নেপোলিয়ন প্রবর্তিত ‘মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা’ ইংল্যান্ডের উপর কীরূপ প্রভাব ফেলেছিল? |
ইংল্যান্ডের উপর ‘মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা’-র প্রভাব
১৮০৬ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডকে অর্থনৈতিক দিক থেকে পঙ্গু করার উদ্দেশ্যে ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়নের গৃহীত মহাদেশীয় ব্যবস্থা ইংল্যান্ডের অর্থনীতির পক্ষে বিশেষ ক্ষতিকারক ছিল। কেননা পূর্বে ইংল্যান্ডে প্রস্তুত পণ্যের এক-তৃতীয়াংশ এবং উপনিবেশ থেকে আমদানিকৃত পণ্যের তিন-চতুর্থাংশ ইংল্যান্ড ইউরোপের বাজারে বিক্রি করত। এই বাজার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ইংল্যান্ডে কলকারখানা বন্ধ, বেকারত্ব বৃদ্ধি ও খাদ্যাভাবজনিত কারণে তীব্র অর্থনৈতিক সংকট দেখা দেয়।
দ্বিতীয়ত, ১৮০৬-১০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে প্রাথমিক সংকট কাটিয়ে ওঠার উপায় হিসেবে ইংল্যান্ড আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, তুরস্ক ও বাল্টিক উপকূল অঞ্চলে নতুন বাজার দখল করে তার পণ্য বিক্রির মাধ্যমে অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়।
তৃতীয়ত, মহাদেশীয় অবরোধ সত্ত্বেও ইংল্যান্ড তার শক্তিশালী নৌবহরকে কাজে লাগিয়ে চোরাপথে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে তার রপ্তানি-বাণিজ্য অব্যাহত রাখে এবং সমুদ্রপথে নিরপেক্ষ দেশগুলিতে জাহাজ চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে ইংল্যান্ড ওইসব দেশের মাল ইউরোপের বাজারে পরিবহন করতে সক্ষম হয়, ফলে ইংল্যান্ডের ঔপনিবেশিক বাণিজ্যে নতুন জোয়ার আসে।
চতুর্থত, ইংল্যান্ড ১৮০৭ খ্রিস্টাব্দে অর্ডারস-ইন-কাউন্সিল ঘোষণা করে মহাদেশীয় অবরোধ প্রথাকে ব্যর্থ করতে সচেষ্ট হলেও আমেরিকা ও ডেনমার্কের মতো নৌশক্তিধর দেশগুলি তা মানতে অস্বীকার করে। তাই ইংল্যান্ড বাধ্য হয়ে আমেরিকার কয়েকটি বন্দর ও ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেনে গোলাবর্ষণ করে, আবার অর্ডারস-ইন-কাউন্সিল ঘোষণার মাধ্যমে নিরপেক্ষ দেশগুলিকে অবাধ বাণিজ্যের সুযোগ করে দিতে ইংল্যান্ড এক ধরনের লাইসেন্স বিক্রি করে প্রচুর আয় করে।
তাই ঐতিহাসিক মর্স স্টিফেনস (Morse Stephens)-এর মতে, ‘মহাদেশীয় অবরোধ সামগ্রিকভাবে ইংল্যান্ডের বাণিজ্যিক সমৃদ্ধি ঘটায়- অবনতি নয়’। (The system on the whole increased rather than decreased the commercial prosperity of England.)