নবম শ্রেণি ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় বিপ্লবী আদর্শ, নেপোলিয়নীয় সাম্রাজ্য ও জাতীয়তাবাদ ছোটো প্রশ্ন ও উত্তর

সূচিপত্র

নবম শ্রেণি ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় বিপ্লবী আদর্শ, নেপোলিয়নীয় সাম্রাজ্য ও জাতীয়তাবাদ ছোটো প্রশ্ন ও উত্তর
নবম শ্রেণি ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় বিপ্লবী আদর্শ, নেপোলিয়নীয় সাম্রাজ্য ও জাতীয়তাবাদ ছোটো প্রশ্ন ও উত্তর

ফ্রান্সে কনসুলেট শাসনব্যবস্থা কে, কবে প্রবর্তন করেন?

উত্তর: ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দে নেপোলিয়ন ফ্রান্সে কনসুলেট শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। তবে এই শাসনব্যবস্থার অন্য দুইজন কনসাল ছিলেন রোজার ডুকাস ও অ্যাবে সিয়েস।

নাগরিক আইন কী?

উত্তর: ফরাসি বিপ্লবের আদর্শকে সামনে রেখে ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ২৬ আগস্ট ফরাসি নাগরিকদের জন্য যে অধিকার ঘোষণা করা হয়, তাকে নাগরিক আইন বলা হয়। এতে বলা -হয় যে, মানুষ স্বাধীনতা ও সমান অধিকার নিয়েই জন্মগ্রহণ করে, আইন জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন, আইনের চোখে সবাই সমান প্রভৃতি।

নেপোলিয়ন কীভাবে প্যারিসে জাতীয় সভা রক্ষা করেন?

উত্তর: ১৭৯৫ খ্রিস্টাব্দে রাজতন্ত্রের সমর্থক উচ্ছৃঙ্খল জনতা – প্যারিসে ‘জাতীয় সভা’ আক্রমণ করে। নেপোলিয়ন তখন ফরাসি বাহিনীর বিগ্রেডিয়ার জেনারেল। তিনি অল্প সংখ্যক সেনার সাহায্যে উচ্ছৃঙ্খল জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে প্যারিসের জাতীয় সভাকে রক্ষা করেন।

অক্টোবরের ঘটনা’ (ভঁদেমিয়ার ঘটনা) বলতে কী বোঝ?

১৭৯৫ খ্রিস্টাব্দে ৫ অক্টোবর রাজতন্ত্রের সমর্থক উচ্ছৃঙ্খল জনতা ফরাসি জাতীয় সভা আক্রমণ করে। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নেপোলিয়ন অল্প সংখ্যক সেনার সাহায্যেই উচ্ছৃঙ্খল জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে দেন। এই ঘটনাই ইউরোপের ইতিহাসে ‘অক্টোবরের ঘটনা’ বা ‘ভদেঁমিয়ার ঘটনা’ নামে পরিচিত।

১৮ ব্লুমেইয়ার ঘটনা’ কী?

উত্তর: মিশর অভিযানে ব্যর্থতার পর ফ্রান্সের অভ্যন্তরে ডাইরেক্টরি শাসনের দুর্বলতার সুযোগে নেপোলিয়ন ফ্রান্সের ক্ষমতা দখলের পরিকল্পনা করেন। ফরাসি ১৮ ব্রুমেইয়ার তারিখে (৯ নভেম্বর, ১৭৯৯ খ্রি.) তিনি সসৈন্যে কাউন্সিল গৃহে উপস্থিত হয়ে এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ডাইরেক্টরি শাসনের অবসান ঘটিয়ে ক্ষমতা দখল করেন। এই ঘটনা ‘১৮ ব্লুমেইয়ার ঘটনা’ নামে পরিচিত।

নেপোলিয়ন কীভাবে ডাইরেক্টরি শাসনের অবসান ঘটান?

