ভারতে জলসেচের প্রয়োজনীয়তা সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করো

ভারতে জলসেচের প্রয়োজনীয়তা সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করো

ভারতে জলসেচের প্রয়োজনীয়তা সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করো
ভারতে জলসেচের প্রয়োজনীয়তা সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করো।

ভারত হল ক্রান্তীয় মৌসুমি জলবায়ুর দেশ। পৃথিবীর সর্বাধিক বৃষ্টিবহুল অঞ্চল মৌসিনরাম এখানেই অবস্থিত। তা সত্ত্বেও ভারতের কৃষিতে জলসেচের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। কারণ-

মৌসুমি বৃষ্টিপাতের অনিশ্চয়তা

ভারতের কৃষিকার্য সাধারণত মৌসুমি বৃষ্টিপাতের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু এই বায়ুর প্রভাবে প্রত্যেক বছর যে সমান পরিমাণ বৃষ্টিপাত হবে তার কোনো নিশ্চয়তা থাকে না। কোনো কোনো বছর মৌসুমি বায়ু খুব তাড়াতাড়ি আসে এবং প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টিপাত ঘটায় ফলে সে বছর বন্যা দেখা দেয়। আবার কোনো কোনো বছর মৌসুমি বায়ু দেরিতে আসে এবং বৃষ্টিপাতের অভাবে খরা দেখা দেয়। তাই কৃষিজমিতে নিয়মিত এবং স্থায়ীভাবে জল সরবরাহের জন্য জলসেচের একান্ত প্রয়োজন।

বৃষ্টিপাতের অসম বণ্টন

ভারতবর্ষের প্রায় 80% বৃষ্টিপাত মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে সংঘটিত হলেও ভারতের সর্বত্র সমান পরিমাণে এই বৃষ্টিপাত হয় না। উত্তর-পশ্চিম ভারতের অধিকাংশ স্থানে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ অত্যন্ত কম। এছাড়া দাক্ষিণাত্য মালভূমির মধ্যভাগে গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ খুবই কম। এই সব কম বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলে কৃষিকাজের জন্য জলসেচ অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

শীতকালীন বৃষ্টিপাতের অভাব

ভারতের গ্রীষ্মকাল আর্দ্র কিন্তু শীতকাল শুষ্ক। শীতকালে উত্তর-পশ্চিমে ভারতের কিছু অংশ ও তামিলনাড়ুর করমণ্ডল উপকূল ছাড়া কোথাও তেমন বৃষ্টিপাত হয় না। তাই শীতকালীন রবিশস্য চাষ করার জন্য প্রচুর পরিমাণে জলসেচের প্রয়োজন হয়।

মৃত্তিকার জলধারণ ক্ষমতার বিভিন্নতা

ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের মৃত্তিকা দেখা যায়। আর এই ভিন্ন ভিন্ন মুক্তিকার জলধারণ ক্ষমতা ভিন্ন ভিন্ন প্রকৃতির। যেমন- এঁটেল মাটির জলধারণ ক্ষমতা বেশি হলেও লোহিত মৃত্তিকা, ল্যাটেরাইট মুক্তিকা, দোআঁশ মুক্তিকার জলধারণ ক্ষমতা কম। তাই এই সব মৃত্তিকায় কৃষিকাজ করার জন্য জলসেচ অতান্ত প্রয়োজন।

উচ্চফলনশীল বীজের ব্যবহার

বর্তমানে ক্রমবর্ধমান খাদ্য চাহিদা মেটানোর জন্য ভারতের বিভিন্ন অংশে উচ্চফলনশীল বীজ ব্যবহার করা হচ্ছে। এই উচ্চফলনশীল বীজ চাষে প্রচুর জলের প্রয়োজন হয়। ফলে কৃষিকাজে জলের চাহিদা মেটাতে জলসেচের প্রয়োজন হয়।

বহুফসলী চাষ

বর্তমানে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য একই জমিতে আধুনিক কৃষি পদ্ধতিতে বছরে তিন থেকে চারবার ফসল ফলানো হচ্ছে। আর এই কাজের জন্য জলসেচের মাধ্যমে কৃষিজমিতে সারাবছর ধরে জলের জোগান দেওয়া হয়।

শস্যের জল চাহিদার পার্থক্য

ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন ধরনের শস্য চাষ করা হয়। সব ধরনের ফসলের জলের চাহিদা সমান নয়। যেমন- ধান, পাট প্রভৃতি ফসলের ক্ষেত্রে জলের চাহিদা বেশি আবার গম, জোয়ার, বাজরা, রাগি প্রভৃতি ফসলের ক্ষেত্রে জলের চাহিদা কম। তাই যে-সমস্ত ফসলের ক্ষেত্রে জলের চাহিদা বেশি তার জন্য জলসেচের প্রয়োজন।

বাষ্পীভবনের পার্থক্য

ভারত উপক্রান্তীয় অঞ্চলে অবস্থান করায় ভারতের জলভাগ থেকে বাষ্পীভবনের হার বেশি। ফলে শীত ঋতুতে ভারতের জলভাগে (নদী, খাল, বিল, পুকুর, জলাশয়) জলের পরিমাণ অনেক কমে যায়। মালভূমি অঞ্চলের নদীগুলি প্রায় শুকিয়ে যায় বললেই চলে। এই সময় মালভূমি অঞ্চলে কৃষিকার্যের জন্য জলসেচ প্রয়োজন হয়।

উদ্যান কৃষি

শহরতলি অঞ্চলে বাজারের চাহিদা পূরণের জন্য বাণিজ্যিকভাবে সারাবছর ধরে শাকসবজি, ফল, ফুল চাষ করা হচ্ছে। এই কৃষিকার্যকে উদ্যান কৃষি বলে। উদ্যান কৃষিতে প্রচুর পরিমাণে জলসেচের প্রয়োজন হয়।

Leave a Comment