নবম শ্রেণি ভূগোল দ্বিতীয় অধ্যায় পৃথিবীর গতিসমূহ ৩ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর

সূচিপত্র

নবম শ্রেণি ভূগোল দ্বিতীয় অধ্যায় পৃথিবীর গতিসমূহ ৩ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর
নবম শ্রেণি ভূগোল দ্বিতীয় অধ্যায় পৃথিবীর গতিসমূহ ৩ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর

আমরা পৃথিবীর আবর্তন গতি বুঝতে পারি না-কারণ ব্যাখ্যা করো।

আমরা পৃথিবীর আবর্তন গতি বুঝতে পারি না, তার কারণ হল-

মানুষ ও পরিপার্শ্বিক পরিবেশের একইসঙ্গে আবর্তন

আমরা যেখানে বসবাস করি তার চারপাশের গাছপালা, বাড়িঘর, মাঠঘাট সবকিছুই আমাদের সঙ্গে একইভাবে আবর্তন করে চলেছে। তাই পৃথিবীর আবর্তন গতি আমাদের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। আমাদের পৃথিবীকে স্থির বলে মনে হয়।

অভিকর্ষজ বল

পৃথিবী নিজের মাধ্যাকর্ষণ বলের দ্বারা আমাদের ও ভূপৃষ্ঠের অন্যান্য বস্তুকে নিজের কেন্দ্রের দিকে আকর্ষণ করে। ফলে, আমরা পৃথিবীর গায়ের সঙ্গে লেগে থাকি ও এত প্রবল গতিতে পৃথিবীর আবর্তন সত্ত্বেও ছিটকে পড়ি না।

ক্ষুদ্রাকার

পৃথিবীর আয়তনের তুলনায় আমরা এতই ক্ষুদ্র যে আমাদের পক্ষে পৃথিবীর আবর্তন গতি বোঝা সম্ভব নয়।

ফেরেলের সূত্রটি লেখো।

পৃথিবীর আবর্তন গতির জন্য উৎপন্ন কেন্দ্রবহির্মুখী বলের কারণে পৃথিবীর ওপর গতিশীল কোনো বস্তু কেন্দ্র থেকে বাইরের দিকে সোজা না গিয়ে বেঁকে যায়। একেই ফেরেলের সূত্র বলা হয়।

ফল: এই গতিবিক্ষেপের ফলে বায়ুপ্রবাহ ও সমুদ্রস্রোত উত্তর গোলার্ধে ডানদিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বামদিকে বেঁকে যায়।

নামকরণ: মার্কিন বিজ্ঞানী উইলিয়ম ফেরেল 1856 খ্রিস্টাব্দে এই সূত্রটি প্রতিষ্ঠা করেন বলে একে ফেরেলের সূত্র বলে।

কোরিওলিস বলের প্রভাব লেখো।

কোরিওলিস বলের প্রভাবে ভূপৃষ্ঠের ওপর দিয়ে প্রবাহিত কোনো গতিশীল বস্তুর দিকবিক্ষেপ ঘটে। এই বলের প্রভাবে বায়ুপ্রবাহ এবং সমুদ্রস্রোত উত্তর গোলার্ধে সোজাসুজি প্রবাহিত না হয়ে একটু ডানদিকে (ঘড়ির কাঁটার গতির দিকে) বেঁকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে একটু বামদিকে (ঘড়ির কাঁটার গতির বিপরীত দিকে) বেঁকে প্রবাহিত হয়। এই কোরিওলিস বল বায়ুচাপ ঢালের সমকোণে প্রযুক্ত হয়। বিজ্ঞানী ফেরেল এই সূত্রটি আবিষ্কার করেন বলে তাঁর নামানুসারে এই সূত্রকে ফেরেলের সূত্র বলে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, কোরিওলিস বল কেবলমাত্র গতিপথের বিক্ষেপ ঘটায় কিন্তু গতিবেগের ওপর কোনো প্রভাব বিস্তার করে না।

প্রতি চার বছর অন্তর ফেব্রুয়ারি মাস 29 দিনের হয় কেন? অথবা, অধিবর্ষ বলতে কী বোঝ?

