দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান রচনা

দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান রচনা
দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান রচনা

ভূমিকা

মানুষের যুক্তিবোধ ও বিশ্লেষণ ক্ষমতা থেকেই বিজ্ঞানের জয়যাত্রার শুভ সূচনা হয়। কখনও সে একাজে সফল হয়েছে আবার কখনও বা সে কুসংস্কারের অন্ধকারে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেছে। যখন মানুষ এই জয়-পরাজয়ের দ্বান্দ্বিকতায় জয় লাভ করেছে তখনই তার চেতনার আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। যুক্তিবোধের ডানায় ভর করে সে পাড়ি দিয়েছে বিজ্ঞানের আশ্চর্য জগতে। উদ্ভ্রান্ত সেই আদিম যুগে মানুষ যেদিন চকমকি পাথরে পাথরে ঘষা লাগিয়ে জ্বেলে ফেলল সভ্যতার প্রথম আগুন, সেদিন থেকেই বিজ্ঞানের সাফল্যের শুরু। বিজ্ঞান হল বিশেষ জ্ঞান। মানুষ যখন বিশেষ জ্ঞাননির্মিত পর্যবেক্ষণ ও গবেষণার মাধ্যমে বিকল্পের খোঁজ শুরু করল তখনই শুরু হল বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিষ্কার। আর সেখান থেকেই বিজ্ঞান জড়িয়ে গেল আমাদের জীবনের প্রাত্যহিকতায়।

প্রাত্যহিক জীবনে বিজ্ঞান

আধুনিক ব্যস্ততার যুগে সময় সচেতনতা মানুষের জীবনকে ঘিরে রেখেছে। তাই তার সকালের ঘুম ভেঙে দিন শুরু হয় বিজ্ঞানের অত্যাশ্চর্য দান ঘড়ির অ্যালার্মে। এরপর চায়ের পেয়ালায় চুমুক দিতে দিতে তার হাতে এসে পৌঁছোয় সংবাদপত্র। বিশ্বের বিভিন্ন কোণার খবর এক মুহূর্তে হাতের মুঠোয়। এরপর রান্না করার জন্য বিজ্ঞান দিয়েছে গ্যাস ওভেন, মাইক্রোওভেন থেকে শুরু করে আরও বিভিন্ন রান্নার সরঞ্জাম। এরপর আধুনিক মানুষ কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য যেই রাস্তায় বেরোয়, তার জন্য অপেক্ষা করে আধুনিক সব যানবাহন। ট্রেন, ট্যাক্সি, বাস, পাতালরেলের যেমন ব্যবস্থা রয়েছে, তেমনই এখন বিজ্ঞানের অভিনব আবিষ্কার বিভিন্ন পরিবহণকেন্দ্রিক মোবাইল অ্যাপ। মানুষ তার সুদূরকে নিকট করার জন্য আগেই উদ্ভাবন করেছিল মোবাইল ফোন, টেলিফোন। এখন, সেই মোবাইল ফোনের একটি মাত্র ক্লিকেই সে তার পরিবহণের মাধ্যমটি বেছে নিতে পারে। মুহূর্তেই সে পৌঁছে যায় তার গন্তব্যে। সেখানেও মানুষের বিভিন্ন কাজের ক্ষেত্রে রয়েছে প্রযুক্তির বিভিন্ন সব আবিষ্কার। তথ্য ও প্রযুক্তির নানা গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার মানুষকে অনেক সহায়তা করেছে। মানুষ আবিষ্কার করেছে বিদ্যুৎ, সেই বিদ্যুতের আলো, হাওয়া মানুষকে দিয়েছে স্বস্তির আশ্বাস। অজানাকে দেখার, অচেনাকে চেনার জন্য বিজ্ঞানের অভাবনীয় আবিষ্কার টেলিভিশন। বিজ্ঞানের আরও অগ্রগতি তাকে এনে দিয়েছে ইনটারনেটের যোগাযোগ মাধ্যম, যার সাহায্যে পৃথিবীর যে-কোনো প্রান্তে বসে মানুষ মুহূর্তের মধ্যে পেয়ে যেতে পারে পৃথিবীর যে-কোনো প্রান্তের খবর। কোভিড পরিস্থিতিতে যার সুফল পেয়েছে মানুষ। এভাবেই বিজ্ঞানের বলে বলীয়ান মানুষ তার দৈনন্দিন জীবনকে করে তুলেছে সুন্দর ও সুচারু। 

প্রাত্যহিক জীবনে বিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা

দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান যেন শ্বাসবায়ুর মতোই আমাদের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে মৌলিক চাহিদাগুলি থেকে বিনোদন সর্বত্র বিজ্ঞান হয়ে উঠেছে অপরিহার্য। কৃষিক্ষেত্রে বিজ্ঞান যেমন সবুজ বিপ্লব ঘটিয়েছে, তেমনই রাজস্থানের মরুভূমিতে সম্ভব হয়েছে কৃষিকাজ। চিকিৎসাশাস্ত্রের নব নব পদ্ধতি উদ্ভাবনে বিজ্ঞান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। স্বল্প সময়েই আবিষ্কৃত হয়েছে মারণব্যধির ভ্যাকসিন। ফলে রোখা গেছে মহামারি।

বিজ্ঞানের অপপ্রয়োগ

বিজ্ঞানের সাফল্যে যেমন একদিকে মানবজীবন উন্নততর হয়েছে, অন্যদিকে তেমনই বিজ্ঞানের সংহারিণী রূপ সভ্যতার গরিমাকে করেছে ম্লান। বিজ্ঞান তার ক্ষমতা বিস্তারে গ্রাস করেছে প্রকৃতিকে। বিজ্ঞানের অগ্রগতির লক্ষে একদিকে যেমন সবুজ ধ্বংস করে হয়েছে নগরায়ণ তেমনই বৈজ্ঞানিক পরীক্ষানিরীক্ষার কারণে যত্রতত্র ডিনামাইট বিস্ফোরণে প্রকৃতির স্বাভাবিকতা বিপর্যস্ত হয়েছে। বিজ্ঞানের ক্ষমতার আস্ফালনে আমরা দেখেছি পারমাণবিক বোমা কীভাবে মুহূর্তের মধ্যে সভ্যতাকে ভস্মীভূত করে দিতে পারে। বিভিন্ন ক্ষেপণাস্ত্র ও পারমাণবিক শক্তির বিধ্বংসী ফলাফল হল ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ধ্বংস কিংবা ইরাকের যুদ্ধ। বিজ্ঞান যেমন সভ্যতাকে করেছে সমৃদ্ধ, তেমনই বিজ্ঞানের অপপ্রয়োগে আজ আধুনিক মানুষ দিশাহারা।

উপসংহার

সমস্ত কিছুরই ভালোমন্দ দুই-ই থাকে। আমাদের উচিত ভালোকে গ্রহণ করা। বিজ্ঞান যেমন আশীর্বাদস্বরূপ সভ্যতাকে উন্নত করে তুলেছে, তেমনই মানুষ সেই বিজ্ঞানকে ব্যবহার করেছে নিজের ক্ষমতার আস্ফালনে, যুদ্ধের বর্বরতায়। কিন্তু আধুনিক সভ্যতার এই চরমতম উন্নতির যুগে সেই ধ্বংসাত্মক লীলায় না মেতে মানুষ যদি বিজ্ঞানকে সর্বাত্মকভাবে গঠনমূলক দিকে প্রয়োগ করতে পারে, তবেই বিজ্ঞানের সফলতা সম্পূর্ণ হবে।

Leave a Comment