বাংলায় নীলচাষিদের কল্যাণে হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকার হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়-এর ভূমিকা
বাংলায় নীলচাষিদের কল্যাণে হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকার হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়-এর ভূমিকা কী ছিল? |
ভূমিকা
ভারতীয় সাংবাদিকতা ও বঙ্গীয় জাগরণের ইতিহাসে হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় (১৮২৪-১৮৬১ খ্রি.) সম্পাদিত ইংরেজি সংবাদপত্র হিন্দু প্যাট্রিয়ট এক বিশিষ্ট স্থান অধিকার করে রয়েছে। সমকালীন বাংলার সমাজের বিভিন্ন ঘটনার চিত্র এই পত্রিকায় ফুটে উঠেছিল।
মুখ্য ভূমিকা
হিন্দু প্যাট্রিয়টের সম্পাদক হিসেবে হরিশচন্দ্র মুখ্য ভূমিকা পালন করেন নীল বিদ্রোহের সময় (১৮৫৯-৬০ খ্রি.)। সিপাহি বিদ্রোহের দু-বছর পর নীল বিদ্রোহের সময় দরিদ্র ও অসহায় নীলচাষিদের উপর নীলকর সাহেবদের অত্যাচারের প্রতিবাদে ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’ সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছিল। হরিশচন্দ্র নীলচাষিদের সমর্থনে এগিয়ে আসেন এবং তাঁর অনলবর্ষী লেখনীর মাধ্যমে দরিদ্র প্রজাদের উপর নীলকরদের অত্যাচারের সংবাদ নিয়মিত প্রকাশ করতে থাকেন।
প্রেক্ষাপট
ইংল্যান্ডে শিল্পবিপ্লবের ফলে বস্ত্রশিল্পের উন্নতি ঘটে। ক্রমে সমস্ত ইউরোপে তা ছড়িয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় কাপড় রং করার জন্য রঞ্জক হিসেবে নীলের চাহিদা দারুণভাবে বৃদ্ধি পায়। নীলকরদের চাপে বাংলার চাষীরা ধান, পাট, তামাক প্রভৃতি ফসলের চাষ করার পরিবর্তে নীলের চাষ করতে বাধ্য হয় তা না করলে অকথ্য অত্যাচার সহ্য করতে হত। ফলে চাষিরা রুখে দাঁড়ায়। এই সময় কয়েকজন দেশপ্রেমিক, হৃদয়বান শিক্ষিত মধ্যবিত্ত ব্যক্তি নীলচাষিদের পক্ষে কলম ধরেন। এঁদের মধ্যে হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের নাম সর্বাগ্রে উল্লেখযোগ্য।
অবদান
তিনি ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’-এর পাতায় নীলচাষীদের দুর্দশা এবং নীলকরদের অত্যাচার সম্পর্কে সুচিন্তিত প্রবন্ধ রচনা করে সরকারের চোখ খুলে দেন। শিশিরকুমার ঘোষ গ্রামে গ্রামে ঘুরে নীলকর কর্তৃক নীলচাষিদের উপর অত্যাচারের প্রত্যক্ষদর্শী বিবরণ পাঠালে হরিশচন্দ্র তা ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’-এ ছাপাতেন। এর ফলে চাষীদের বিদ্রোহের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। ফলস্বরূপ সরকার দমন নীতি পরিহার করে ‘নীল কমিশন’ গঠন করে। নীল কমিশনের রিপোর্ট পাওয়ার পর সরকার ঘোষণা করে যে, জোরজবরদস্তি করে কাউকে দিয়ে নীলচাষ করানো যাবে না।