উত্তর: ১৭৯৫ খ্রিস্টাব্দে প্রবর্তিত ডাইরেক্টরি শাসন ফরাসিবাসীর আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্যর্থ হয়। আর্থিক সংকট, দুর্নীতি ও অরাজকতার কারণে ডাইরেক্টরি শাসন জনপ্রিয়তা হারায়। অতঃপর নেপোলিয়ন সুযোগের সদ্ব্যবহার করে কয়েকজন ডাইরেক্টরকে নিয়ে ৯ নভেম্বর ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দে ডাইরেক্টরি শাসনের অবসান ঘটান।

নেপোলিয়নের যুগ বলতে কী বোঝ?

উত্তর: ১৭৯৯ খ্রিষ্টাব্দে নেপোলিয়ন ডাইরেক্টরি শাসনের

অবসান ঘটিয়ে শাসন ক্ষমতা দখল করেন এবং ১৮০৪ খ্রিস্টাব্দে ফরাসি জাতির উপাধি গ্রহণ করেন। এভাবে ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৮১৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি অপ্রতিহত কর্তৃত্ব নিয়ে ফ্রান্স শাসন করেন এবং প্রায় সমগ্র ইউরোপ তাঁর নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। তাই ১৭৯৯-১৮১৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়কাল ইউরোপের ইতিহাসে ‘নেপোলিয়নের যুগ’ নামে অভিহিত।

কনসুলেটের শাসনকালে ‘অষ্টম বর্ষের সংবিধান’ বলতে কী বোঝ?

উত্তর: কনসুলেটের শাসনকালে প্রবর্তিত নতুন সংবিধান অষ্টম বর্ষের সংবিধান নামে পরিচিত। এই সংবিধানে ১ প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকার স্বীকৃত হয়; ২ চার কক্ষযুক্ত আইনসভার ওপর আইন প্রণয়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় এবং ৩ প্রথম কনসালের হাতে শাসনের কার্যকরী ক্ষমতা রাখা হয়।

কনসুলেটের শাসন কী?

উত্তর: ডাইরেক্টরি শাসনব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দে (৯ নভেম্বর) নেপোলিয়ন যে শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করেন সেই শাসনব্যবস্থার নাম ‘কনসুলেট শাসন’। এই শাসনব্যবস্থা অনুসারে ফ্রান্সের প্রশাসন ব্যবস্থার তিনজন কনসালকে নিয়ে এক প্রশাসক মণ্ডলী নিযুক্ত করা হল। এদের মধ্যে প্রথম কনসাল ছিলেন নেপোলিয়ন এবং অপর দুজন হলেন অ্যাবে সিয়েস ও রজার ডুকোস। তাঁরা ছিলেন প্রথম কনসালের সহকারী ও আজ্ঞাবাহী মাত্র।

কনসুলেটের সংবিধান কী?

উত্তর: কনসুলেটের শাসনকালে প্রবর্তিত নতুন সংবিধান অষ্টম বর্ষের সংবিধান নামে পরিচিত। এতে প্রথম কনসাল হলেন নেপোলিয়ন এবং অপর দুজন ছিলেন প্রথম কনসালের সহযোগী। আইনসভাকে চারটি কক্ষে ভাগ করা হয়। এতে মুখ্য ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন স্বয়ং নেপোলিয়ন।

নীলনদের যুদ্ধ কবে, কাদের মধ্যে হয়েছিল?

উত্তর ১৭৯৮ খ্রিস্টাব্দে ফরাসি সেনাপতি নেপোলিয়ন ও ইংরেজ সেনাপতি নেলসনের মধ্যে নীলনদের যুদ্ধ হয়েছিল। এই যুদ্ধে ব্রিটিশ নৌবহর ফরাসি নৌবহরকে সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত করে দেয়।

কোড নেপোলিয়ন গুরুত্বপূর্ণ কেন?