সূর্যের চারিদিকে একবার সম্পূর্ণ প্রদক্ষিণ করতে পৃথিবীর সময় লাগে 365 দিন 5 ঘণ্টা 48 মিনিট 46 সেকেন্ড। এই সময়কালকে বলে এক সৌরবছর। তবে, হিসাবের সুবিধার জন্য সূর্যের চারিদিকে পৃথিবীর একবার সম্পূর্ণ পরিক্রমণের সময়কালকে 365 দিন ধরা হয়। এর ফলে, প্রত্যেক বছর যে প্রায় 6 ঘণ্টা (5 ঘণ্টা 48 মিনিট 46 সেকেন্ড) সময় কম ধরা হয়, তা প্রতি চতুর্থ বছরে ফেব্রুয়ারি মাসের সঙ্গে একদিন (6 × 4 = 24 ঘণ্টা বা 1 দিন) বাড়িয়ে পূরণ করা হয়। তাই প্রতি চতুর্থ বছরে ফেব্রুয়ারি মাস 29 দিনের এবং বছরটি 366 দিনের হয়। যে বছরের ফেব্রুয়ারি মাস 29 দিনের হয়, সেই বিশেষ বছরটিকে বলা হয় লিপইয়ার বা অধিবর্ষ। সাধারণভাবে ইংরেজি বছরগুলিকে 4 দ্বারা এবং শতাব্দীগুলিকে 400 দ্বারা ভাগ করে যদি মিলে যায় তবে ওই বছর বা শতাব্দীগুলি অধিবর্ষ হবে। যেমন-2000, 2004, 2008, 2012 প্রভৃতি।

সূর্যের আপাত দৈনিক গতি ও আপাত বার্ষিক গতি কী?

পৃথিবী নিজের মেরুদণ্ডের ওপর পশ্চিম থেকে পূর্বে আবর্তন করতে করতে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে চলেছে। তাই আপাতভাবে সূর্যকে পূর্বদিকে উদিত হতে এবং পশ্চিমদিকে অস্ত যেতে দেখা যায়। সূর্যের এই পূর্ব থেকে পশ্চিমে চলনকে সূর্যের আপাত দৈনিক গতি বলে। অন্যদিকে দেখা যায় সূর্য সারাবছর ধরে কর্কটক্রান্তিরেখা (23½° উ:) এবং মকরক্রান্তিরেখার (23/½° দঃ) মধ্যে ঘোরাফেরা করে, একেই বলা হয় সূর্যের আপাত বার্ষিক গতি। সূর্যের আপাত বার্ষিক গতির পথকে রবিমার্গ বলা হয়।

নিরক্ষীয় অঞ্চলে ঋতুপরিবর্তন অনুভূত হয় না কেন?

নিরক্ষীয় অঞ্চল অর্থাৎ নিরক্ষরেখার (0° অক্ষাংশ) পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে ঋতুপরিবর্তন অনুভূত হয় না, কারণ-

দিনরাত্রির দৈর্ঘ্য সমান

ছায়াবৃত্ত নিরক্ষরেখাকে সমকোণে ছেদ করায় সারাবছরই নিরক্ষরেখা সন্নিহিত অংশে দিনরাত্রির দৈর্ঘ্য প্রায় সমান হয়। অর্থাৎ, দিনরাত্রির হ্রাসবৃদ্ধি ঘটে না।

লম্বভাবে সূর্যরশ্মির পতন

নিরক্ষরেখা বরাবর সারাবছরই সূর্যরশ্মি প্রায় লম্বভাবে পড়ে। ফলে, এই অঞ্চলে বছরের সবসময়ই অধিক উন্নতা বিরাজমান থাকে।

বৃষ্টিপাত

নিরক্ষীয় অঞ্চলে জলভাগ বেশি বলে বছরের বেশিরভাগ সময়ই পরিচলন বৃষ্টিপাত ঘটে।

উত্তর গোলার্ধে শীতকালে দিনের সংখ্যা কম হয় কেন?

3 জানুয়ারি সূর্য এবং পৃথিবীর মধ্যে দূরত্ব সবচেয়ে কম হয় (প্রায় 14 কোটি 70 লক্ষ কিমি)। এই সময়কে অনুসূর অবস্থা বলে। এই অবস্থায় পৃথিবীর পরিক্রমণ বেগ কিছুটা বেড়ে যায়। ফলে পৃথিবী অপেক্ষাকৃত দ্রুতবেগে তার কক্ষপথে এগিয়ে যায়। এই সময় উত্তর গোলার্ধে শীতকালে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে গ্রীষ্মকাল থাকে। পৃথিবীর দ্রুত পরিক্রমণের জন্য এই সময় উত্তর গোলার্ধে শীতকালে দিনের সংখ্যা কম হয়।

নিউজিল্যান্ড বা অস্ট্রেলিয়ায় গ্রীষ্মকালে বড়োদিন পালন করা হয় কেন?

