নেপোলিয়নীয় সাম্রাজ্যের সঙ্গে ফরাসি বিপ্লবের আদর্শের সংঘাত সংক্ষেপে লেখো |
ফরাসি বিপ্লবের মধ্য দিয়েই নেপোলিয়ন ইতিহাসের পাদপ্রদীপে এসেছে। তাঁর রাজপদে উত্থান সম্ভব করেছিল ফরাসি বিপ্লবের উদারতন্ত্রের জন্য বিপ্লব না ঘটলে হয়ত তাঁর আবির্ভাবই ঘটত না। তাই স্বাভাবিক কারণেই ফরাসি বিপ্লবের আদর্শের প্রতি তাঁর একটা দুর্বলতা ছিলই। কিন্তু কখনও কখনও ব্যক্তিগত অভিলাষ চরিতার্থ করতে গিয়ে তিনি বিপ্লবের আদর্শকে জলাঞ্জলি দিতে কুণ্ঠিত হননি।
বিপ্লবের আদর্শ
ফরাসি বিপ্লবের তিনটি মূল আদর্শ ছিল-সাম্য, মৈত্রী ও স্বাধীনতা যা বিশ্বের মুক্তিপিয়াসি মানুষের কাছে তিনটি আলোকবর্তিকা স্বরূপ।
বিপ্লবের আদর্শ প্রচার
নেপোলিয়নের সাম্রাজ্য বিস্তারনীতির ফলে বিপ্লবের আদর্শ ফ্রান্সের গণ্ডি ছাড়িয়ে সমগ্র ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে। ইউরোপের পরাধীন জাতির কাছে তিনি ‘মুক্তিদাতা’ বলে অভিনন্দিত হন। ইউরোপের জনগণকে সামন্তশাসন ও স্বৈরাচারী রাজতন্ত্রের হাত থেকে মুক্ত করে তাদের সম্মান ও সামাজিক অধিকার দেন। বিভিন্ন সংস্কার কার্যের মধ্য দিয়ে বিপ্লবের সাম্যনীতিকে কার্যকর করার চেষ্টা করেন।
স্বৈরশাসন প্রবর্তন
কনসুলেট শাসনে প্রথম কনসাল এবং পরবর্তীতে ‘ফরাসি জাতির সম্রাট’ উপাধি ধারণের মধ্য দিয়ে তিনি যে স্বেচ্ছাচারী একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন তা ছিল বিপ্লবের স্বাধীনতা আদর্শের পরিপন্থী। তিনি সরকারি কর্মচারীদের নির্বাচন প্রথার পরিবর্তে মনোনয়ন প্রথা চালু করেন।
বংশানুক্রমিক রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা
ফরাসি বিপ্লবের ফলে রাজতন্ত্রের অবসান ঘটলেও নেপোলিয়ন ‘নিজেকে ফরাসি জাতির সম্রাট’ হিসাবে ঘোষণা করার ফলে বংশানুক্রমিক রাজতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা হয়। যা বিপ্লবী আদর্শের পরিপন্থী ছিল।
প্রাথমিকভাবে নেপোলিয়নের সাম্রাজ্য জয় বিপ্লবে আদর্শের প্রসার ঘটলেও পরবর্তীতে বিজিত দেশগুলিতে স্বৈরশাসন প্রবর্তনের মধ্য দিয়ে বিপ্লবের প্রসার ব্যাহত করেছিলেন। যদিও ফিলিপ মডেল মনে করেন (The Empire was not an interruption but an extention of the Revolution)।