নোবেলজয়ী বাঙালি অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনা

নোবেলজয়ী বাঙালি অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনা
নোবেলজয়ী বাঙালি অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনা

ভূমিকা

বাঙালি জাতির গৌরবের ইতিহাস সুপ্রাচীন। বহুকাল আগে থেকেই জ্ঞান-বিজ্ঞান-শিল্প-স্থাপত্য-সাহিত্যচর্চায় বাঙালিদের অবদান সমগ্র ভারতবাসী তথা বিশ্ববাসীর নজর কেড়েছে। সম্প্রতি বাঙালির এই গৌরবের ইতিহাসে নতুন পালক সংযোজন করেছেন নোবেলজয়ী বাঙালি অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়। অমর্ত্য সেনের পর তিনি অর্থনীতিতে নোবেলজয়ী দ্বিতীয় বাঙালি। তাঁর নোবেল জয়ের সঙ্গে সঙ্গে সমগ্র বাঙালি সমাজ চতুর্থ বারের জন্য এই সম্মান অর্জন করল।

জন্ম ও পরিচয়

বাংলার রত্ন অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দের ২১ ফেব্রুয়ারি মহারাষ্ট্রের মুম্বাইয়ে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব থেকেই অর্থনীতির আবহে তাঁর বেড়ে ওঠা। তাঁর বাবা দীপক বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন প্রেসিডেন্সি কলেজে অর্থনীতির বিভাগীয় প্রধান এবং মা নির্মলা বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন ‘কলকাতা সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোশ্যাল সায়েন্সেস’-এর অর্থনীতি বিভাগের প্রধান। তাই জন্মসূত্রেই অর্থনীতির সঙ্গে তাঁর নাড়ির টান রয়েছে বলা যায়। কলকাতার সাউথ পয়েন্ট স্কুলে পড়াশোনা শুরু করেন তিনি, এরপর প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক হয়ে দিল্লির জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। দিল্লি থেকে উচ্চশিক্ষার জন্য সোজা পাড়ি দেন মার্কিন মুলুকে এবং সেখানকার হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি থেকে ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। তাঁর গবেষণাপত্রের বিষয় ছিল ‘এসেস ইন ইনফরমেশন ইকনমিক্স’। ২০১৫ খ্রিস্টাব্দে তাঁর দীর্ঘদিনের গবেষণার সঙ্গী এস্থার ডাফলোর সঙ্গে তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।

কর্মজীবন

কর্মসূত্রে অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় মার্কিন মুলুকের ম্যাসাচুসেটস্ ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির অর্থনীতির অধ্যাপক। তাঁর অর্থনীতি গবেষণার মূল বিষয়ই ছিল বিশ্বের দারিদ্র্যকে যথাযথভাবে উপলব্ধি করা এবং এই দারিদ্র্য দূরীকরণের জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থাগ্রহণ। তিনি এবং তাঁর স্ত্রী মিলিত উদ্যোগে ২০১৩ সালে গঠন করেন ‘আব্দুল লতিফ জামিল পোভার্টি অ্যাকশন ল্যাব’ এবং এই সংস্থার মাধ্যমেই তাঁরা একবিংশ শতকের আধুনিক বিশ্বের দারিদ্র্যসংক্রান্ত গবেষণা চালিয়ে যান। এছাড়াও তিনি ‘ন্যাশনাল ব্যুরো অব ইকনমিক রিসার্চ’-এর প্রেসিডেন্ট পদেও দীর্ঘসময় অধিষ্ঠিত ছিলেন। তবে তাঁর সুনাম সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে তাঁর ‘পুওর ইকনমিক্স’ বইটির জন্য। স্ত্রী এস্থার ডাফলো এবং তাঁর যৌথ উদ্যোগে রচিত এই বইটির জন্যই ২০১৯ খ্রিস্টাব্দে তাঁরা যৌথভাবে অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার পান। সমগ্র বিশ্বের পঞ্চম নোবেলজয়ী দম্পতি হিসেবে তাঁরা এই খেতাব অর্জন করেন। ‘পুওর ইকনমিক্স’ সমগ্র বিশ্বের অর্থনীতিতে দারিদ্র্যের স্বরূপ বিশ্লেষণ করতে এবং দারিদ্র্য দূরীকরণে গৃহীত সবথেকে কার্যকর ব্যবস্থা কী হওয়া উচিত তার যুক্তিসম্মত দিশা দেখাতে সমর্থ হয়েছে। এই গ্রন্থ অর্থনীতির জটিল সমস্যাগুলিকে সহজ, সরল, প্রাঞ্জল ভাষায় ব্যাখ্যা করে গোটা বিশ্বকে দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াই করার নতুন হাতিয়ারের সন্ধান দিয়েছে। উন্নয়ন অর্থনীতির গবেষণায় এটি একটি পাথেয় মডেল হিসেবে গণ্য হয়েছে।

উপসংহার

আশা করা যায়, এই বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদের হাত ধরেই আধুনিক বিশ্ব ‘দারিদ্র্য’কে জয় করতে সক্ষম হবে। ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশ, দারিদ্র্য যেখানে উন্নয়নের পথে সবথেকে বড়ো চ্যালেঞ্জ, আশা করা যায় অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই ‘পুওর ইকনোমিক্স’ থিয়োরির পথেই খুঁজে পাবে দারিদ্র্য মুক্তির উপায়। আপাতত আমরা ভারতবাসীরা আসন্ন সেই সোনার দিনের প্রতীক্ষারত।

Leave a Comment