পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারে রাজা রামমোহন রায়ের উদ্যোগ সম্পর্কে আলোচনা করো। |
ভূমিকা
রাজা রামমোহন রায়ের সংস্কার আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য ছিল কুসংস্কার ও অজ্ঞতার অন্ধকার দূর করে সাধারণ মানুষকে সত্যের পথ দেখানো। আর এ কাজ সম্ভব একমাত্র শিক্ষাবিস্তারের মাধ্যমে। আর এই শিক্ষা হবে পাশ্চাত্য শিক্ষা বা আধুনিক শিক্ষা, যা মানুষকে আধুনিক চিন্তাধারায় উদ্বুদ্ধ করতে পারবে। এজন্যই তিনি পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারে উদ্যোগী হয়েছিলেন।
পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের উদ্দেশ্য
কুসংস্কারমুক্ত সমাজ গঠন
পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারে রাজা রামমোহন রায়ের উদ্দেশ্য ছিল কুসংস্কারমুক্ত সমাজ গঠন।
পাশ্চাত্য জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রসার
রাজা রামমোহন রায়ের অপর উদ্দেশ্য ছিল পাশ্চাত্য জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রসার ঘটিয়ে আধুনিক সমাজ গঠন করা।
পাশ্চাত্য শিক্ষাপ্রসারে রাজা রামমোহন রায়ের ভূমিকা
রাজা রামমোহন রায় ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারের একজন উৎসাহী সমর্থক ছিলেন। ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষাপ্রসারে তাঁর অবদান স্মরণীয় হয়ে আছে।
অ্যাংলো-হিন্দু স্কুল প্রতিষ্ঠা
রাজা রামমোহন রায় ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার শুঁড়িপাড়ায় একটি ইংরেজি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি নিজের খরচে এই স্কুলের পরিচালনা করতেন। ১৮২২ খ্রিস্টাব্দে এর নামকরণ হয় অ্যাংলো-হিন্দু স্কুল। পরে এটি ইন্ডিয়ান আকাডেমি নামে পরিচিত হয়।
হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা
রাজা রামমোহন রায় রাজা রামমোহন রায় ডেভিড হেয়ারের শিক্ষাবিস্তারের কাজে অন্যতম প্রধান সহায়ক ছিলেন। ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে ডেভিড হেয়ার, স্যার হাইড ইস্টের উদ্যোগে যে হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয় তাতে রাজা রামমোহনের ঐকান্তিক সহযোগিতা ছিল। কিন্তু কয়েকজন গোঁড়া হিন্দুনেতা যখন জানতে পারেন যে, রামমোহন এর সঙ্গে জড়িত, তখন তারা রামমোহনকে বিদ্যালয় কমিটি থেকে বাদ দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করেন। এই অবস্থায় রাজা রামমোহন রায় নিজেই কমিটি থেকে সরে গিয়ে হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠার পথ সুগম করে দেন।
ক্যালকাটা স্কুল বুক সোসাইটিতে সহযোগিতা
১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে ডেভিড হেয়ারের উদ্যোগে ক্যালকাটা স্কুল বুক সোসাইটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল ভালো বই প্রকাশ করা। রাজা রামমোহন রায় এই প্রতিষ্ঠানের একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন।
সংস্কৃত কলেজে ইংরেজি শিক্ষার ব্যবস্থা
১৮২৪ খ্রিস্টাব্দে গভর্নর জেনারেল লর্ড আমহার্স্ট কলকাতায় সংস্কৃত কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। রাজা রামমোহন রায় তাঁর এই নীতির তীব্র বিরোধিতা করেন। তিনি পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারের জন্য সরকারি অর্থ ব্যয় করার অনুরোধ করেন। লর্ড আমহার্স্ট রামমোহনের কথা না মানলেও সংস্কৃত কলেজে ইংরেজি শিক্ষার ব্যবস্থা করেন।
জেনারেল অ্যাসেম্বলিজ ইনস্টিটিউশন প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা
স্কটিশ মিশনারি আলেকজান্ডার ডাফ ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে জেনারেল অ্যাসেম্বলিজ ইনস্টিটিউশন প্রতিষ্ঠা করেন। রাজা রামমোহন রায় এই কাজে তাঁকে সবরকমভাবে সহযোগিতা করেছিলেন।
উপসংহার
রাজা রামমোহন রায় ছিলেন প্রকৃত পাশ্চাত্য শিক্ষাপ্রেমিক। এজন্য অনেকে তাঁর সমালোচনা করলেও তাঁকে ‘নব ভারতের অগ্রদূত’ বলে অভিহিত করা হয়।