে বোঝা (Load) বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে নদী প্রায় শক্তিহীন হয়ে এঁকেবেঁকে প্রবাহিত হয়, একে নদী বাঁক বলা হয়। গ্রিক পৌরাণিক দেবতা ‘মিয়েন্ড্রস’ এর নামানুসারে যেকোনো নদী বাঁককেই মিয়েন্ডার বলা হয়।

সৃষ্টি:
(i) উচ্চপ্রবাহ থেকে বয়ে আনা ক্ষয়জাত পদার্থের সঙ্গে উপনদী দ্বারা বয়ে আনা পলি যুক্ত হয়ে বোঝার পরিমাণ বেড়ে যায়। (ii) নদীর গতিবেগ হ্রাস পাওয়া। (iii) নদীর ক্ষয় করার ক্ষমতা লোপ পাওয়া প্রভৃতি কারণে নদী নিম্নগতিতে কোনো বাধা বা কঠিন শিলার সম্মুখীন হলে নদী তাকে ক্ষয় না করে এঁকেবেঁকে প্রবাহিত হয়ে নদী বাঁক উৎপন্ন করে। (iv) নদী বাঁকের এক অংশে জলের আঘাতে ক্ষয় হয় এবং বিপরীত অংশে ওই ক্ষয়িত পদার্থ সমূহের সঞ্চয় হয়। এইভাবে ক্রমান্বয়ে অবতল পাড়ে ক্ষয় এবং উত্তল পাড়ে সঞ্চয়ের মাধ্যমে মধ্য ও নিম্নগতিতে অসংখ্য নদী বাঁক গড়ে ওঠে। এইভাবে অবতল (Concave) পাড় বা খাড়া পাড় (River Cliff) এবং উত্তল (Convex) পাড় বা ঢালু পাড়ের (Slip-off Slope) সৃষ্টি হয়।

উদাহরণ : ভাগীরথী ও জলঙ্গীতে এই প্রকার নদী বাঁক প্রচুর পরিলক্ষিত হয়। পরিমাণে

অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ (Ox-bow Lake)

মধ্যগতিতে কোনো নদী বাঁকের মাঝের অংশ মূল বাঁক থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ঘোড়া বা গোরুর ক্ষুরের মতো অবস্থান করলে তাকে অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ বলে।

সৃষ্টি: সমভূমি প্রবাহে স্বল্প জলস্রোতে নিম্নক্ষয় যেমন বন্ধ হয়ে যায় তেমনই পার্শ্বক্ষয় সামান্য পরিমাণে ঘটে। এই অবস্থায়—

(i) নদীর বাঁক ক্রমশ বাড়তে থাকে।

(ii) দুটি নদীবাঁক যখন খুব কাছাকাছি চলে আসে বাঁকের মাঝের অংশ দ্রুত ক্ষয় পায়।

(iii) অবশেষে দুটি বাঁকের ব্যবধান বিলুপ্ত হলে নদী সোজা পথে বয়ে চলে।

(iv) পরিত্যক্ত বাঁকটিতে পলি, বালি, কাদা জমে ঘোড়ার ক্ষুরের ন্যায় অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ সৃষ্টি করে।

উদাহরণ:
মুরশিদাবাদ জেলায় ভাগীরথী নদীর তীরে অনেক অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ দেখা যায়।

Leave a Comment