দেশ ভ্রমণ শিক্ষার অঙ্গ রচনা

দেশ ভ্রমণ শিক্ষার অঙ্গ রচনা
দেশ ভ্রমণ শিক্ষার অঙ্গ রচনা
“আমার মতে শিক্ষার প্রণালী হচ্ছে বৈরাগীর রাস্তায়। ছাত্রদের নিয়ে বিবাগী হয়ে বেরিয়ে পড়তে হয়। চলতে চলতে নিয়ত নব নব বিস্ময়ে অজানার ভিতর দিয়ে জেনে চলাই হচ্ছে প্রাণবান শিক্ষা। প্রাণের ছন্দের সঙ্গে এই শিক্ষাপ্রবাহের তাল মেলে।” -রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

ভূমিকা

অজানাকে জানা, অদেখাকে দেখা ও অচেনাকে চেনার জন্য মুক্তিপাগল মন ছুটে চলে দেশদেশান্তরে। এগিয়ে চলাই জীবনের ধর্ম। “হেথা নয়, হেথা নয়, অন্য কোথা, অন্য কোনো খানে।” উপনিষদেও পাওয়া যায়- ‘চরৈবেতি, চরৈবেতি’। আর চলতে চলতে, দেখতে দেখতে আমরা নতুন নতুন শিক্ষা গ্রহণ করি। শিক্ষার কোনো শেষ নেই আর তা গ্রহণের জন্য চার দেয়ালের মধ্যে আবদ্ধ থাকার আবশ্যকতাও নেই। ঠাকুর রামকৃয়দেব বলেছেন- “যাবৎ বাঁচি, তাবৎ শিখি।”

ভ্রমণ

‘ভ্রমণ’ শব্দটি কানে এলেই মানুষের মনে শিহরণ জাগে, মন যেন কোথায় হারিয়ে যায়। ভ্রমণপিপাসু মানুষের মূলমন্ত্র- “থাকব নাকো বদ্ধ ঘরে/দেখব এবার জগৎটাকে।” বিশ্বপ্রকৃতির রহস্যময়ী রূপদর্শনের জন্য যুগ যুগ ধরে মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাড়ি দেয় দুর্গম পর্বত, নিবিড় অরণ্য, ধু-ধু মরুপ্রান্তর।

শিক্ষা

শিক্ষার সংজ্ঞা হিসেবে বিবেকানন্দের একটি উক্তি বহুলপ্রচলিত – “মানুষের অন্তর্নিহিত পূর্ণতার বিকাশসাধনের নাম শিক্ষা।” শিক্ষার কার্যত লক্ষ্য হল জীবন ও জগৎকে ভালোবাসা ও শ্রদ্ধাসহকারে চিনতে পারা। তা কেবল পরীক্ষায় ভালো ফল করা, মুখস্থ করা বা পরীক্ষায় সবসময় প্রথম হওয়া নয়। শিক্ষার মূল লক্ষ্য প্রকৃত বড়ো মানুষ হওয়া। শিক্ষা মানুষকে উদার হতে শেখায়। মানুষ সারাজীবনব্যাপী বিভিন্ন ইন্দ্রিয় অভিজ্ঞতার মাধ্যমে শিক্ষাগ্রহণ করে ঋদ্ধ হয়।

ভ্রমণ ও শিক্ষা

ভ্রমণের সঙ্গে শিক্ষার যোগ অত্যন্ত নিবিড়। পুথিগত জ্ঞান আমাদের মনে পূর্ণতা দেয় না। পূর্ণতার জন্য প্রয়োজন দর্শন ও যথার্থ উপলব্ধি। তাই পুথিগত বিদ্যার সঙ্গে বাস্তবের যোগসূত্র ঘটায় ভ্রমণ। যে ব্যক্তি কোনোদিন নদী দেখেনি, পুথিগত বিদ্যা যতই থাকুক, নদীর দর্শন ছাড়া নদী সম্পর্কে ধারণা তার পূর্ণতা পাবে না। ভ্রমণের ফলে বিভিন্ন স্থানের মানুষের ভাষা, জীবনযাত্রা, রীতিনীতি, আচার-আচরণ ইত্যাদি প্রত্যক্ষ করা যায়। ‘ইতিহাস নিজেকে পুনরাবৃত্তি করে’-এই প্রবাদটির সত্যতা আমরা ইতিহাসপ্রসিদ্ধ স্থানে ভ্রমণ করতে গিয়ে উপলব্ধি করতে পারি। বই-এ পড়া অজন্তা-ইলোরার কালজয়ী ভাস্কর্যের শিল্পবৈভব একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শনেই উপলব্ধি করা যায়। নালন্দা-তক্ষশিলার ধ্বংসস্তূপে গিয়ে দাঁড়ালে বোঝা যায় প্রাচীন শিক্ষাব্যবস্থার মাহাত্ম্য। দেশভ্রমণ আমাদের জীবনকে করে তোলে অর্থময় ও পরিপূর্ণ। তাই দেশভ্রমণ শিক্ষার একটি অপরিহার্য অঙ্গ।

উপসংহার

শিক্ষা একটি জাতির উন্নয়নের পরিচায়ক। শিক্ষা শুধু কতকগুলি পুথিগত জ্ঞানের ভাণ্ডার নয়। শিক্ষা মনুষ্যত্বের পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটায়। ভ্রমণের মাধ্যমে শিক্ষালব্ধ জ্ঞান সুদৃঢ় হয়, মনের প্রসার ও চিত্তের প্রশান্তি ঘটে। এক সার্বিক শিক্ষার আলোয় আলোকিত হয়ে ওঠে শিক্ষার্থীর জীবন।

Leave a Comment