উত্তর: (১) ফ্রান্সে বিভিন্ন স্থানে প্রচলিত আইনগুলির সমন্বয়- সাধন করা হয়, (২) ফরাসি বিপ্লবে সাম্যের আদর্শ প্রতিষ্ঠিত হয়, (৩) কোড নেপোলিয়নের মূল নীতিগুলি অনুসরণ করে ইউরোপীয় দেশগুলি নিজেদের সংবিধান পরিবর্জন ও পরিবর্ধন করে। এই সকল কারণে কোড নেপোলিয়ন গুরুত্বপূর্ণ।

কোড নেপোলিয়নের কয়েকটি ত্রুটি উল্লেখ করো।

উত্তর: কোড নেপোলিয়ন একেবারে ত্রুটিমুক্ত ছিল না।

কারণ-(১) রোমান আইনকে অত্যধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল, ফলে আইনসংহিতায় বৈচিত্র্যের অভাব স্পষ্ট হয়ে ওঠে। (২) নারীকে পুরুষের অধীনে রাখা হয়, (৩) শ্রমিকদের অধিকারের স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি, কাজের অধিকার, নিম্নতম মজুরির অধিকার এমনকি ধর্মঘটের অধিকারও দেওয়া হয়নি। (৪) পারিবারিক সম্পত্তির অধিকার থেকে নারীদের বঞ্চিত করা “হয়। বলা হয় স্বামীর সম্পত্তি ছাড়া নারীরা কোনো সম্পত্তি অর্জন, বিক্রি বা দান করবে না।

নেপোলিয়নকে ‘দ্বিতীয় জাস্টিনিয়ান’ বলা হয়-কেন?

উত্তর: ‘আইন সংহিতা’ রচনার জন্য নেপোলিয়নকে দ্বিতীয় জাস্টিনিয়ান বা বাইজানটাইন সাম্রাজ্যের প্রেস্টিনিয়ান বলা হয়। মধ্য যুগে পূর্ব রোমান সাম্রাজ্যের বা বাইজানটাইন – সাম্রাজ্যের সম্রাট জাস্টিনিয়ান তাঁর সাম্রাজ্যের বিভিন্ন আইনগুলিকে প্রথম একটি গ্রন্থে সংকলিত করেন।

কোড নেপোলিয়ন কী?

উত্তর: ফ্রান্সের বিভিন্ন স্থানে প্রচলিত আইনগুলির পার্থক্য দূর করে এবং পরস্পর বিরোধী আইনগুলির মধ্যে ঐক্য গঠনের লক্ষ্যে নেপোলিয়ন বিশিষ্ট আইনবিদদের নিয়ে একটি সমিতি গঠন করেন। নেপোলিয়নের উদ্যোগে এই আইন পরিষদের চার বছরের (১৮০০-১৮০৪ খ্রিস্টাব্দে) অক্লান্ত প্রচেষ্টায় যে আইনবিধি রচিত হয়-তাকেই ‘কোড নেপোলিয়ন’ বা ‘নেপোলিয়নের আইন সংহিতা’ নামে পরিচিত।

কোড নেপোলিয়নকে সমাজের ‘বাইবেল’ বলা হয় কেন?

উত্তর: কোড নেপোলিয়ন নামে আইন সংহিতাকে সমাজের ‘বাইবেল’ বলার কারণগুলি হল- ১ এই আইন সংকলনটি ফ্রান্সে আইনগত জটিলতার অবসান ঘটিয়ে ফরাসি সমাজে আইনগত ঐক্য প্রতিষ্ঠা করেছিল, ২ এই কোডে ফরাসি বিপ্লবের গুরুত্বপূর্ণ আদর্শগুলিকে আইনসংগত করার ফলে বুর্জোয়া শ্রেণি ও কৃষকসহ ফ্রান্সের অধিকাংশ মানুষ খুশি হয়েছিল। এই কারণে ঐতিহাসিক লেফেভর কোড নেপোলিয়নকে ফরাসি সাম্রাজ্যের ‘বাইবেল’ বলেছেন।

মিলান ডিক্রিতে কী বলা হয়েছিল?

উত্তর: ১৮০৭ খ্রিস্টাব্দে নেপোলিয়ন মিলান ডিক্রি জারি করে ঘোষণা করেন যে, যে সকল পণ্যবাহী জাহাজ তা মিত্র বা নিরপেক্ষ যে দেশেরই হোক না কেন ব্রিটেনের কোনো বন্দরে এই নিরপেক্ষ দেশের জাহাজ প্রবেশ করলে তাকে শত্রু দেশের জাহাজ বলেই গণ্য হবে। অর্ডারস ইন কাউন্সিল অনুযায়ী ইংল্যান্ডের কাছ থেকে লাইসেন্স নিলে তাদের যে কোনো বন্দরে ব্রিটিশ সম্পত্তি হিসাবে গণ্য করে ফ্রান্স তাদের পণ্য সামগ্রী বাজেয়াপ্ত করবে।

অ্যামিয়েন্স-এর সন্ধি কবে ও কাদের মধ্যে হয়েছিল?

