বায়ুর সঞ্চয়কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপের বিবরণ দাও

বায়ুর সঞ্চয়কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপের বিবরণ দাও
বায়ুর সঞ্চয়কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপের বিবরণ দাও।
বায়ুর গতিপথে কোনো কঠিন শিলাখণ্ড, ঝোপঝাড় বা উচ্চভূমি অবস্থানের ফলে বায়ুর গতি বাধাপ্রাপ্ত হয়। বায়ুর গতি বাধাপ্রাপ্ত হলে বালির সঙ্গে বাহিত সূক্ষ্ম পদার্থসমূহ অবক্ষিপ্ত হতে শুরু করে
বায়ুর সঞ্চয়কার্যের ফলে নিম্নরূপ ভূমিরূপগুলি দেখা যায়-

বালিয়াড়ি (Dune)

বালুকাপূর্ণ বায়ু প্রবাহপথে কোনো প্রকার প্রতিবন্ধক (প্রস্তরখণ্ড, ঝোপঝাড়) বা উঁচুনীচু ভূপ্রকৃতির দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হলে বায়ুস্থিত বালি ওই স্থানে জমা হতে থাকে। এইভাবে জমতে জমতে যে বালির স্তুপ বা ঢিবি গড়ে ওঠে, তাকে বালিয়াড়ি বলে। R A Bagnoid-এর মতে “A dune is a mobile heap of sand whose existence is independent of either ground form or fixed wind obstruction.”

শ্রেণিবিভাগ:
সাধারণত দুটি ভাগে বালিয়াড়িগুলিকে ভাগ করা হয়। যথা- A আকৃতি ও গঠন অনুসারে এবং অবস্থান অনুসারে।

A আকৃতি ও গঠন অনুসারে-

বার্খান (Barkhan)

বায়ুর প্রবাহপথের সঙ্গে আড়াআড়িভাবে গড়ে ওঠা অর্ধচন্দ্রাকৃতির বালিয়াড়িকে বাখান বলে। বার্থানের বায়ুমুখী উত্তল ঢাল দীর্ঘ ও মৃদু (10″-15″) এবং বিপরীত দিকের অবতল ঢাল অপেক্ষাকৃত খাড়া (35°) হয়। এই বালিয়াড়ির দুই প্রান্তে শিং-এর মতো শিরা দেখা যায়। এগুলি 10-30 মিটার উচ্চ এবং 40-70 মিটার চওড়া হয়ে থাকে, বৃহদাকৃতির বার্খানকে ‘ওঘার্ডস’ বলে।

উদাহরণ: সাহারা মরুভূমিতে অনেক বার্খান দেখা যায়।

তির্যক বা অনুপ্রস্থ বালিয়াড়ি (Transverse Dune)

বায়ুর গতিপথের সঙ্গে। তির্যক বা আড়াআড়িভাবে গড়ে ওঠা বালির শৈলশিরাকে তির্যক বালিয়াড়ি বলে। যে অঞ্চলে বালির পরিমাণ বেশি সেই অঞ্চলে এটি গঠিত হয়।

উদাহরণ:
কালাহারি মরুভূমিতে এইরূপ বালিয়াড়ি দেখা যায়।।

সিফ (Seif) বা অনুদৈর্ঘ্য বালিয়াড়ি

বায়ুর প্রবাহপথের সঙ্গে সমান্তরালে গঠিত দীর্ঘ ও সংকীর্ণ বালির শৈলশিরাকে সিফ বা অনুদৈর্ঘ্য বালিয়াড়ি বলে। অনেক সময় বার্থানের শিং অংশ প্রসারিত হয়ে সিফ বালিয়াড়িতে পরিণত হয়। সিফ বালিয়াড়িগুলি সাধারণত 100- 150 কিমি দীর্ঘ, 1 কিমির বেশি প্রশস্ত এবং 100 মিটারের বেশি উঁচু হয়।

উদাহরণ: থর মরুভূমিতে প্রচুর সিফ বালিয়াড়ি দেখা যায়।

অ্যাকলে বালিয়াড়ি (Akle Dune)

অনেক সময় একাধিক বার্খান বালিয়াড়ি পরস্পর যুক্ত হয়ে সারিবদ্ধভাবে এগিয়ে পিছিয়ে সাপের দীর্ঘ আঁকাবাঁকা দেহের মতো অবস্থান করে, একে অ্যাকলে বালিয়াড়ি বলে। এর এগিয়ে যাওয়া বাঁকটিকে লিংগুঅয়েড (Linguoid) এবং পিছিয়ে থাকা বাঁকটিকে বার্থানয়েড (Barchanoid) বলে।

নক্ষত্র বালিয়াড়ি (Star Dune)

