বিজ্ঞানের এক বিস্ময়-কম্পিউটার রচনা

বিজ্ঞানের এক বিস্ময়-কম্পিউটার
বিজ্ঞানের এক বিস্ময়-কম্পিউটার
[রচনা-সংকেত: ভূমিকা-কম্পিউটার কী-আবিষ্কারের ইতিহাস-কম্পিউটার কীভাবে কাজ করে-ব্যাপক ব্যবহার-সমস্যা-উপসংহার]

ভূমিকা

সভ্যতার আদিলগ্ন থেকেই মানুষ সর্বান্তকরণে চেয়ে এসেছে বিজ্ঞান তাদের জীবনের সর্বক্ষেত্রে সহায়ক হোক, গড়ে তুলুক উন্নতির সুউচ্চ সোপান। বাঙালি বিজ্ঞানী প্রফুল্লচন্দ্র রায় বিজ্ঞানের সেই ভূমিকার কথা স্মরণ করে সেই কারণে বলেছিলেন-

‘বিজ্ঞানই বর্তমান জগতের উন্নতির মাপকাঠি, বিজ্ঞানের অগ্রগতিতেই সভ্যতার অগ্রগতি।’

মানবকল্যাণে নিয়োজিত বিজ্ঞানের সেই অগ্রগতিতে আধুনিককালে এক বিস্ময়কর নতুন সংযোজন ‘কম্পিউটার’।

কম্পিউটার কী

আধুনিককালে কম্পিউটার হল বিজ্ঞানীদের সৃষ্টি করা একধরনের যন্ত্রগণক, একই সঙ্গে নানান ধরনের তথ্যের সংরক্ষক, সর্বজ্ঞ, শিক্ষাসহায়ক এবং সর্ব কর্মসুনিপুণ একটি যন্ত্র। ল্যাটিন শব্দ ‘কমপিউটেয়ার’ থেকে এই যন্ত্রটির ‘কম্পিউটার’ নামটি এসেছে। যন্ত্রটি আবিষ্কারের গুরুত্বের কথা বলতে গিয়ে জ্যাকব ব্রলোয়স্কি বলেছেন-

“With this discovery we are on the threshold of a new age of industrial automation.”

-একথা মেনে নিয়েও বলা যায়, শুধু শিল্পের ক্ষেত্রেই নয়, আজকের দিনে মানবজীবনের নানান ক্ষেত্রে কম্পিউটার তার সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।

আবিষ্কারের ইতিহাস

বিজ্ঞানের বিস্ময় কম্পিউটারের জনক ধরা হয় ইংল্যান্ডের গণিতবিদ চার্লস ব্যাবেজকে। তাঁর পথ ধরে কম্পিউটারকে উন্নত করবার চেষ্টায় ব্রতী হন- হারমান হলারিখ, হাওয়ার্ড আইকেন, গ্রেস হপার প্রমুখ। ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে আবিষ্কৃত প্রথম ইলেকট্রনিক কম্পিউটারের নাম ছিল ‘ইনিয়াক’ প্রথম প্রজন্মের সেই কম্পিউটারের পর পঞ্চাশের দশকে দ্বিতীয়, ষাটের দশকে তৃতীয়, সত্তরের দশকে চতুর্থ এবং আশির দশকে আবিষ্কৃত হয় পঞ্চম প্রজন্মের কম্পিউটার। ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দে ‘অপটিক্যাল কম্পিউটার’ এবং সুপার কম্পিউটার আবিষ্কারের ভিতর দিয়ে কম্পিউটারের জয়যাত্রা গতি পেয়েছে। ভারতবর্ষ দেরিতে হলেও কম্পিউটারের এই জয়যাত্রায় সামিল হয়েছে।

কম্পিউটার কীভাবে কাজ করে

কম্পিউটারে রয়েছে মোট পাঁচটি অংশ- (১) নির্দেশ প্রেরণের কী-বোর্ড (২) স্মৃতিধারণের সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট, যাতে আছে অস্থায়ীভাবে লেখা, পড়া ও মোছার জন্য র‍্যাম এবং স্থায়ী স্মৃতি-সমৃদ্ধ রম। (৩) বাইরের স্মৃতিধারণের হালকা ফ্লপি ডিস্ক এবং হার্ড ডিস্ক, যা আসলে ইনপুট ডিভাইস ও আউটপুট ডিভাইস (৪) গণিত (৫) ফলাফল দেখার মনিটর। এই অংশের প্রথমটি অর্থাৎ কী-বোর্ডের মাধ্যমে নির্দেশ পাঠালে কম্পিউটার তার স্মৃতি থেকে গণিতের ফলাফল হিসাব করে মণিটার তা দেখিয়ে দেয়।