উত্তর: ১৮০২ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের মধ্যে অ্যামিয়েন্সের সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়েছিল।

টিলসিট-এর সন্ধির গুরুত্ব কী ছিল?

উত্তর: ১৮০৭ খ্রিস্টাব্দে নেপোলিয়ন ও রাশিয়ার জার আলেকজান্ডারের মধ্যে টিলসিটের সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়। এই সন্ধির ফলে- (১) ইংল্যান্ড ছাড়া প্রায় সমগ্র ইউরোপে নেপোলিয়নের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয় (২) নেপোলিয়নের গৌরব ও মর্যাদা সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছায়। (৩) নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে তৃতীয় শক্তিজোট ধ্বংস হয়। (৪) ইতালি, জার্মানি ও মধ্য ইউরোপ নেপোলিয়নের পদানত হয় এবং (৫) রাশিয়া নেপোলিয়নের কাম্বদ মিত্রে পরিণত হয়।

ট্রাফালগারের যুদ্ধ কবে, কাদের মধ্যে হয়েছিল?

উত্তর: ১৮০৫ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডের সঙ্গে ফ্রান্সের ট্রাফালগারের যুদ্ধ হয়েছিল। ইংল্যান্ডের নৌ-সেনাপতি ছিলেন নেলসন এবং অন্যদিকে ছিলেন ফ্রান্সের সম্রাট নেপোলিয়ন।

ট্রাফালগারের যুদ্ধের পরিণতি কী হয়েছিল?

উত্তর: ১৮০৫ খ্রিস্টাব্দে (২১ অক্টোবর) ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের মধ্যে ট্রাফালগারের যুদ্ধ হয়। ইংরেজ সেনাপতি নেলসন এই যুদ্ধে ফরাসি নৌবহরকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করেন। এই যুদ্ধে পরাজয়ের ফলে নেপোলিয়নের সমুদ্রপথে ইংল্যান্ড আক্রমণের পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। অন্য কোনো উপায়ে ইংল্যান্ডকে জব্দ করার কথা ভাবতে হয়। এই ভাবনার ফলশ্রুতিই ছিল নেপোলিয়ন কর্তৃক মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা প্রবর্তন।

নেপোলিয়ন কেন ‘বিপ্লবের সন্তান’ নামে পরিচিত?

উত্তর: নেপোলিয়ন সাম্রাজ্য বিস্তার ও সামরিক অভিযানের দ্বারা ইউরোপে পুরাতনতন্ত্রের পতন ও জাতীয়তাবাদের উত্থান ঘটান। কোড নেপোলিয়নের মাধ্যমে আইনগত সমতা ও যোগ্যতার মর্যাদা দানের ব্যবস্থা করেন। নেপোলিয়ন ব্যক্তি স্বাধীনতা কেড়ে নিলেও ইউরোপে সাম্য ও মৈত্রীর আদর্শ ছড়িয়ে দিয়ে জনগণের আত্মবিকাশের সুযোগ করে দিয়েছিলেন। এই কারণে ঐতিহাসিক ফিশার নেপোলিয়নকে ‘বিপ্লবের সন্তান’ বলেছেন।

রাইনের রাষ্ট্রসংঘ বা Confederation of the Rhine কী?

উত্তর: নেপোলিয়ন বোনাপার্ট ১৮০৬ খ্রিস্টাব্দে পবিত্র রোমান সাম্রাজ্যের অবলুপ্তি ঘটিয়ে অস্ট্রিয়া ছাড়া জার্মানির ব্যাভেরিয়া, ব্যাডেন, উটেম বার্গ, ম্যাক্সনি এবং আরো ২৮টি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্য নিয়ে রাইন রাষ্ট্রসংঘ বা ‘কনফেডারেশন অব দ্য রাইন’ গঠন করেন। এই রাষ্ট্রসংঘের রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপ সম্পূর্ণ নেপোলিয়নের নিয়ন্ত্রণাধীনে ছিল।

সিজালপাইন প্রজাতন্ত্র কী?

