নেপোলিয়নের অর্থনৈতিক সংস্কার টীকা লেখো

নেপোলিয়নের অর্থনৈতিক সংস্কার টীকা লেখো
নেপোলিয়নের অর্থনৈতিক সংস্কার টীকা লেখো
ফ্রান্সকে দুরারোগ্য আর্থিক ব্যাধি থেকে সুস্থ করার জন্য নেপোলিয়ন অর্থনৈতিক সংস্কার কার্যে মনোনিবেশ করেন। নেপোলিয়ন জানতেন যে, দৃঢ় অর্থব্যবস্থা হল প্রশাসন যন্ত্রের প্রাণশক্তি। এ জন্য তিনি ফ্রান্সের অর্থব্যবস্থাকে গড়ার কাজে হাত দেন।

অর্থনৈতিক সংস্কারের উদ্দেশ্য

নেপোলিয়নের অর্থনৈতিক সংস্কারের উদ্দেশ্যগুলি ছিল-

ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি

ষোড়শ লুইয়ের আমল থেকে ফ্রান্সের অর্থব্যবস্থা একেবারে ভেঙে পড়ে। সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল ফ্রান্সের কর ব্যবস্থা ও অর্থনৈতিক বিভাগ। এ কারণেই নেপোলিয়ন প্রথম থেকেই অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।

অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি

মার্কেন্টাইল মতবাদে বিশ্বাসী নেপোলিয়ন মনে করতেন যে, মুদ্রা ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ, খাদ্যশস্য সরবরাহের সুব্যবস্থা, রপ্তানি বাণিজ্য বৃদ্ধি প্রভৃতি হল রাষ্ট্রের প্রধান কাজ।

অর্থনৈতিক সংস্কারের নানা দিক

অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নেপোলিয়নের সংস্কারগুলি হল-

ব্যাংক অব ফ্রান্স প্রতিষ্ঠা

নেপোলিয়নের অর্থনৈতিক সংস্কারের একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল ব্যাংক অব ফ্রান্স প্রতিষ্ঠা (১৮০০ খ্রি.)। আধুনিক রিজার্ভ ব্যাংক-এর মতো ব্যাংক অব ফ্রান্স নিয়মনীতি প্রবর্তন করে সরকারের অর্থনৈতিক কার্যকলাপে নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখত। এই ব্যাংক-এর সাহায্যে মুদ্রা ব্যবস্থার সংগঠন এবং ব্যাবসা-বাণিজ্যের উন্নয়ন করা সম্ভব হয়।

মুদ্রা সংস্কার

তিনি মুদ্রা ব্যবস্থার বিজ্ঞানসম্মত সংস্কার সাধন করেন এবং স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা চালু করেন। এর ফলে ব্যাবসা-বাণিজ্য ও শিল্পের উন্নতি সাধনের পথ প্রশস্ত হয়।

আর্থিক নীতি-সরকারি দপ্তরগুলিকে ব্যয় সংকোচের নির্দেশ দেওয়া হয়, কর আদায়ের দায়িত্ব স্থানীয় প্রতিনিধিদের হাত থেকে সরিয়ে নিয়ে সরকারি কর্মচারীদের হাতে দেওয়া হয়। তিনি অর্থ দপ্তরকে দুভাগে ভাগ করে রাজস্ব দপ্তর ও অডিট দপ্তর গঠন করেন। অডিট সরকারি ব্যয়ের হিসাব রাখত। তিনি নিয়মিত কর আদায়ের ব্যবস্থা করেন। প্রত্যক্ষ করের বদলে পরোক্ষ করের দিকে বেশি আগ্রহ দেখান। ব্যাবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য চেম্বার অব কর্মাসকে পুনর্গঠিত করা হয়, নতুন পথঘাট নির্মাণ ও বন্দরগুলির আধুনিকীকরণ করা হয়। এমনকি বাণিজ্যের উন্নতির জন্য বণিক সংঘেরও পুনর্গঠন করেন।

নেপোলিয়নের আর্থিক সংস্কারের ফলে ফ্রান্সে কৃষি ও শিল্পের উন্নতি ঘটে। জিনিসপত্রের দাম কমার ফলে লোকের স্বস্তি আসে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁর নিরন্তর যুদ্ধের চাপে তাঁর অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে।

Leave a Comment