বাংলার ঋতুবৈচিত্র্য প্রবন্ধ রচনা 400 শব্দে

বাংলার ঋতুবৈচিত্র্য প্রবন্ধ রচনা

বাংলার ঋতুবৈচিত্র্য প্রবন্ধ রচনা
বাংলার ঋতুবৈচিত্র্য প্রবন্ধ রচনা

বাংলার ঋতুবৈচিত্র্য প্রবন্ধ রচনা

“এমন স্নিগ্ধ নদী কাহার, কোথায় এমন ধূম্র পাহাড়!
কোথায় এমন হরিৎক্ষেত্র আকাশতলে মেশে!
এমন ধানের ওপর ঢেউ খেলে যায় বাতাস কাহার দেশে!”

ভূমিকা

সেই দেশটি হল বাংলাদেশ। আমাদের জন্মভূমি তথা মাতৃভূমি। এই বাংলাদেশ ঋতুবৈচিত্র্যে স্বতন্ত্র ও সমুজ্জ্বল। মানুষ প্রকৃতির সন্তান হওয়ায় তাদের জীবনে প্রাকৃতিক ঘটনাবলি প্রভাব ফেলতে বাধ্য। আজকের আধুনিক জীবনযাপনেও প্রকৃতির প্রভাব সুদূ রপ্রসারী। আজকের যান্ত্রিক জীবনে মুক্ত প্রকৃতির রূপ ও বৈচিত্র্যের আস্বাদ গ্রহণ করতে মানুষ ব্যাকুল।

গ্রীষ্ম

‘প্রখর তপন তাপে আকাশ তৃষায় কাঁপে’।

বৈশাখ জৈষ্ঠ্য মাসে ‘প্রচণ্ড অগ্নিবাণে’ পৃথিবীকে বিদ্ধ করে আসে বছরের প্রথম ঋতু গ্রীষ্ম। রুদ্র ভৈরবের মতো গ্রীষ্ম তার প্রখরতা দিয়ে সমগ্র প্রকৃতিকে গ্রাস করে। পৃথ্বী যেন কেঁপে ওঠে তারই ত্রাসে। সমস্ত নদী-নালা, গাছপালা শুকিয়ে যেন প্রকৃতি ঊষর মর পরিণত হয়। তবু ‘বৎসরের আবর্জনা’ ঘুচে গিয়ে এই গ্রীষ্মের মধ্য দিয়েই যেন নূতনের সূচনা হয়।

বর্ষা

গ্রীষ্মের মরুপ্রকৃতিকে ‘নবধারা জলে’ সিক্ত করতে আসে দ্বিতীয় ঋতু বর্ষা। ‘শ্যামল সুন্দর’ বর্ষা ঋতুতে প্রকৃতি নতুনভাবে সেজে ওঠে। নতুন সবুজ পাতায় গাছপালা হিল্লোলিত হয়। মেঘাচ্ছন্ন আকাশের রোমান্টিক আবহ বর্ষাকালে কবিমনে কাব্যরস সৃষ্টিতে উদ্দীপক হয়ে ওঠে। ‘আষাঢ়স্য প্রথম দিবস’ তাই সুদূর কালিদাস থেকে আধুনিককালের কবিদের কাছেও সমান প্রাসঙ্গিক। তবে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত আবার কখনও বন্যা নিয়ে আসে। শহরে বর্ষাকাল আবার সম্পূর্ণ বিপরীত। তাই কবি যথার্থই লেখেন- ‘শহরে বৃষ্টি জলকাদা মাখা/নোংরা দেদার’।

শরৎ

“আমরা বেঁধেছি কাশের গুচ্ছ
আমরা গেঁথেছি শেফালি-মালা।
নবীন ধানের মঞ্জরী দিয়ে
সাজিয়ে এনেছি ডালা।”