কম্পিউটারের ব্যাপক ব্যবহার

কম্পিউটার আজকের দিনে ব্যাপকভাবে ব্যবহূত হচ্ছে। সেক্ষেত্রে প্রায় সবরকম কাজেই তার অগ্রগতি বিস্ময়কর। যেমন-

(ক) ব্যাবসায় কম্পিউটারের ব্যবহার: ব্যাবসা সংক্রান্ত হিসাবপত্র, তথ্যসংরক্ষণ, আর্থিক লেনদেন প্রভৃতি ক্ষেত্রে সব ধরনের শিল্প, কলকারখানা, ব্যাংক, দোকানপাট, ব্যাবসায়িক অফিস-সর্বত্রই বর্তমানে কম্পিউটার ব্যাপকভাবে ব্যবহূত হতে দেখা যাচ্ছে।

(খ) অফিস-আদালতে কম্পিউটার: স্কুল, কলেজ থেকে আরম্ভ করে সরকারি-বেসরকারি অফিস, দেশের সমস্ত আদালত, প্রশাসনিক নানান ক্ষেত্র ইত্যাদিতেও কম্পিউটারের ব্যবহার এখন অপরিহার্য।

(গ) চিকিৎসার ক্ষেত্রে কম্পিউটার: চিকিৎসাসংক্রান্ত নানান ক্ষেত্রে, নানান পরীক্ষানিরীক্ষায়, রোগনির্ণয়ে, সার্জারিতে আজকের দিনে কম্পিউটার না হলে চলে না।

(ঘ) শিক্ষা ও গবেষণা ক্ষেত্রে কম্পিউটার:
শিক্ষাক্ষেত্রে এবং নানান ধরনের গবেষণা, বিশেষত মহাকাশ, কৃষি, পারমাণবিক ইত্যাদি গবেষণায় কম্পিউটারের ভূমিকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

(ঙ) শিল্প ক্ষেত্রে কম্পিউটার: গৃহনির্মাণ শিল্পে, প্রকাশনা শিল্পে ও সিনেমা শিল্পে কম্পিউটারের ব্যবহার বিপ্লব এনেছে। অনেক অসম্ভব কাজও সহজে ও কম সময়ে সম্ভব হচ্ছে।

(চ) অন্যান্য ক্ষেত্রে কম্পিউটার আবহাওয়া, জলসম্পদ, খনিজ সম্পদ, সমুদ্রগর্ভস্থ ক্ষেত্র, প্রতিরক্ষা, যানবাহন নিয়ন্ত্রণ, তথ্যপ্রযুক্তি, ইন্টারনেট, ই-মেলে যোগাযোগ ইত্যাদি ক্ষেত্রেও কম্পিউটার আজকের দিনে অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।

কম্পিউটারের ব্যাপক ব্যবহারের সমস্যা

কম্পিউটারের বাড়বাড়ন্ত এবং তার ব্যাপক ব্যবহারে কিছু কুফলও দেখা দিচ্ছে। মানুষের ভিতর থেকে হারিয়ে যাচ্ছে নিজস্বতা এবং স্বাভাবিক দক্ষতা। গরিব দেশগুলোতে বাড়ছে বেকারত্বের সমস্যা। কেননা কম্পিউটার বহু মানুষের কাজ কেড়ে নিচ্ছে। অতিরিক্ত পরিমাণে কম্পিউটারের ব্যবহারের ফলে দেখা দিচ্ছে মেরুদন্ড, চোখ এবং মস্তিষ্কের রোগ।

উপসংহার

কিছু অসুবিধা বাদ দিলে কম্পিউটার মানবকল্যাণে যে এক অপরিহার্য যন্ত্র, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আশা করা যায় ভবিষ্যতে এই কম্পিউটার মানবকল্যাণের আরও নতুন অধ্যায় রচনা করবে। তখন আমরা তখনকার কম্পিউটারের উদ্দেশে বলতে পারব-

‘খুলে দাও দ্বার

নীলাকাশ করো অবারিতা’

-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

Leave a Comment