পৃথিবীর অভিগত গোলক আকৃতির সপক্ষে প্রমাণ দাও

পৃথিবীর অভিগত গোলক আকৃতির সপক্ষে প্রমাণ দাও
পৃথিবীর অভিগত গোলক আকৃতির সপক্ষে প্রমাণ দাও।

অভিগত গোলক

কোনো গোলকের দুই প্রান্ত চাপা ও মধ্যভাগ স্ফীত হলে, তাকে অভিগত গোলক বলে। পৃথিবীর উত্তরমেরু ও দক্ষিগমেরু প্রান্তদ্বয় একটু চাপা ও মধ্যভাগ অর্থাৎ নিরক্ষীয় অঞ্চল একটু স্ফীত। তাই পৃথিবীকে অভিগত গোলক বলা হয়।

পৃথিবীর অভিগত গোলক আকৃতির সপক্ষে প্রমাণসমূহ

বিজ্ঞানীদের মতে, পৃথিবীর আকৃতি সম্পূর্ণ গোলাকার নয়, উপবৃত্তের মতো বা অভিগত গোলাকৃতি। এর সপক্ষে প্রমাণগুলি হল-

মেরু ব্যাস থেকে নিরক্ষীয় ব্যাস বেশি

পৃথিবীর নিরক্ষীয় ব্যাস 12757 কিমি এবং মেরু ব্যাস 12714 কিমি। পৃথিবী নিখুঁত গোলাকার হলে উভয় অঞ্চলের ব্যাসের পার্থক্য হত না। ব্যাসের মান থেকে বোঝা যায়, মেরুদ্বয় অপেক্ষা নিরক্ষীয় অঞ্চলের পরিধি বেশি অর্থাৎ পৃথিবী অভিগত গোলক।

ঘড়ির সময়ের পার্থক্য

1671 খ্রিস্টাব্দে জ্য রিচার নামে এক ফরাসি জ্যোতির্বিদ গিয়ানার রাজধানী কেইন দ্বীপে (5° উত্তর অক্ষাংশ) দেখতে পান তাঁর দোলকযুক্ত ঘড়ি প্রতিদিন 2½ মিনিট করে স্লো হয়ে যাচ্ছে। অথচ ঘড়িটি প্যারিস শহরে (49° উ: অক্ষাংশে) ঠিকমতো সময় দিত। এই ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানা গেল, দোলকযুক্ত ঘড়ির দোলনকাল নির্ভর করে সেই স্থানের মাধ্যাকর্ষণ বলের ওপর। পরবর্তীকালে, স্যার আইজ্যাক নিউটন এই ঘটনার ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বলেন, যে স্থান পৃথিবীর কেন্দ্রের যত কাছে সেই স্থানের ওপর মাধ্যাকর্ষণ বলের প্রভাবও তত বেশি। অর্থাৎ, নিরক্ষীয় অঞ্চলে ঘড়ির দোলনকাল বেশি এবং মেরু অঞ্চলে কম কারণ পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে মেরু অঞ্চলের দূরত্ব নিরক্ষীয় অঞ্চল অপেক্ষা কম। এর থেকে পৃথিবীর অভিগত গোলাকৃতির প্রমাণ পাওয়া যায়।

পৃথিবীর আবর্তন গতি

গতিবিদ্যার নিয়ম অনুসারে, কোনো নমনীয় গোলাকার বস্তু তার অক্ষকে কেন্দ্র করে ঘুরলে, ওই বস্তুর ওপর ও নীচের অংশ কেন্দ্রমুখী বলের জন্য সংকুচিত ও মধ্যভাগ কেন্দ্রবহির্মুখী বলের প্রভাবে স্ফীত হয়। সৃষ্টিলগ্নে পৃথিবী ছিল এক জ্বলন্ত গ্যাসীয় পিণ্ড। তখন থেকেই পৃথিবী নিজ অক্ষকে কেন্দ্র করে ঘুরে চলেছে। সুতরাং, এই আবর্তন গতির জন্য পৃথিবী অভিগত গোলাকার রূপ ধারণ করে অর্থাৎ পৃথিবীর মধ্যভাগ স্ফীত ও প্রান্তদ্বয় চাপা হয়।

ওজনের পার্থক্য

যে স্থান পৃথিবীর কেন্দ্রের যত নিকটে অবস্থিত হবে, মাধ্যাকর্ষণ বল সেই স্থানে অবস্থিত বস্তুর ওপর তত বেশি হবে। ফলে বস্তুর ওজনও বাড়বে। তাই দেখা গেছে, কোনো বস্তুর ওজন নিরক্ষীয় অঞ্চল থেকে মেরু অঞ্চলে বেশি হয়। কারণ পৃথিবীর মেরু অঞ্চল চাপা হওয়ায় তা পৃথিবীর কেন্দ্রের কাছে এবং নিরক্ষীয় প্রদেশ স্ফীত হওয়ায় তা দূরে অবস্থান করে। পৃথিবী অভিগত গোলকের মতো বলেই বস্তুর ওজন সর্বত্র সমান না হয়ে মেরু অঞ্চলে বেশি এবং নিরক্ষীয় অঞ্চলে কম হয়।

পৃথিবীর বৃত্তচাপের দৈর্ঘ্যের পার্থক্য

রয়্যাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস নামক সংস্থা কিটো (0°), প্যারিস (49° উ:) এবং ল্যাপল্যান্ড (68° উ:) শহরে পৃথিবীর পরিধির একটি নির্দিষ্ট বৃত্তচাপের দৈর্ঘ্য নিখুঁতভাবে পরিমাপ করে। ওই পরীক্ষায় দেখা গেছে, কিটো শহরে বৃত্তচাপের দৈর্ঘ্য সবচেয়ে কম, প্যারিস শহরের বৃত্তচাপের দৈর্ঘ্য কিটো শহর থেকে বেশি এবং ল্যাপল্যান্ড শহরের বৃত্তচাপের দৈর্ঘ্য সবচেয়ে বেশি। এই পরীক্ষার দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, পৃথিবীর নিরক্ষীয় অঞ্চল যেহেতু মেরু অঞ্চলের তুলনায় স্ফীত তাই নিরক্ষীয় অঞ্চল থেকে মেরু অঞ্চলের দিকে বৃত্তচাপের দৈর্ঘ্য ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে।

Leave a Comment