উত্তর: নেপোলিয়ন ইতালিকে অস্ট্রিয়ার কবলমুক্ত করে ডাইরেক্টরি আমলে মিলান ও লম্বার্ডিকে নিয়ে সিজালপাইন প্রজাতন্ত্র গঠন করেন। এটির পরে নাম হয় ইতালি প্রজাতন্ত্র (১৮০২ খ্রি.) সিজালপাইন প্রজাতন্ত্র গঠনের মধ্য দিয়ে তিনি ইতালিতে জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটান।

সুইস কনফেডারেশন কী?

উত্তর: ইতালির উত্তরে সুইজারল্যান্ডে হেলভেটিক প্রজাতন্ত্রকে নেপোলিয়ন সুইস কনফেডারেশনে পরিণত করেন। এই কনফেডারেশনের উনিশটি ক্যানটন ফ্রান্সের অধীনে ছিল।

নেপোলিয়ন কেন বিপ্লবের তরবারি নামে পরিচিত?

উত্তর: নেপোলিয়ন বিপ্লবের তরবারি নামে পরিচিত। কারণ: (১) ফরাসি বিপ্লবকালে তিনি বিভিন্নভাবে বিপ্লবকে রক্ষায় সচেষ্ট হয়েছিলেন। (২) প্রথম কনসাল ও সম্রাটরূপে তিনি ফ্রান্সকে কেন্দ্র করে প্রায় গোটা ইউরোপে ফরাসি সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশে দেশে ফরাসি বিপ্লবের ভাবধারা ছড়িয়ে দেন।

গ্র্যান্ড আর্মি বলতে কী বোঝায়?

উত্তর রুশজার পূর্ব প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে মহাদেশীয় ব্যবস্থা কার্যকর করতে অসম্মত হওয়ায়, নেপোলিয়ন রাশিয়া অভিযানের উদ্দেশ্যে তিন লক্ষ ফরাসি সৈন্যের সঙ্গে মিত্র দেশের তিন লক্ষ সৈন্য নিয়ে মোট ৬ লক্ষ সৈন্যের একটি সৈন্যবাহিনী গঠন করেন যা গ্র্যান্ড আর্মি নামে পরিচিত। কিন্তু রাশিয়া অভিযানে গিয়ে নেপোলিয়নের সৈন্যদল প্রায় ধ্বংস হয়ে যায়।

চতুর্থ রাষ্ট্রজোট কী?

উত্তর: নেপোলিয়নের রাশিয়া অভিযানের ব্যর্থতার পরিপ্রেক্ষিতে- ১ ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দে নেপোলিয়ন বিরোধী যে রাষ্ট্রজোট গড়ে উঠেছিল তা চতুর্থ রাষ্ট্রজোট নামে পরিচিত। ② রাশিয়া, প্রাশিয়া, ইংল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, সুইডেন প্রভৃতি ১৩টি ইউরোপীয় দেশ এই জোটের অন্তর্ভুক্ত ছিল।

‘জাতি সমূহের যুদ্ধ’ বলতে কী বোঝায়?

উত্তর: ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দে অনুষ্ঠিত নেপোলিয়নের সঙ্গে রাশিয়া, প্রাশিয়া, অস্ট্রিয়া, ইংল্যান্ড, পোল্যান্ড প্রভৃতি রাষ্ট্রের লিপজিগের যুদ্ধকে জাতিসমূহের যুদ্ধ বলা হয়েছে। ফ্রান্সের বিরুদ্ধে ইউরোপের ১৩টি রাষ্ট্র এই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল বলে এই যুদ্ধকে ‘জাতিসমূহের যুদ্ধ’ বলা হয়। তাছাড়া এই যুদ্ধে জনসাধারণের মধ্যে জাতীয়তাবাদী প্রতিক্রিয়া নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে দারুণভাবে দেখা যায়।

উপদ্বীপের যুদ্ধ বলতে কী বোঝায়?