নিউজিল্যান্ড বা অস্ট্রেলিয়ায় গ্রীষ্মকালে বড়োদিন পালন করা হয় তার কারণ হল নিউজিল্যান্ড বা অস্ট্রেলিয়া দক্ষিণ গোলার্ধের দেশ। সূর্যকে পরিক্রমণ করার সময়, নভেম্বর থেকে জানুয়ারি—এই তিন মাস পৃথিবী তার কক্ষপথে এমনভাবে অবস্থান করে যে, এইসময় দক্ষিণ গোলার্ধ সূর্যের দিকে ঝুঁকে থাকে এবং উত্তর গোলার্ধ সূর্য থেকে দূরে থাকে। তাই, নভেম্বর থেকে জানুয়ারি মাসে উত্তর গোলার্ধে শীতকাল হয় এবং দক্ষিণ গোলার্ধে গ্রীষ্মকাল হয়। যেহেতু বড়োদিন পালন করা হয় 25 ডিসেম্বর, তাই তখন দক্ষিশ গোলার্ধে গ্রীষ্মকাল এবং উত্তর গোলার্ধে শীতকাল থাকে। সেইজন্য নিউজিল্যান্ডে বা অস্ট্রেলিয়ায় গ্রীষ্মকালে বড়োদিন পালন করা হয়।

বিজ্ঞানীরা ডিসেম্বর মাসে অ্যান্টার্কটিকা অভিযানে যান কেন?

বিজ্ঞানীদের ডিসেম্বর মাসে অ্যান্টার্কটিকা অভিযানের কারণ-

দিবাভাগের পরিমাণ বেশি হয়

ডিসেম্বর মাসে পৃথিবীর দক্ষিশ গোলার্ধ সূর্যের দিকে ঝুঁকে থাকায় দক্ষিণ গোলার্ধে দিন বড়ো ও রাত্রি ছোটো হয়। দিনের আলো বেশিক্ষণ থাকায় পরীক্ষানিরীক্ষা ও গবেষণার সুবিধা হয়।

উষ্ণতা বৃদ্ধি

ডিসেম্বর মাসে দক্ষিণ গোলার্ধে গ্রীষ্মকাল থাকে। অ্যান্টার্কটিকার সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলে উষ্ণতা হিমাঙ্কের ওপরে ওঠে, ফলে শীতের তীব্রতা কমে।

যাতায়াতের সুবিধা

গ্রীষ্মে বরফ গলে যাওয়ার ফলে মহাদেশের প্রান্তসীমানা হ্রাস পায়। এর ফলে বিজ্ঞানীরা মহাদেশের অভ্যন্তরে অনেকটা জলপথে প্রবেশ করতে পারেন।

‘নিশীথ সূর্যের দেশ’-এ রাতে সূর্য দেখা যায় কেন?

নিশীথ সূর্যের দেশে রাতের আকাশে সূর্যকে দেখা যায় তার কারণ হল 21 মার্চ থেকে 23 সেপ্টেম্বর পর্যন্ত 6 মাস সূর্যের সাপেক্ষে পৃথিবী এমন অবস্থানে থাকে যে, উত্তর গোলার্ধ সূর্যের দিকে বেশি ঝুঁকে থাকে। ফলে, এই 6 মাস সুমেরুবৃত্ত থেকে সুমেরুবিন্দু পর্যন্ত অঞ্চলে 24 ঘণ্টা দিন থাকে। এই সময় নরওয়ের ‘হ্যামারফেস্ট বন্দর’ (70° উ: অক্ষাংশ) সন্নিহিত স্থান থেকে স্থানীয় সময় অনুযায়ী গভীর রাতেও আকাশে সূর্যকে দেখা যায়। এইজন্যই নরওয়ের হ্যামারফেস্ট বন্দর ও তার আশেপাশের স্থানসমূহকে বলে নিশীথ সূর্যের দেশ।

Leave a Comment