নেপোলিয়নের পতনের জন্য মহাদেশীয় ব্যবস্থার ভূমিকা আলোচনা করো

নেপোলিয়নের পতনের জন্য মহাদেশীয় ব্যবস্থার ভূমিকা আলোচনা করো – মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা নেপোলিয়নের পক্ষে শুভ হয়নি। মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থাকে বলপ্রয়োগের দ্বারা কার্যকর করতে গিয়ে নেপোলিয়ন বিভিন্ন সংকটে জড়িয়ে পড়েন, যা তাঁর পতনকে অবশ্যম্ভাবী করে তোলে।
 
তো চলুন আজকের মূল বিষয় নেপোলিয়নের পতনের জন্য মহাদেশীয় ব্যবস্থার ভূমিকা আলোচনা করো পড়ে নেওয়া যাক।

নেপোলিয়নের পতনের জন্য মহাদেশীয় ব্যবস্থার ভূমিকা আলোচনা করো

নেপোলিয়নের পতনের জন্য মহাদেশীয় ব্যবস্থার ভূমিকা আলোচনা করো
নেপোলিয়নের পতনের জন্য মহাদেশীয় ব্যবস্থার ভূমিকা আলোচনা করো

নেপোলিয়নের পতনের জন্য মহাদেশীয় ব্যবস্থার ভূমিকা

মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা নেপোলিয়নের পক্ষে শুভ হয়নি। মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থাকে বলপ্রয়োগের দ্বারা কার্যকর করতে গিয়ে নেপোলিয়ন বিভিন্ন সংকটে জড়িয়ে পড়েন, যা তাঁর পতনকে অবশ্যম্ভাবী করে তোলে।

ফ্রান্সের আর্থিক সংকট

মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থার অর্থনৈতিক ফলাফল ফ্রান্সের পক্ষে অনুকূল ছিল না, বরং পরোক্ষে তা ফ্রান্সের অর্থনীতির যথেষ্ট ক্ষতি করে। কারণ দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি ফ্রান্সের সর্বস্তরের মানুষকে বীতশ্রদ্ধ করে তুলেছিল। শ্রমিক ছাঁটাই, বেকার সমস্যা প্রভৃতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে। ফলে ফ্রান্সের মানুষ নেপোলিয়নের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলে।

উপকূল দখল

নেপোলিয়ন জোর করে মহাদেশীয় অবরোধ প্রথা কার্যকর করতে গিয়ে ইউরোপের উপকূল অঞ্চলের প্রায় ২ হাজার মাইল অঞ্চল দখল করে নেন। এ ছাড়া বহু নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ দেশ তিনি দখল করে নিলে বিভিন্ন দেশে তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু হয়।

রোম ও হল্যান্ডে অসন্তোষ

রোম ও হল্যান্ড মহাদেশীয় ব্যবস্থা মানতে অস্বীকার করায় নেপোলিয়ন সেখানে হস্তক্ষেপ করেন। তিনি রোমের শাসক পোপকে সিংহাসনচ্যুত করে বন্দি করার ফলে ক্যাথলিক সম্প্রদায় প্রচন্ড ক্ষুব্ধ হয়। এ ছাড়া হল্যান্ডের শাসককে সিংহাসনচ্যুত করে তিনি হল্যান্ড দখল করেন।

উপদ্বীপের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ

পার্তুগাল মহাদেশীয় ব্যবস্থা মানতে অস্বীকার করায় নেপোলিয়ন স্পেনের অনুমতি না নিয়েই স্পেনের উপর দিয়ে পোর্তুগালে সেনা পাঠিয়ে সেখানে মহাদেশীয় ব্যবস্থা কার্যকর করেন। পোর্তুগাল থেকে ফেরার পথে তিনি স্পেন দখল করে সেখানকার সিংহাসনে নিজের ভাই জোসেফকে বসান। এর ফলে স্পেন ও পোর্তুগাল নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে যে যুদ্ধ শুরু করে, তা উপদ্বীপের যুদ্ধ (১৮০৮ খ্রি. – ১৮১৩ খ্রি.) নামে পরিচিত। এই যুদ্ধে ইংল্যান্ড স্পেনের পক্ষে যোগ দিলে ফ্রান্সের পরাজয় ঘটে। এই পরাজয় নেপোলিয়নকে আরও বড়ো বিপদের সম্মুখীন করে।

ইংল্যান্ডের রপ্তানি বৃদ্ধি

মহাদেশীয় ব্যবস্থায় ইংল্যান্ড ক্ষতিগ্রস্ত না হয়ে লাভবান হয়েছিল। ইংল্যান্ডের রপ্তানি-বাণিজ্য বৃদ্ধি পেয়েছিল। মহাদেশীয় অবরোধের কারণে বহির্জগতে অনেক নতুন বাজার ইংল্যান্ডের নিয়ন্ত্রণে এসেছিল। তাই প্রাথমিক ধাক্কা সামাল দিয়ে ইংল্যান্ড অর্থনৈতিক দিক দিয়ে স্বমহিমায় ফিরে আসে।

রাশিয়া আক্রমণ

রাশিয়ার জার মহাদেশীয় ব্যবস্থা মানতে অস্বীকার করায় নেপোলিয়ন ১৮১২ খ্রিস্টাব্দে রাশিয়া আক্রমণ করেন। পরিণামে রাশিয়ায় তাঁর ‘গ্র্যান্ড আর্মি’ ধ্বংস হয়ে যায়।

ইংল্যান্ডের অর্থনৈতিক শক্তিকে ধ্বংস করতে গিয়ে নেপোলিয়ন বলপূর্বক মহাদেশীয় প্রথাকে কার্যকরী করার যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন, তার ফলে সমগ্র ইউরোপে নেপোলিয়নবিরোধী শক্তি গড়ে উঠেছিল। তাই বলা যায় যে, নেপোলিয়নের পতনের অন্যতম কারণ ছিল – মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা। ঐতিহাসিক লজ বলেছেন যে, একজন রাষ্ট্রনীতিবিদ হিসেবে নেপোলিয়নের অযোগ্যতার সর্বাধিক বড়ো প্রমাণ হল মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা। (The Continental System was the most strupendous proof of Napoleon’s incapacity as a statesman.)

আপনি আমাদের একজন মূল্যবান পাঠক। নেপোলিয়নের পতনের জন্য মহাদেশীয় ব্যবস্থার ভূমিকা আলোচনা করো -এই বিষয়ে আমাদের লেখনী সম্পূর্ণ পড়ার জন্যে আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনার মতামত জানাতে ভুলবেন না।

Leave a Comment