বিদ্যাসাগরের নেতৃত্বে বিধবাবিবাহ আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও। বিদ্যাসাগর কতটা সাফল্য অর্জন করেছিলেন

বিদ্যাসাগরের নেতৃত্বে বিধবাবিবাহ আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও

বিদ্যাসাগরের নেতৃত্বে বিধবাবিবাহ আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও। বিদ্যাসাগর কতটা সাফল্য অর্জন করেছিলেন
বিদ্যাসাগরের নেতৃত্বে বিধবাবিবাহ আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও। বিদ্যাসাগর কতটা সাফল্য অর্জন করেছিলেন?

ভূমিকা

অতি প্রাচীনকালে বিধবাবিবাহ প্রচলিত ছিল। পরে ধর্মীয় বিধান ও সমাজ নারীর অধিকারে হস্তক্ষেপ করলে বিধবাবিবাহ নিষিদ্ধ হয়। নারীর বাল্যবিবাহ এবং পুরুষের বহুবিবাহ চালু হয়। এইসব সামাজিক কুপ্রথা ধর্মের অঙ্গ হিসেবে সমাজে পালিত হতে থাকে। পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রভাবে সচেতন শিক্ষিত শ্রেণি এই কুপ্রথাগুলি দূর করতে সচেষ্ট হয়, যার মধ্যে অন্যতম ছিল বিধবাবিবাহ আন্দোলন। এই আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। তিনি বলেন ‘বিধবাবিবাহ প্রবর্তন আমার জীবনের সর্বপ্রধান সৎকর্ম।’

বিদ্যাসাগর এবং বিধবাবিবাহ আন্দোলন

সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিভিন্নভাবে বিধবাবিবাহ প্রচলনের পক্ষে আন্দোলন করেছিলেন। যেমন-① গ্রন্থ রচনা করে, ② সংবাদপত্রের মাধ্যমে, ③ বিভিন্ন মানুষের স্বাক্ষরযুক্ত আবেদনপত্র সরকারের কাছে প্রেরণের মাধ্যমে ও ④ নানা স্থানে গিয়ে প্রচারের মাধ্যমে।

[1] গ্রন্থ রচনা করে

১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দে ‘তত্ত্ববোধিনী’ পত্রিকায় বিধবাবিবাহের সমর্থনে একটি নিবন্ধ লেখেন বিদ্যাসাগর। পরে ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে ‘বিধবাবিবাহ প্রচলিত হওয়া উচিত কিনা এতদ্বিষয়ক প্রস্তাব’ নামে একটি পুস্তিকাও রচনা করেন তিনি। এইভাবে নানান পুস্তিকা রচনা করে বিধবাবিবাহ প্রচলনের পক্ষে জনমত গঠনের চেষ্টা করেন। তিনি বিভিন্ন হিন্দুশাস্ত্র থেকে উদ্ধৃতি নিয়ে প্রমাণ করেন যে, বিধবাবিবাহ হল শাস্ত্রসম্মত।

[2] সংবাদপত্রের মাধ্যমে

বিদ্যাসাগর ‘সর্বশুভকরী’ পত্রিকায় [ বিধবাদের দুর্দশার কথা তুলে ধরেন। ‘সর্বশুভকরী’ পত্রিকা ছিল বিদ্যাসাগর প্রতিষ্ঠিত ‘সর্বশুভকরী সভা’-র মুখপত্র।

[3] স্বাক্ষরযুক্ত আবেদনপত্র পেশের মাধ্যমে

বিদ্যাসাগর বিধবাবিবাহের সমর্থনে ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে ১০০০ জন বিশিষ্ট ব্যক্তির স্বাক্ষর সংগ্রহ করে সরকারের কাছে এক আবেদনপত্র পাঠান। এই স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে ছিলেন দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, অক্ষয়কুমার দত্ত, দক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায়, উত্তরপাড়ার জমিদার জয়কৃষ্ণ মুখোপাধ্যায় প্রমুখ।

[4] বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে প্রচারের মাধ্যমে

বিদ্যাসাগর বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে বিধবাবিবাহের প্রচার ও আয়োজন করে এর পক্ষে জনমত গড়ে তোলেন।

সাফল্য লাভ

বিধবাবিবাহ আন্দোলনকে সফল করতে বিদ্যাসাগর মহাশয়কে বিভিন্ন প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। বিধবাবিবাহের পক্ষে জনমত সৃষ্টি করার জন্য বিদ্যাসাগর গ্রন্থ রচনা করেন এবং পত্রপত্রিকার মাধ্যমে তা প্রচার করেন। অপরপক্ষে রাধাকান্ত দেব ছিলেন বিধবাবিবাহের ঘোরতর বিরোধী। বিধবাবিবাহের পক্ষে আইন পাস করার জন্য বিদ্যাসাগর ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দের ৪ অক্টোবর ১০০০ জন ব্যক্তির স্বাক্ষর-সংবলিত একটি আবেদনপত্র সরকারের কাছে পাঠান। এই আবেদনপত্রের বিরুদ্ধে রাধাকান্ত দেব ৩৬,৭৬৩ জন ব্যক্তির স্বাক্ষর সংগ্রহ করে সরকারের কাছে একটি পালটা আবেদনপত্র পাঠান।

বিধবাবিবাহ আইন পাস

সরকার সমস্ত বিরোধী দাবি অগ্রাহ্য করে ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জুলাই বিধবাবিবাহকে আইনসম্মত বলে ঘোষণা করে।

বিধবাবিবাহের ঘটনা

বিদ্যাসাগরের প্রচেষ্টায় যে বিধবাবিবাহগুলি অনুষ্ঠিত হয়েছিল, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল-

শ্রীশচন্দ্র বিদ্যারত্ব ও কালিমতির বিবাহ

১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দের ৭ ডিসেম্বর সংস্কৃত কলেজের অধ্যাপক শ্রীশচন্দ্র বিদ্যারত্ন ও বিধবা কালিমতির বিবাহ অনুষ্ঠিত হয়।

নারায়ণ ও ভবসুন্দরীর বিবাহ

বিদ্যাসাগর নিজ পুত্র নারায়ণের সঙ্গে ভবসুন্দরী নামে এক বিধবার বিবাহ দেন। এরপর ৮২,০০০ টাকা ব্যয়ে তিনি ৬০ জন বিধবার বিবাহ দেন। জনপ্রিয় না হলেও এইভাবে হিন্দুসমাজে বিধবাবিবাহ চালু হয়।

Leave a Comment