উত্তর: ১৮০৮ খ্রিস্টাব্দে আইবেরীয় উপদ্বীপে (পোর্তুগাল ও স্পেন) নেপোলিয়ন বিরোধী যে গণ অভ্যুত্থান দেখা দেয়, তা ‘উপদ্বীপের যুদ্ধ’ নামে পরিচিত। ১৮০৮-১৮১৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এই যুদ্ধে স্পেন ও পোর্তুগাল ব্রিটিশ সহায়তায় নেপোলিয়নকে শোচনীয়ভাবে পরাজিত করে এবং স্পেনের ওপর অধিকার ত্যাগে বাধ্য করে।

মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা বলতে কী বোঝ?

উত্তর: নৌযুদ্ধে অপরাজেয় ইংল্যান্ডকে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে পঙ্গু করে দেওয়ার উদ্দেশ্যে নেপোলিয়ন ঘোষণা করেন যে, ইংল্যান্ডের কোনো জাহাজ ফ্রান্স বা তার মিত্রশক্তি বা নিরপেক্ষ কোনো দেশের বন্দরে প্রবেশ করতে পারবে না। এবং ইউরোপের কোনো রাষ্ট্র ইংল্যান্ডের পণ্য আমদানি করতে পারবে না। এই অর্থনৈতিক অবরোধ ব্যবস্থাই ‘মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা’ বা ‘কন্টিনেন্টলি সিস্টেম’ নামে পরিচিত।

মহাদেশীয় ব্যবস্থাকে ‘দ্বিমুখী অস্ত্র’ বলা হয়েছে-কেন?

উত্তর: মহাদেশীয় ব্যবস্থা ছিল একটি অবাস্তব ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থা দ্বারা নেপোলিয়ন ইংল্যান্ডকে যেমন বিব্রত করেছিলেন তেমনি এই ব্যবস্থার অসারতা তাঁর পতনকে অনিবার্য করে তুলেছিল। যে অস্ত্র নেপোলিয়ন ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করেছিলেন তা ইংল্যান্ডকে যতটা আঘাত করেছিল তার তুলনায় অনেক বেশি আহত করেছিল ফ্রান্সকে। তাই মহাদেশীয় ব্যবস্থাকে ‘দ্বিমুখী অস্ত্র’ বলা হয়।

মহাদেশীয় প্রথা কী?

উত্তর: নৌ যুদ্ধে অপরাজেয় ইংল্যান্ডকে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে পঙ্গু করে দেওয়ার উদ্দেশ্যে নেপোলিয়ন ঘোষণা করেন যে, ইংল্যান্ডের কোনো জাহাজ ফ্রান্স বা তার মিত্রশক্তি বা নিরপেক্ষ কোনো দেশের বন্দরে প্রবেশ করতে পারবে না এবং কোনো রাষ্ট্র ইংল্যান্ডের পণ্য আমদানি করতে পারবে না। এই অর্থনৈতিক অবরোধ ব্যবস্থাই মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা বা ‘কন্টিনেন্টলি সিস্টেম’ নামে পরিচিত।

লিজিয়ন অব অনার’ (Ligion of Hon- our) বলতে কী বোঝ? 

উত্তর: নেপোলিয়নের সামাজিক সংস্কারের একটি উল্লেখযোগ্য দিক হল লিজিয়ন অব অনার প্রবর্তন। বংশগত মর্যাদার পরিবর্তে প্রকৃত গুণীদের মর্যাদা দেওয়ার জন্য ১৮০২ খ্রিস্টাব্দে তিনি রাষ্ট্রীয় সম্মান প্রদানের উদ্যোগ নেন। এই সম্মানকে ‘লিজিয়ন অব অনার’ বলা হয়।

নেপোলিয়ন ইউরোপের কোন্ কোন্ রাষ্ট্র দখল করেন?

