নেপোলিয়ন ইউরোপের পুনর্গঠন কীভাবে করেছিলেন

নেপোলিয়ন ইউরোপের পুনর্গঠন কীভাবে করেছিলেন

নেপোলিয়ন ইউরোপের পুনর্গঠন কীভাবে করেছিলেন
নেপোলিয়ন ইউরোপের পুনর্গঠন কীভাবে করেছিলেন?

নেপোলিয়ন বোনাপার্ট কেবলমাত্র রণনিপুণ সেনাপতি ছিলেন না- তিনি ছিলেন একজন দক্ষ সংগঠক। নেপোলিয়ন ইউরোপের বিভিন্ন দেশ জয় করে পুরাতনতন্ত্র ধ্বংস করেন এবং ইউরোপের পুনর্গঠন করেন। এ প্রসঙ্গে ঐতিহাসিক ডেভিড থমসন (David Thomson) বলেছেন, যেখানেই নেপোলিয়নের বাহিনী প্রবেশ করেছে সেখানেই পুরাতনতন্ত্রের অবসান ঘটেছে।

পুনর্গঠনের লক্ষ্য

ইউরোপের পুনর্গঠনে নেপোলিয়নের লক্ষ। ছিল ফ্রান্সের চারপাশে অনুগত রাষ্ট্র সৃষ্টি করা।

নবগঠিত রাজ্যের ভিত্তি

নেপোলিয়ন সৃষ্ট নবগঠিত রাজ্যের প্রধান ভিত্তি ছিল নেপোলিয়নের প্রতি ব্যক্তিগত আনুগত্য।

ইটালি

নেপোলিয়নের সাম্রাজ্য পুনর্গঠনের সর্বাধিক ও সুদূরপ্রসারী পরিবর্তন ঘটেছিল ইটালি ও জার্মানির রাজ্যগুলিতে। নেপোলিয়ন ইটালির পুনর্গঠন করেন।

  • অস্ট্রিয়া ইটালির কয়েকটি অঞ্চল দখল করে রেখেছিল। নেপোলিয়ন অস্ট্রিয়াকে পরাজিত করে ওই অঞ্চলগুলিকে ফরাসি আশ্রিত রাজ্যে পরিণত করেন। নেপোলিয়ন নিজেকে ইটালির রাজা (King of Italy) বলে ঘোষণা করেন। এখানে তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে তাঁর ও জোসেফাইনের পুত্র ইউজিন বুহারনেকে শাসক নিযুক্ত করেন।
  • তিনি পোপকে বন্দি করেন এবং পোপের রাজা রোম নগরীকে ফ্রান্সের সঙ্গে যুক্ত করেন।
  • তিনি ইটালির টাসকানি, পিডমন্ট, জেনোয়া প্রভৃতি দখল করে ফ্রান্সের সঙ্গে যুক্ত করেন।
  • নেপোলিয়ন তাঁর ভাই জোসেফকে (Joseph) দক্ষিণ ইটালির রাজা হিসেবে নেপলসের সিংহাসনে বসান।

জার্মানি

নেপোলিয়নের জার্মানি জয় ও তার পুনর্গঠন ছিল চমকপ্রদ। তখন জার্মানি প্রায় ৩০০টি’ রাজ্যে বিভক্ত ছিল। নেপোলিয়ন জার্মানি জয় করে ৩০০টি রাজ্যকে পুনর্গঠন করে ৩৯টি রাজ্যে পরিণত করেন।

  • নেপোলিয়ন জার্মানিকে অস্ট্রিয়ার প্রভাবমুক্ত করার চেষ্টা করেন। তিনি ব্যাভেরিয়া ও তার পাশের অঞ্চল নিয়ে গঠন করেন ব্যাভেরিয়া রাজ্য। তিনি উইটেনবার্গ ও ব্যাডেনকে নিয়ে অস্ট্রিয়ার প্রভাবমুক্ত দুটি রাজ্য গঠন করেন।
  • বাইনের রাষ্ট্রজোট (কনফেডারেশন অফ দ্য রাইন, Confederation of the Rhine)। তিনি ব্যাভেরিয়া, উইটেনবার্গ, স্যাক্সনি, ব্যাডেন-সহ দক্ষিণ-পশ্চিম জার্মানির অনেকগুলি রাজ্যকে নিয়ে রাইনের রাষ্ট্রজোট বা ‘কনফেডারেশন অফ দ্য রাইন’ গঠন করেছিলেন। প্রথমে ১৬টি ও পরে ১৮টি জার্মান রাজ্য নিয়ে কনফেডারেশন অফ দ্য রাইন গঠিত হয়েছিল।
  • ওয়েস্টফেলিয়া রাজ্য (Kingdom of Westphalia): নেপোলিয়ন হ্যানোভার, হেমফেলেস ও স্যাক্সনি রাজ্যের সমন্বয়ে ওয়েস্টফেলিয়া রাজ্য গঠন করেন। তাঁর ভাই জেরোম (Jerome) এই রাজ্যের শাসক নিযুক্ত হন।
  • গ্র্যান্ড চাচি অফ ওয়ারশ (Grand Duchy of Warsaw): নেপোলিয়ন প্রাশিয়া ও পোল্যান্ডের অংশ নিয়ে গঠন করেছিলেন ‘গ্র্যান্ড ডাচি অফ ওয়ারশ’ নামক একটি নতুন রাজ্য। এই রাজ্যটিকে স্যাক্সনির রাজার অধীনে রাখা হয়।

ইউরোপের পুনর্গঠন করে ইটালি ও জার্মানির ঐক্যের পথ প্রশস্ত করা ছিল নেপোলিয়নের বড়ো কৃতিত্ব।

ইউরোপে জাতীয়তাবাদের প্রসারে নেপোলিয়নের ভূমিকা

কোনো কোনো ঐতিহাসিক মনে করেন, ইউরোপের এবং বিশেষ করে জার্মানি ও ইটালির পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে নেপোলিয়ন ওই সকল দেশে জাতীয় ঐক্য স্থাপনের নীতিকে গ্রহণ করেন। নেপোলিয়ন বিচ্ছিন্ন রাজ্যগুলিতে একই ধরনের শাসনব্যবস্থা, করকাঠামো, বাধ্যতামূলক সামরিক শিক্ষা ও আইনবিধি প্রবর্তন করে পুরাতন ব্যবস্থা ভেঙে দেন। রাজ্যগুলি নেপোলিয়নের অধীনেই জাতীয় সার্বভৌমত্বের স্বাদ অনুভব করতে শেখে। এই জাতীয়তাবোধই একসময় তাদের সাহায্য করেছিল নেপোলিয়নের অধীনতা থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন করতে।

আরও পড়ুন – ভারতে রেলপথ প্রবর্তনের উদ্দেশ্য ও প্রভাব আলোচনা করো

Leave a Comment