ভৌমজলের অতিরিক্ত ব্যবহারের প্রভাব লেখো। |
ভূপৃষ্ঠের নীচে মাটি, রেগোলিথ, কিংবা শিলারন্ধ্রের মধ্যে যে জল পাওয়া যায় তাকে ভৌমজল বলে। মানুষের দৈনন্দিন জীবনে, কৃষিকার্যে, শিল্পক্ষেত্রে ভৌমজলের গুরুত্ব অপরিসীম। দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি, কৃষিতে জলসেচের প্রসার, শিল্পক্ষেত্রে জলের চাহিদার উত্তরোত্তর বৃদ্ধি প্রভৃতি কারণে ভৌমজল আজ ব্যাপকহারে ব্যবহৃত হচ্ছে। ভৌমজলের এই অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে যে-সমস্ত সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করবে সেগুলি হল-
ভৌমজল স্তরের পতন
মাটির নীচ থেকে অতিরিক্ত ভৌমজল সংগ্রহ করলে ভৌমজল স্তর ক্রমাগত মাটির গভীরে প্রবেশ করবে। ফলে কূপ-নলকূপের সাহায্যে জল পাওয়া যাবে না।
পানীয় জলের সংকট
মানুষের পানীয় জলের প্রধান উৎস হল ভৌমজল। তাই ভৌমজলের অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে বিশ্ব জুড়ে পানীয় জলের সংকট তীব্র আকার ধারণ করবে।
ভূমির অবনমন
ভৌমজলের অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে বিভিন্ন স্থানে ভৌমজলের ভাণ্ডার কমে যাওয়ায় ভূমি বসে যাচ্ছে। ফলে ভূমি ধসের সম্ভাবনা বাড়ছে।
সেচের জলের অভাব
ভারতে কূপ নলকূপের সাহায্যে ভৌমজল তুলে সবচেয়ে বেশি জমিতে 60.9% জলসেচ করা হয়। ভৌমজলের সংকট দেখা দিলে প্রয়োজনীয় সেচের জল পাওয়া যাবে না। ফলে কৃষি উৎপাদন হ্রাস পাবে।
মাটির লবণতা বৃদ্ধি
কূপ নলকূপের জলে মাটির নীচের স্তর থেকে লবণ দ্রবীভূত হয়ে মাটির ওপরের স্তরে এসে সঞ্চিত হয়। তাই ভৌমজল সেচকার্যে যত বেশি ব্যবহৃত হয় মাটির লবণতা ততই বৃদ্ধি পেতে থাকে।
রোগের প্রাদুর্ভাব
মাটির নীচ থেকে অতিরিক্ত পরিমাণে জল তোলা হতে থাকলে ভৌমজলের সঙ্গে আর্সেনিক, ফ্লুওরাইড, আয়রন, নাইট্রেট প্রভৃতি খনিজ মিশে যায়। এই খনিজমিশ্রিত বিষাক্ত জল ব্যবহারে নানা রোগ সৃষ্টি হয়। যেমন- আর্সেনিকের প্রভাবে ব্ল্যাকফুট রোগ হয়।
উদ্ভিদের মৃত্যু
ভৌমজলের স্তর নীচে নেমে গেলে উদ্ভিদের মূল সেই জলের নাগাল পাবে না। ফলে জলের অভাবে উদ্ভিদের মৃত্যু ঘটবে এবং বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বিঘ্নিত হবে।