বিদ্যালয়ে মোবাইল আনা সম্পর্কে দুই বন্ধুর সংলাপ

বিদ্যালয়ে মোবাইল আনা সম্পর্কে দুই বন্ধুর সংলাপ
বিদ্যালয়ে মোবাইল আনা সম্পর্কে দুই বন্ধুর সংলাপ।

অনুপম : কী রে কল্লোল, সারাক্ষণ হাতের মুঠোয় এই মোবাইল নিয়ে কী যে করিস। আবার মাঝে মাঝে দেখি মোবাইলে গান বাজিয়ে একেবারে কল্লোলিত উচ্ছ্বাস জাগিয়ে তুলছিস।

কল্লোল: দ্যাখ অনুপম, এখন মোবাইল ফোন মানে হাতের মুঠোয় দুনিয়া। তা এটিকে হাতের মুঠোতেই রাখতে হবে; কারণ আমরা দুনিয়াকে তো হাতের মধ্যেই পেতে চাই।

অনুপম :
এসব আত্মপক্ষ যুক্তি সাজিয়ে তোদের মতো ছেলেরা মোবাইল জিনিসটাকে একেবারে মোবিলহীন ইঞ্জিন বানিয়ে তুলছে। মানে এর চূড়ান্ত অপপ্রয়োগ করে যাচ্ছে। এখন তো দেখি, স্কুলেও প্রায় সকলেই একেবারে নিয়ম লঙ্ঘন করে মোবাইল নিয়ে যাচ্ছে। এসবকি প্রয়োজনের অতিরিক্ত নয়?

কল্লোল: কেন? কারোর বিশেষ প্রয়োজনে যদি স্কুলে মোবাইল আনে, তাতে অসুবিধাটা কোথায়?

অনুপম :
কীসের প্রয়োজন রে? অপ্রয়োজনের বাহাদুরি আর অযথা বাড়তি উৎপাত ছাড়া স্কুলে মোবাইল ব্যবহারের কোনো কার্যকারিতা তো খুঁজে পাই না।

কল্লোল:
এমন বলিস না। জানিস, কত ছেলের বাবা-মা দুজনেই চাকরি করেন। ছেলের সঙ্গে একেবারে রাতেই তাদের দেখা হয়। তারা হয়তো ছেলের খোঁজ করেন, খবর নেন; আর তা তো মোবাইলেই সব থেকে ভালো হয়।

অনুপম : ওরে বাবা! তুই যা বলছিস, তাতে তো মনে হচ্ছে সব একেবারে মাতৃ-পিতৃভক্ত বিদ্যাসাগর। এসব অজুহাত দিয়েই কি আর বাজিমাত হয়? দেখি তো, বাবা-মায়ের দৈবাৎ কালেভদ্রে ফোন এসে পড়লে তাদের সে কি বিরক্তি। হ্যাঁ, কখনো-কখনো, খুব অল্প ক্ষেত্রে কারণটা সত্য বটে। কিন্তু তা সকলের প্রসঙ্গে খাটে না।

কল্লোল: এ ছাড়াও তো অনেক কারণ থাকতে পারে।

অনুপম: দু-একটা বল। শুনি।

কল্লোল: যেমন ধর, ভূগোল-বায়োলজি-ফিজিক্স-নিউট্রিশন- ইতিহাস-ইকনোমিক্স ইত্যাদি তথ্যমূলক বিষয়ের পাঠকালে শিক্ষক মহাশয়দের প্রদেয় তথ্যের পর আপ-টু-ডেট ডাটা কালেক্ট করতে মোবাইলে ইনটারনেটের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। আবার, লাইব্রেরি থেকে পাওয়া একটি বিশেষ রেফারেন্স বইয়ের নির্দিষ্ট পাতার ফোটো তুলে নেওয়া যেতে পারে। স্কুলের কোনো অনুষ্ঠানের একটি স্মরণীয় মুহূর্তের ভিডিয়ো করা যেতে পারে। টিফিনের বিরতিতে একটু সংগীতের আস্বাদ নেওয়া যেতে পারে, যা একঘেয়েমি কাটিয়ে মনটাকে পরবর্তী ক্লাসগুলির জন্য সতেজ রাখতে সাহায্য করবে।

অনুপম : তুই যা বললি, এগুলি আমি অস্বীকার করি না। কিন্তু এরপরেও বলব এসবের কোনোটার জন্যই স্কুলে মোবাইল আনার প্রয়োজন হয় না। কারণ, বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলার জন্য স্কুলের ফোনকেই ছাত্রছাত্রীরা ব্যবহার করতে পারে বিশেষ সময়ে। তাতে কোনো শিক্ষকই নিশ্চয়ই বাধা দেবেন না। এমনকি আজকাল যে-কোনো শিক্ষকই এই কাজে নিজের ফোন ব্যবহার করতে দেন। আর স্কুলজীবনের পঠনপাঠনের জন্য বিবিধ বিষয়ের গ্রন্থের অভাব আজ আর নেই, সেগুলি থেকেই সব তথ্য পাওয়া যায়; তার উপর সংশ্লিষ্ট বিষয়ের শিক্ষক তো আছেনই। এরপরেও আপ-টু-ডেট হতে গেলে সেটা বাড়িতে গিয়েও সংগ্রহ করা যেতে পারে ইনটারনেট থেকে। আর লাইব্রেরির বই থেকে ফোটো নেওয়া, ভিডিয়ো করা, গান শোনা ইত্যাদি কথা প্রয়োজনীয় হলেও বাহুল্য। কারণ লাইব্রেরির বই বাড়ি নিয়ে যাওয়া যায়। তা ছাড়া অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব কেউ করে না। তুই নিজে সত্যিকার বিবেচনা করে বল তো, ছেলেরা স্কুলে মোবাইল এনে এসব কি আদৌ করে? নাকি অধিকাংশ সময়ে ফেসবুক, হোয়াট্‌স্ অ্যাপ, হাইক- এগুলি নিয়েই মজে থাকে? তাতে পড়াশোনার ক্ষেত্রে ক্ষতিসাধন তো হয়ই, উপরন্তু এক মানসিক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে স্কুলে।

কল্লোল: সত্যি, তুই একেবারেই ঠিক জায়গাটা ধরেছিস। আমরা মোবাইলের সুষ্ঠু প্রয়োগ স্কুলে করি না। বরং শিক্ষার ক্ষেত্রটাকেও এর মধ্য দিয়ে উন্মত্ত বিনোদনের স্থান করে ফেলছি। মোবাইল ব্যবহারের আরও অনেক জায়গা আছে, স্কুলে না-হয় নাই করলাম।

অনুপম:
হাঃ হাঃ হাঃ। আর এ কারণেই তুই কল্লোল। কল্লোলের মতোই মুক্ত মনের, স্বতঃস্ফূর্ততায় সব গ্রহণ করতে পারিস।

Leave a Comment