উত্তর: একমাত্র ইংল্যান্ড ছাড়া প্রায় সমগ্র ইউরোপ নেপোলিয়নের নিয়ন্ত্রণে এসেছিল। ইটালি, জার্মানি, প্রাশিয়া, হল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, পোর্তুগাল, স্পেন প্রভৃতি ইউরোপীয় রাষ্ট্র নেপোলিয়নের সাম্রাজ্যভুক্ত ছিল।

ওয়ারস ও ফন্টেন্যু ডিক্রিতে কী বলা হয়েছে?

উত্তর ১৮০৭ খ্রিস্টাব্দে ওয়ারস এবং ১৮১০ খ্রিস্টাব্দে ফন্টেন্যু ডিক্রি ঘোষণা করে বলা হয় যে, নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করার অপরাধে যে সব ব্রিটিশ পণ্য বাজেয়াপ্ত করা হবে, তা প্রকাশ্যে আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হবে।

অর্ডারস-ইন-কাউন্সিল (Orders in Council) কী?

উত্তর: নেপোলিয়নের জারি করা বার্লিন ডিক্রির প্রত্যুত্তরে ইংল্যান্ড অডারস-ইন-কাউন্সিল জারি করে। এতে বলা হয়, ইউরোপের কোনো রাষ্ট্র ফ্রান্স অথবা ফ্রান্স অধিকৃত বন্দরে পণ্যসামগ্রী প্রেরণ করলে তা বাজেয়াপ্ত করা হবে। যদি কোনো নিরপেক্ষ দেশের জাহাজ নিতান্তই ফ্রান্স ও তার বন্দরে যেতে চায় তাহলে সেই জাহাজকে ইংল্যান্ডের কোনো বন্দরে প্রথমে এসে উপযুক্ত ফি বা শুল্ক দাখিল করে লাইসেন্স নিলে তবেই সেই জাহাজ ফ্রান্সের বন্দরে যেতে পারবে।

মহাদেশীয় অবরোধের ফলাফল কী হয়েছিল?

উত্তর: মহাদেশীয় অবরোধের গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল ছিল- (১) মহাদেশীয় অবরোধের ফলে ফ্রান্স-সহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ইংল্যান্ডজাত অত্যাবশ্যকীয় দ্রব্যসামগ্রীর জোগানে ঘাটতি, মূল্যবৃদ্ধি ও খাদ্যাভাব দেখা দেয়; (২) নেপোলিয়নের মিত্রদেশগুলি মহাদেশীয় অবরোধ কার্যকর করে বিপদগ্রস্ত – হয়েছিল; (৩) স্পেন, পোর্তুগাল, প্রাশিয়া, রাশিয়া প্রভৃতি দেশ মহাদেশীয় ব্যবস্থা মানতে অস্বীকার করে ও নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে। এর ফলে নেপোলিয়নের পতন ত্বরান্বিত হয়।

একশো দিনের রাজত্ব’ কী?

উত্তর: ইটালি, পোল্যান্ড ও রাইন অঞ্চলকে কেন্দ্র করে মিত্রশক্তি জোটের মধ্যেও প্রবল দ্বন্দ্ব শুরু হয়। উদ্বাস্তু অভিজাতরা ফ্রান্সে ফিরে এসে তাদের বাজেয়াপ্ত সম্পত্তি উদ্ধারের জন্যে গোলযোগ সৃষ্টি করায়, ফরাসি জনগণ রাজশক্তির উপর বিরক্ত হয়ে ওঠে। এই সুযোগে এলবা দ্বীপের নির্বাসন থেকে ফিরে এসে নেপোলিয়ন নিজেকে ফ্রান্সের সম্রাট হিসেবে ঘোষণা করেন। ফরাসি সেনানায়কেরা একে একে নেপোলিয়নের সঙ্গে যোগ দেয়। একটানা তিনি ১০০ দিন (১৮১৫ খ্রিস্টাব্দের ২০ মার্চ থেকে ২৯ জুন ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দ) ফ্রান্সে রাজত্ব করেন। এই সময়কাল ফ্রান্সের ইতিহাসে ‘শতদিবসের রাজত্ব’ নামে পরিচিত।

নেপোলিয়নকে ‘বিপ্লবের ধ্বংসকারী’ বলা হয় কেন?

