ভারতের জলসেচের বিভিন্ন পদ্ধতিগুলির বিবরণ দাও

ভারতের জলসেচের বিভিন্ন পদ্ধতিগুলির বিবরণ দাও

ভারতের জলসেচের বিভিন্ন পদ্ধতিগুলির বিবরণ দাও
ভারতের জলসেচের বিভিন্ন পদ্ধতিগুলির বিবরণ দাও।

ভারতের জলসেচের বিভিন্ন পদ্ধতি

জলসেচ কৃষিজমিতে চাষ-আবাদের জন্য কৃত্রিম উপায়ে নির্দিষ্ট ও সঠিক সময়ে প্রয়োজনমতো পরিমিত মাত্রায় জল সরবরাহ করার ব্যবস্থাকে জলসেচ বলে। ভারতে এই জলসেচের মূল উৎসগুলি হল- ভৌমজল, সঞ্চিত জল ও প্রবহমান জলধারা।

জলসেচের পদ্ধতি

(1) খাল দ্বারা জলসেচ

ভারতে মোট সেচযুক্ত জমির শতকরা প্রায় 29.2% খালের মাধ্যমে জলসেচ করা হয়। ভারতের সেচখাল দু-ধরনের- (i) প্লাবন খাল ও (ii) নিত্যবহ খাল।

(i) প্লাবন খাল (Inundation Canal) : বর্ষার অতিরিক্ত জলকে বা জোয়ারের জলকে সেচের কাজে ব্যবহার করার জন্য নদীর সঙ্গে খালের সংযোগ করা হয় প্লাবন খালের মাধ্যমে। বর্ষাকাল ছাড়া এই খালে জল থাকে না।

(ii) নিত্যবহ খাল (Perennial Canal) : লকগেটের সাহায্যে সুনিয়ন্ত্রিতভাবে নদীতে বাঁধ দিয়ে খালের জলের প্রবাহকে সারা বছর ধরে রাখা যায় এই নিত্যবহ খালের মাধ্যমে।

বণ্টন: প্রায় 16 মিলিয়ন হেক্টর জমিতে খালের মাধ্যমে জলসেচ করা হয়। উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা, পাঞ্জাব, রাজস্থান, বিহার [উত্তর ভারতের 60%] অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্ণাটক, তামিলনাড়ু, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড় (দক্ষিণ ভারতের 40%)-এর অন্তর্গত।

সেচখাল: উত্তরপ্রদেশের ঊর্ধ্বগঙ্গা খাল, সারদা খাল প্রভৃতি। রাজস্থানের ইন্দিরা গান্ধী খাল, বিকানির খাল প্রভৃতি। পশ্চিমবঙ্গের কংসাবতী খাল, মেদিনীপুর খাল প্রভৃতি।

(2) কূপের মাধ্যমে জলসেচ

ভারতের যে-সকল অঞ্চলে কৃষিজমির কাছাকাছি নদী প্রবাহিত হয়নি এবং ভৌমজল মাটির সামান্য নীচেই পাওয়া যায় সেখানে জলসেচের জন্য কূপ বা পাতকুয়া খনন করা সুবিধাজনক। এই সকল কূপ থেকে পারসিক চাকা, কপিকল, রেতপ্রথা বা হাত দিয়ে টেনে জলসেচ করা হয়।

প্রকার: কূপ দু-প্রকারের, যথা- (ⅰ) স্থায়ী কূপ – এগুলিতে সারাবছর জল থাকে এবং (iⅱ) অস্থায়ী কূপ এগুলিতে বছরের একটি নির্দিষ্ট ঋতুতে জল পাওয়া যায়।

বণ্টন : উত্তরপ্রদেশ, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, তেলেঙ্গানা, গুজরাট প্রভৃতি রাজ্যে কূপের সাহায্যে জলসেচ দেখা যায়।

নলকূপ:
যে-সকল অঞ্চলে নরম মৃত্তিকাস্তরের সামান্য নীচেই ভৌমজল পাওয়া যায় সেখানে লোহা বা প্লাস্টিকের পাইপ বসিয়ে অর্থাৎ, নলকূপ খনন করে পাম্পের সাহায্যে জল তুলে জলসেচ করা হয়।

প্রকার: নলকূপ দু-প্রকারের, যথা–

(i) সাধারণ নলকূপ – এগুলি থেকে সাধারণত হাত দিয়ে পাম্প করে জল তোলা হয় এবং (ii) বৈদ্যুতিক নলকূপ-বৈদ্যুতিক পাম্প বা ডিজেলচালিত পাম্পের সাহায্যে এই প্রকার নলকূপ থেকে প্রচুর পরিমাণে জল তোলা যায়। এ ছাড়া নলকূপ গভীর ও অগভীর এই দুইপ্রকার হয়ে থাকে।

বণ্টন: পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার ও মহারাষ্ট্রে জলসেচের জন্য প্রচুর নলকূপ বসানো হয়েছে।

সেচের পরিমাণ: ভারতের সেচসেবিত জমির মধ্যে প্রায় 60.9% জমিতে কূপ ও নলকূপের মাধ্যমে জলসেচ করা হয়। এর মধ্যে উত্তরপ্রদেশে 28%, রাজস্থানে 10.5% এবং পাঞ্জাবে 8.7% জমিতে কূপ ও নলকূপের সাহায্যে জলসেচ করা হয়।

উপরিউক্ত জলসেচ পদ্ধতিগুলি ছাড়াও আরো একটি জলসেচের পদ্ধতি উল্লেখযোগ্য। সেটি হল জলাশয়ের মাধ্যমে জলসেচের পদ্ধতি।

(3) জলাশয়ের মাধ্যমে জলসেচ

ভারতের যে-সকল অঞ্চলের ভূপ্রকৃতি কঠিন ও শিলাময় সেখানে কূপ-নলকূপ বা খাল খনন করা সহজ হয় না। তাই এই সকল অঞ্চলে জলাশয়ের মাধ্যমে বর্ষার জল ধরে রেখে সেচের কাজে ব্যবহার করা হয়।

বণ্টন :
দাক্ষিণাত্যের অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু ও কর্ণাটক রাজ্যে এই পদ্ধতির প্রচলন সবচেয়ে বেশি। তবে পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, উত্তরপ্রদেশ, ওড়িশা, মহারাষ্ট্র প্রভৃতি রাজ্যেও এই পদ্ধতিতে জলসেচ হয়ে থাকে।

সেচের পরিমাণ: ভারতের মোট সেচসেবিত জমির মধ্যে প্রায় 4.6% জমিতে জলাশয়ের মাধ্যমে জলসেচ করা হয়।

অন্যান্য:
এ ছাড়া রিভার লিফ্ট ইরিগেশন পদ্ধতিতে, প্রস্রবণের জলের সাহায্যে, কপিকল, ঢেঁকিকল পদ্ধতিতে প্রায় 5.3% জমিতে জলসেচ করা হয়।

আরও পড়ুন – নাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য রচনা

Leave a Comment