নেপোলিয়ন মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা কার্যকর করার জন্য কী ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন? নেপোলিয়নের পতনে এই ব্যবস্থা কতটা দায়ী ছিল

নেপোলিয়ন মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা কার্যকর করার জন্য কী ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন? নেপোলিয়নের পতনে এই ব্যবস্থা কতটা দায়ী ছিল
নেপোলিয়ন মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা কার্যকর করার জন্য কী ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন? নেপোলিয়নের পতনে এই ব্যবস্থা কতটা দায়ী ছিল?

নেপোলিয়ন ইংল্যান্ডকে বাণিজ্যিক দিক দিয়ে ধ্বংস করে তাঁর অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দেওয়ার জন্য মহাদেশীয় ব্যবস্থা নামে অর্থনৈতিক অবরোধ ব্যবস্থা জারি করেন।

নীতি

এই ব্যবস্থা কার্যকর করার জন্য তিনি বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। কোনোদেশ হয়তো সহজেই মহাদেশীয় ব্যবস্থা মেনে নিয়েছিল; আবার কোনো কোনো দেশ মহাদেশীয় ব্যবস্থা মানতে অস্বীকার করায় নেপোলিয়নের বিষ নজরে পড়েছিল। এই সকল দেশের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করতে নেপোলিয়ন কুণ্ঠিত হননি।

প্রাশিয়া, রাশিয়া, অস্ট্রিয়া

মিত্র দেশ হিসেবে এই সকল দেশ প্রথমেই মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা মেনে নিয়ে ইংল্যান্ডকে কোনঠাসা করার পরিকল্পনা গ্রহণ করে।

পোর্তুগাল ও স্পেন

স্পেন ও পোর্তুগাল মহাদেশীয় ব্যবস্থা অস্বীকার করায় নেপোলিয়ন ১৮০৭ খ্রিস্টাব্দে পোতুর্গাল দখল করে এবং পোর্তুগাল থেকে ফেরার পথে স্পেনকেও দখল করে নেয়।

পোপকে বন্দি

রোমের পোপ এই ব্যবস্থা মানতে অস্বীকার করায় নেপোলিয়ন ১৮০৯ খ্রিস্টাব্দে পোপকে বন্দি করেন।

সুইডেন আক্রমণ

মহাদেশীয় ব্যবস্থা মানতে অস্বীকার করায় নেপোলিয়নের নির্দেশে রাশিয়া সুইডেন দখল করে মহাদেশীয় ব্যবস্থা মানতে বাধ্য করে।

এভাবে নেপোলিয়ন তাঁর মহাদেশীয় ব্যবস্থা কার্যকর করতে উদ্যোগী হয়েছিলেন।

নেপোলিয়নের পতনে মহাদেশীয় ব্যবস্থার ভূমিকা

মহাদেশীয় ব্যবস্থা নেপোলিয়নের পক্ষে শুভ হয় নি। কারণ এর কিছু মারাত্মক ফলাফল তাঁর পতনের পথকে প্রশস্ত করেছিল।

ফ্রান্সের আর্থিক সংকট সৃষ্টি

মহাদেশীয় ব্যবস্থার অর্থনৈতিক ফলাফল ফ্রান্সের পক্ষে অনুকূল ছিল না। কারণ দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি ফ্রান্সের সর্বস্তরের মানুষকে বীতশ্রদ্ধ করে তুলেছিল। ফ্রান্সের মানুষ নেপোলিয়নের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলে।

উপদ্বীপের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ

মহাদেশীয় ব্যবস্থা কার্যকর করতে গিয়ে নেপোলিয়ন স্পেন, পোর্তুগাল ও ইংরেজদের যৌথবাহিনীর সঙ্গে দীর্ঘকাল ধরে (১৮০৮-১৮১৩ খ্রি.) যুদ্ধ পরিচালনা করে বহু সৈন্য, অর্থ ও সম্মান ধূলিসাৎ করেন। এই পরাজয় তাঁকে আরো বড় বিপদের সম্মুখীন করে।

বিরোধের সূচনা

মহাদেশীয় ব্যবস্থা কার্যকর করতে গিয়ে তিনি গোটা ইউরোপে অপ্রিয় হয়ে ওঠেন। পোপকে বন্দি করার ফলে ক্যাথলিক সম্প্রদায় নেপোলিয়নের প্রতি বিরাগভাজন হয়।

ইংল্যান্ডের রপ্তানি বৃদ্ধি

মহাদেশীয় ব্যবস্থায় ইংল্যান্ড ক্ষতিগ্রস্ত না হয়ে লাভবান হয়েছিল। ইংল্যান্ডের রপ্তানি বাণিজ্য বৃদ্ধি পেয়েছিল। মহাদেশীয় অবরোধের কারণে বহির্জগতে অনেক নতুন বাজার ইংল্যান্ডের নিয়ন্ত্রণে এসেছিল। তাই প্রাথমিক ধাক্কা সামাল দিয়ে ইংল্যান্ড অর্থনৈতিক দিক দিয়ে স্বমহিমায় ফিরে আসে।

রাশিয়া আক্রমণ

রাশিয়ার জার ১৮১০ খ্রিস্টাব্দে মহাদেশীয় ব্যবস্থা মানতে অস্বীকার করায় নেপোলিয়ন রাশিয়া আক্রমণ করেন। পরিণাম স্বরূপ তাঁর গ্র্যান্ড আর্মি ধ্বংস হয়ে যায়। তাই রাশিয়া আক্রমণ ছিল তাঁর মস্ত বড়ো ভুল।

তাই ঐতিহাসিক লজ এর ভাষায়, ‘একজন রাষ্ট্রনীতিবিদ্ হিসেবে নেপোলিয়নের অযোগ্যতার সর্বাধিক বড় প্রমাণ হল মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা (The Continental System was the most Strupendous proof of Napoleon’s Incapacity as a statesman.)

Leave a Comment