নেপোলিয়ন ফরাসি বিপ্লবের স্বাধীনতার আদর্শে বিশ্বাস রাখেনি। সাম্য ও মৈত্রীর আদর্শ গ্রহণ করলেও নেপোলিয়নের সামাজিক কার্যকলাপের আড়ালে তা ঢাকা পড়ে যায়। তিনি স্বেচ্ছাচারী একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যা স্বাধীনতা আদর্শকে পদদলিত করেছে। নেপোলিয়ন যে রাজতন্ত্রের পতন ঘটিয়েছিলেন, পরবর্তীকালে সেই রাজতন্ত্রেরই পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। তাই তিনি নিজেই বলেছেন, আমিই বিপ্লবকে ধ্বংস করেছি (I destroyed the Revolution)।

উপদ্বীপের যুদ্ধ কী?

উত্তর: ১৮০৮ খ্রিস্টাব্দে আইবেরীয় উপদ্বীপে (পোর্তুগাল ও স্পেন) নেপোলিয়ন বিরোধী যে গণ অভ্যুত্থান দেখা দেয়, তা উপদ্বীপের যুদ্ধ নামে পরিচিত। ১৮০৮-১৮১৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এই যুদ্ধে স্পেন ও পোর্তুগাল ব্রিটিশ সহায়তায় নেপোলিয়নকে শোচনীয়ভাবে পরাজিত করে এবং স্পেনের ওপর অধিকার ত্যাগে বাধ্য করে।

‘স্পেনীয় ক্ষত’ কী?

উত্তর: স্পেন, পোর্তুগাল ও ইংরেজদের যৌথ বাহিনীর সঙ্গে নেপোলিয়নের যে উপদ্বীপের যুদ্ধ শুরু হয় তা অনেক দিন ধরে চলেছিল (১৮০৮-১৮১৩ খ্রি.)। বহু চেষ্টা করেও নেপোলিয়ন এই যুদ্ধে জয়লাভ করতে পারেন নি। তাঁর বহু সৈন্য, অর্থ এবং সম্মান ধূলিসাৎ হয়। এই পরাজয় তাঁকে আরো বড়ো বিপদের সম্মুখীন করে। তাই নেপোলিয়ন এই যুদ্ধকে ‘স্পেনীয় ক্ষত’ (Spanish ulcer) বলে উল্লেখ করেছেন।

নেপোলিয়ন কেন মস্কো অভিযান করেন?

উত্তর: টিলসিটের সন্ধি (১৮০৭ খ্রি.) অনুযায়ী রাশিয়ার জার প্রথম আলেকজান্ডার মহাদেশীয় ব্যবস্থা মেনে নিয়েছিল। কিন্তু প্রবল অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে রুশজার ১৮১০ খ্রিস্টাব্দে মহাদেশীয় ব্যবস্থা বাতিল করে দেয়। এর ফলে রাশিয়াকে আক্রমণ করা ছাড়া নেপোলিয়নের কাছে আর কোনো পথ খোলা ছিল না। তাই রাশিয়াকে শাস্তি দানের উদ্দেশ্যে নেপোলিয়ন এক বিশাল সৈন্যবাহিনী নিয়ে ১৮১২ খ্রিস্টাব্দে রাশিয়া অভিযান করেন।

পোড়ামাটি নীতি কী?

উত্তর: পোড়ামাটি নীতি হল একটি রক্ষণাত্মক রণকৌশল, নেপোলিয়ন বোনাপার্ট ১৮১২ খ্রিস্টাব্দে রাশিয়া অভিযান করলে রুশ সেনাবাহিনী মুখোমুখি সংঘর্ষ এড়িয়ে পরিকল্পনামাফিক গ্রামে ও শহরের খাদ্যশস্য ভাণ্ডার পুড়িয়ে দেয়, খাদ্য ও জলে বিষ মিশিয়ে দেয় এবং রাস্তা ও সেতুগুলি ধ্বংস করে দেয় যাতে শত্রুপক্ষের অগ্রগতি ব্যাহত হয়। এই রণকৌশলকে পোড়ামাটি নীতি (Scorched earth Policy) বলা হয়।

Leave a Comment