যখন কোনো বালিয়াড়ির মধ্যভাগে একটি বালির শৃঙ্গ দেখা যায় এবং সেখান থেকে বিভিন্ন দিকে বালির শৈলশিরা ছড়িয়ে অবস্থান করে, তখন তাকে নক্ষত্র বালিয়াড়ি বা পিরামিড বালিয়াড়ি বলে। বিভিন্ন দিক দিয়ে বায়ু প্রবাহিত হলে এরূপ বালিয়াড়ি গড়ে ওঠে। শতাব্দীর পর শতাব্দী এই বালিয়াড়ির স্থান পরিবর্তন হয় না বলে মরুযাত্রীদের কাছে এটি স্থানচিহ্নের কাজ করে।

B অবস্থান অনুসারে বালিয়াড়ি –

মস্তক বালিয়াড়ি (Head Dune)

বায়ুর গতিপথে কোনো প্রস্তরখণ্ড বা টিলা অবস্থান করলে তার প্রতিবাত বা বায়ুদিকমুখী • অংশে যে বালিয়াড়ি গড়ে ওঠে, তাকে মস্তক বালিয়াড়ি বলে।

পুচ্ছ বালিয়াড়ি (Tail Dune)

প্রস্তরখণ্ড বা টিলার অনুবাত পার্শ্বে অর্থাৎ, মস্তক বালিয়াড়ির বিপরীতে যে বালিয়াড়ির সৃষ্টি হয়, তাকে পুচ্ছ বালিয়াড়ি বলে।

অগ্রবর্তী বালিয়াড়ি (Advanced Dune)

মস্তক বালিয়াড়ির কিছুটা আগে ঘূর্ণি বায়ুর জন্য অনেকসময় বালিয়াড়ির সৃষ্টি হয়। একে অগ্রবর্তী বালিয়াড়ি বলে।

পার্শ্ব বালিয়াড়ি (Lateral Dune)

বায়ু প্রবাহপথে বাধা পাওয়ার পর তার দুপাশ দিয়ে বয়ে যাওয়ার সময় যে বালিয়াড়ি গড়ে ওঠে, তাকে পার্শ্ব বালিয়াড়ি বলে।

পরবর্তী বালিয়াড়ি (Wake dune)

পার্শ্ব বালিয়াড়ির পরবর্তী পর্যায়ে যে বালিয়াড়ির সৃষ্টি হয়, তাকে পরবর্তী বালিয়াড়ি বলে।

লোয়েস (Loess)

‘Loess’ শব্দটি জার্মান শব্দ ‘Loss’ থেকে উদ্ভূত, যার অর্থ ‘সূক্ষ্ম পলি’। বায়ুবাহিত অতি সূক্ষ্ম বালিকণা (0.05 মিলিমিটারের কম ব্যাসযুক্ত) উৎস অঞ্চল থেকে দূরে কোথাও অবক্ষিপ্ত হয়ে যে সমভূমির সৃষ্টি হয়, তাকে লোয়েস বলে।

উদাহরণ : মধ্য এশিয়ার গোবি মরুভূমি থেকে বালুরাশি উড়ে চিনের হোয়াংহো নদী অববাহিকায় সঞ্চিত হয়ে লোয়েস সমভূমি গড়ে উঠেছে।

বালির শৈলশিরা (Sand Ridge)

বায়ুর গতিপথের সমান্তরালে বালি সঞ্চিত হয়ে সৃষ্ট বাঁধের ন্যায় ভূমিরূপকে বালির শৈলশিরা বলে। এগুলি 160 কিমি দীর্ঘ, ও কিমি প্রশস্ত ও 50 মিটারের মতো উচ্চ হয়ে থাকে।

বালির তরঙ্গ (Sand Ripple)

ঈষৎ অসমতল ভূপৃষ্ঠে মৃদু বায়ুপ্রবাহের ফলে লম্ফদান প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বালুকারাশি অনুবাত ঢালের তুলনায় প্রতিবাত ঢালে অধিক পরিমাণে জমা হয়। এর ফলে বালির তরঙ্গ বা বালুকা ঊর্মি সৃষ্টি হয়।

বালির পাত (Sand Sheet)

মরুভূমির অত্যন্ত সমতল অংশে বালির সঞ্চয় ঘটলে পাতলা বালির স্তর তৈরি হয়। একে বালির পাত বা বালির অবক্ষেপ বলে।

উদাহরণ:
লিবিয়ার বিখ্যাত ‘সেলিমা’ বালির পাত।
Related Keywords :

বায়ুর ক্ষয় কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ, বায়ুর ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ চিত্র সহ, বায়ুর সঞ্চয় কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ কে কি বলে, বায়ুর কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ, বায়ুর ক্ষয় ও সঞ্চয় কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ গুলি আলোচনা করো, বায়ুর সঞ্চয় কার্যের ফলে সৃষ্ট তিনটি ভূমিরূপ চিত্র সহ, বায়ুর সঞ্চয় কাজের পদ্ধতি গুলি কি কি, বায়ু ও জলধারার মিলিত কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ

Leave a Comment