ভাষা দিবস পালন বাংলা রচনা
ভাষা দিবস পালন বাংলা রচনা |
ভূমিকা
‘মাতৃভাষা মাতৃদুগ্ধসম’-এ কথা সকলেই জানে। কিন্তু ভাষা তো নিরাকার বিষয়। সামাজিক মানুষের মনোভাব প্রকাশ ও বিনিময়ের মাধ্যম। ভাষার বোেধ সহজাত। তবে ভাষা দিবস পালনের উপযোগিতা কোথায়?
মাতৃভাষা দিবসের গুরুত্ব
মাতৃভাষা দিবসের উৎপত্তি মূলত বিশ্বব্যাপী ভাষার বিপন্নতা ও ভাষাবিলুপ্তির বিষয়কে কেন্দ্র করে। ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দে এনসাইক্লোপিডিয়া অফ লিঙ্গুইসটিক্স জানায় বর্তমান বিশ্বে ৬,৬০৪টি ভাষায় মানুষ কথা বলে। এর মধ্যে বেশ কিছু ভাষা বিপন্ন। সেগুলিকে অবিলম্বে সংরক্ষণ না করলে এরা পৃথিবী থেকে চিরতরে হারিয়ে যাবে। দুই বাঙালি আবদুল সালাম ও রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন সংগঠন ‘মাদার ল্যাঙ্গুয়েজ লাভার্স অফ দি ওয়ার্ল্ড’-এ বিষয়টিকে সারা বিশ্বের মানুষের অবগতিতে আনে। এই পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বের সমস্ত মাতৃভাষার প্রতি সম্মান ও মর্যাদাজ্ঞাপন উপলক্ষ্যে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা করার বিষয়টি বিশ্বের জনগণের সমর্থন লাভ করে।
একুশে ফেব্রুয়ারির তাৎপর্য
১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ভারতবর্ষ স্বাধীন হয়, যার পরিণামস্বরূপ সৃষ্টি হয় দুটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্রের। একটি ভারত এবং অন্যটি পাকিস্তান। ধর্মীয় সাদৃশ্যের অজুহাতে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয় পূর্ব পাকিস্তান (অধুনা বাংলাদেশ)। পশ্চিম পাকিস্তানের ভাষা উর্দুকে পূর্ব পাকিস্তানেও রাষ্ট্রভাষারূপে প্রচলনের নির্দেশ দেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মহম্মদ আলি জিন্না। পূর্ব পাকিস্তানের বাংলাভাষী জনগণ এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করে।
১৯৫২ খ্রিস্টাব্দের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্ররা তাদের মাতৃভাষা বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবিতে ঢাকা হাইকোর্টের সন্নিকটে বিক্ষোভ প্রদর্শন করলে পাকিস্তানের জঙ্গি সরকার তাদের উপর গুলি চালায়। নিহত হন আবদুল, বরকত, সালাম ও রফিক, রহমান। বাংলাদেশ-সহ সমগ্র পৃথিবীর শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ এই ঘটনার প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে ওঠেন। প্রধানমন্ত্রী জিন্না তাঁর সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে বাধ্য হন। পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের মাতৃভাষা বাংলা স্বমহিমায় অধিষ্ঠিত হয়। মাতৃভাষার রক্ষাকল্পে তরুণ প্রাণের আত্মাহুতি দেওয়ার এই ঐতিহাসিক দিনটিকেই ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে ইউনেসকো ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ বপে ঘোষণা করে।
মাতৃভাষা রক্ষায় প্রতিবাদ
মাতৃভাষা রক্ষায় ১ নভেম্বর, ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে পুরুলিয়া থেকে ঐতিহাসিক পদযাত্রা চলে। হাজার মানুষ পায়ে হেঁটে কলকাতা আসেন। পুরুলিয়ার অংশভাগ বিহারের সঙ্গে • জুড়ে দেওয়ার রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে এই প্রতিবাদ শেষপর্যন্ত সফল ৪ হয়। আবার ভাষামিছিলে ১৯ মে, ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে অসমের বরাক উপত্যকায় সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মুখের ভাষা বাংলার বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি করেছিল সরকার। তা মানেনি মানুষ। গুলিতে নিহত হন ১১ জন বাঙালি এঁরা হলেন- হিতেশ বিশ্বাস, কমলা ভট্টাচার্য, চণ্ডীচরণ সূত্রধর, সুকোমল পুরকায়স্থ, সত্যেন্দ্র দেব, শচীন শীল, সুনীল সরকার, বীরেন্দ্র সূত্রধর, কুমুদ দাস, কানাইলাল নিয়োগী ও তরণী দেবনাথ।