ভাদ্র-আশ্বিন মাসে মেঘের কোলে রোদের লুকোচুরির মধ্য দিয়েই শরতের আগমন। ‘অরুণ আলোর অঞ্জলি’ দিয়ে শরৎ তার সৌন্দর্যের ছটা বিকিরিত করে। কাশফুল আর শিউলি ফুলের শ্বেতশুভ্র সজ্জায় প্রকৃতি যেন উৎসবের সমারোহে মেতে ওঠে।

হেমন্ত

“হিমের রাতে ওই গগনের দীপগুলিরে
হেমন্তিকা করল গোপন আঁচল ঘিরে।”

রূপসী বাংলার ঋতুরঙ্গের চতুর্থ ঋতু হেমন্তের আগমন কার্তিক ও অগ্রহায়ণ মাসে। হেমন্তের প্রকাশ কিছুটা সমাহিত। হেমন্তে সংবৎসরের নতুন ফসল কাটা হয়। এরপর পড়ে থাকে রিক্ত মাঠ। হেমন্তের মধ্যে এক বিষণ্ণতার ভাব প্রচ্ছন্ন থাকে। হেমন্তের মধ্যে শরতের জৌলুস নেই। তবু হেমন্ত বাঙালির শস্যভাণ্ডারকে প্রাচুর্যে ভরে দিয়ে শিশিরের নিঃশব্দ চরণে লুপ্ত হয়ে যায়।

শীত

“শীতের হাওয়ায় লাগল নাচন

আমলকির ওই ডালে ডালে”

পৌষ ও মাঘ মাসে হাওয়ায় নৃত্যের তাল সংযুক্ত করে আসে শীতকাল। সকালে চারদিক কুয়াশায় ঢেকে গাঁদা, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকার উজ্জ্বল হাসিতে ধীরে ধীরে শীতের আত্মপ্রকাশ। শীতের আবহে গাছপালা তার পুরোনো পাতা ঝরিয়ে ফেলতে শুর করে। এই শীতকালে এক জড়ত্ব যেন মানুষকে ঘিরে থাকে। ঠান্ডার আবহে এইসময় মানুষের প্রাণ প্রাচুর্যে যেন খানিক রিক্ততা এসে বাসা বাঁধে।

বসন্ত

‘দখিন হাওয়া জাগো জাগো’

শীতের জড়ত্বের অবসানে দখিন হাওয়ার হিল্লোল তুলে ফাল্গুন চৈত্র মাসে হৈ-হৈ করে এসে পড়ে ঋতুরাজ বসন্ত। সমগ্র প্রকৃতি যেন এইসময় উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। শিমুল, পলাশ ফুলের রক্তিম আভায় প্রকৃতিতে যেন আগুন লেগে যায়। বসন্ত প্রেমের ঋতু। বাঙালির মনকে নতুন প্রাণের উদ্দীপনার পরশে জাগিয়ে দেয় সে। বছরে শেষ ঋতু বসন্তের চলে যাওয়া তাই খানিক দুঃখেরও বটে। তাই কবির ভাষায় বলতে ইচ্ছা করে-

“রাঙিয়ে দিয়ে যাও যাও 
যাও গো এবার যাওয়ার আগে।”

উপসংহার

বাংলার ঋতুবৈচিত্র্য এই জন্যই গুরুত্বপূর্ণ কারণ তার রূপের বিচিত্রতায় ধরা থাকে বৈপরীত্যের সৌন্দর্য। বাংলার ঋতুরঙ্গ যেন মানুষের জীবনের চলমানতায় গতিময়তার মন্ত্র নিয়ে আসে। এই প্রবহমানতায় যেমন রূপ-অরূপ আছে তেমনই আছে সুখ-দুঃখের বৈপরীত্য। তবে দুঃখকে অতিক্রম করে সুখকে জয় করে নেওয়ার উদ্যমই এই ঋতুবৈচিত্র্যে অন্তর্নিহিত থাকে।

Leave a Comment